• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
বিশের আগে শুদ্ধ হতে চায় আওয়ামী লীগ

সংগৃহীত ছবি

রাজনীতি

বিশের আগে শুদ্ধ হতে চায় আওয়ামী লীগ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ২৯ অক্টোবর ২০১৯

২০২০ সালের আগে যথাসম্ভব শুদ্ধ রাজনৈতিক দল চায় আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গড়া এ দলের নেতৃত্বে সরকার আগামী বছর তার জন্মশত বছর ‘মুজিববর্ষ’ ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে রাষ্ট্রীয় বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের পদে বিতর্কিতদের না রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নতুন বছর শুরুর আগেই দলকে নতুন করে সাজিয়ে বিতর্কমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যেই শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে দলে সাংগঠনিক শুদ্ধি অভিযান চলছে।

ক্ষমতাসীন দলের বিতর্কিত, অভিযুক্ত ও দুর্নীতিতে জড়িত নেতাদের শুদ্ধি অভিযান এবং মূল দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর আসন্ন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ছেঁটে ফেলা হবে। আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনগুলোর পর বিতর্কিত ও নিষ্ক্রিয়দের মন্ত্রিসভা থেকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দুভাবেই কঠোর থাকার বার্তা দিয়েছেন। ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় মূল দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালু রেখে এবং এর মধ্যে তৃণমূলের কমিটি নির্বাচন করে নতুন কমিটি নিয়ে নতুন বছরে পা রাখার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। আগামী বছর শুরুর আগে মন্ত্রিসভায়ও পরিবর্তন আসতে পারে। সরকারি দল ও সরকারের নীতিনির্ধারক সূত্র বাংলাদেশের খবরকে এসব তথ্য জানায়।

সূত্র বলছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া ক্যাসিনো, জুয়া, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে চলমান দলীয় অভিযানে শিগগিরই আরো ‘চমক’ আসবে। ন্যাম সম্মেলনে অংশ নিতে আজারবাইজানে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার পর অভিযান আরো কঠোর হবে, দলের নীতিনির্ধারকরা আগে থেকেই এমন ধারণা করেন। দলের নানা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্যসহ দলের টিকিটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিকে অভিযান আরো কঠোরভাবে মোড় নেবে। প্রধানমন্ত্রীও আজারবাইজান যাওয়ার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান এবং দল ও সরকারে অভিযুক্তদের ঠাঁই না হওয়ার ইঙ্গিত দেন। প্রধানমন্ত্রী ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে শুদ্ধি

 

অভিযানের অংশ হিসেবে সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি দলের টিকিটে নির্বাচিত কয়েক সংসদ সদস্যের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা

দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তিনি আজারবাইজানে যাওয়ার আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দেন, তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি থেকেও বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার জন্য চিঠি দিতে। দলীয় প্রধানের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার থেকে সারা দেশের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে দলকে বিতর্কমুক্ত করার কঠোর নির্দেশনাসংবলিত চিঠিও পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাত্র দশ দিন আগে তৃণমূলের সব কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্দেশ আছে দলের। নির্দিষ্ট সময়ে তৃণমূলের সম্মেলন করতে কেন্দ্রীয় আটটি টিম আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মাঠে থাকছে।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে থাকা নানা কারণে অভিযুক্ত কয়েক নেতাও শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে পদ থেকে বাদ পড়ার আতঙ্কে আছেন। জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তাদের বাদ পড়ার বিষয়ে দলে আলোচনা আছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আগামীতে পরিবর্তন আসছে, এমন আভাস ইতোমধ্যে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেওয়া হয়েছে। সভাপতি ছাড়া দলের অন্যান্য পদে পরিবর্তন আসতে পারে। সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি কেউ কেউ গ্রেপ্তার আতঙ্কেও আছেন। টানা প্রায় ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত, এমন কয়েকজনকেও গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে দলে গুঞ্জন আছে। নেতাদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বার্তা দেন, প্রচলিত আইনে সবাইকে সমান দেখতে হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘অনেকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য দল বিব্রত হচ্ছে। তাদের ব্যাপারে দলীয় প্রধান খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। দলের কোনো স্তরেই বিতর্কিতরা থাকতে পারবেন না। বিতর্কিত কেউ এসে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।’

কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সূত্র জানায়, মূল দলের আগামী কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ‘শুদ্ধি অভিযানের’ পক্ষে আওয়ামী লীগ। দলের সঙ্গে যুক্ত ও দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি করছেন যারা, তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে দুভাবে অভিযান চলতে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে বিতর্কিত নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে দলকে ‘বিতর্কমুক্ত’ করা যাবে।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় এক বছরের মধ্যে যথাযথ দক্ষতা প্রমাণ করতে না পারা ও ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকায় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়তে পারেন কয়েকজন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যাত্রার শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সবার প্রতি মাসের কার্যক্রম ও দক্ষতা মূল্যায়ন করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও মন্ত্রিসভায় থাকায় দলে সময় দিতে না পারায়, কেউ কেউ হয় দলীয় পদ ও না হয় মন্ত্রিত্ব হারাতে পারেন। তাদের পরিবর্তে সাবেক, অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত কয়েকজন মন্ত্রী যোগ হতে পারেন। কয়েক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে। অবৈধ ক্যাসিনো (জুয়ার আসর) বাণিজ্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের, বিশেষ করে যুবলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের ‘প্রশ্রয়দাতা’ হিসেবে তিনজন মন্ত্রীর নাম আলোচনায় এসেছে। তাদের কপাল পুড়তে পারে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলীয় পদ থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ ঠাঁই পেতে পারেন মন্ত্রিসভায়। সরকার ও দলকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সমান্তরালভাবে গতিতে এগিয়ে নেওয়া বা আরো গতিশীল মন্ত্রিসভা গঠনের লক্ষ্যে এবার বড় ধরনের রদবদল হতে পারে। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেও এর আগে বা পরে দলের জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কেউ কেউ দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব পেতে পারেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads