• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

রাজনীতি

ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের রাজনীতি

নিজেরাই নিজেদের উত্থানে বাধা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০২০

ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের পদচারণা বেশ পুরনো। সে দেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়ছে, যা খুবই আনন্দের। কিন্তু সেখানে বসবাসরত এ দেশের কিছু বাসিন্দা খোদ নিজ দেশের মানুষের শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এ নিয়ে খুবই বিব্রত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটেনের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দারাও। 

শত্রুতার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে পরশ্রীকাতরতা আর ঈর্ষা। এর জেরে সেখানকার বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কেবল বিভাজনই বাড়ছে না বরং ব্রিটিশ রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের উত্থানের প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠছে তা। গত চার দশকে ব্রিটেনের রাজনীতিতে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের’ অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। 

২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথমবারের মতো টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র নির্বাচিত হন বাংলাদেশি লুৎফুর রহমান। সিলেটে জন্ম নেওয়া পেশায় আইনজীবী লুৎফুর ব্রিটেনের কোনো বারার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম নির্বাহী মেয়র। লেবার পার্টির নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত টাওয়ার হ্যামলেটসে লুৎফুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ঐ নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হেলাল আব্বাস। তিনি পেয়েছিলেন মোট প্রদত্ত ভোটের মাত্র ২৪ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৫৪টি। ২০১৪ সালের বৈরী পরিস্থিতিতেও লুৎফুর পুনর্নির্বাচিত হন।

লুৎফুরের বিরুদ্ধে একাধিক ব্রিটিশ বাংলাদেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারান। এরপরও তার জয়ী হওয়া আটকাতে না পেরে আনা হয় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। আর সে মামলা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী আজমল হোসেন। রায়ে মেয়র লুৎফুর পদচ্যুত হন। সে সময় আদালত তাকে পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞা দেয়। মামলার খরচ জোগাতে লুৎফুর রহমানের লন্ডনের বসতবাড়িটি নিলামে বিক্রি হয়। লুৎফুর পরে দীর্ঘ তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হন। এরপর আরো দুটি নির্বাচনে এ বারায় মেয়র পদে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বংশেদ্ভূত প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু তারা কেউই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে আসতে পারেননি।

টাওয়ার হ্যামলেটসের আসন্ন নির্বাচনে লুৎফুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে। তার হাত ধরে অন্তত ৩০ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ কোনো ধরনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এদের অনেককেই তিনি ডেপুটি মেয়রসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন। কিন্তু তার দুঃসময়ে লেবার পার্টির এমপির মনোনয়ন পাওয়া অহিদ আহমদ ছাড়া কেউই পাশে থাকেননি।

আরেক বাঙালি বিশ্বনাথের ভুরকি গ্রামের সন্তান রোশনারা আলী ২০১০ সালে প্রথমবার লেবার পার্টির মনোনয়নে বেথনাল গ্রিন ও বো আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ব্রিটেনের প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি আইনপ্রণেতা। গত তিনটি নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। প্রথম দুটি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও পরে ভোটের মাঠে তার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ বাংলাদেশি একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হন।

বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ২০১৫ সালের নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন  আসন থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তার আসনটিতে খুব সামান্য সংখ্যক বাংলাদেশি ভোটারের বসবাস। বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বোনের মেয়ে হওয়ার কারণে ২০১৫ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনে ব্রিটেনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বিরোধিতা ও অপরাজনীতির শিকার হন তিনি। সে দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলবল নিয়ে পূর্ব লন্ডন থেকে গিয়ে টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান তারা।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক ড. রেনু লুৎফা বলেন, বাংলাদেশিরা জাতিগতভাবে ভীষণ পরশ্রীকাতর। অন্যের সুখ দেখতে পারার যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারেনি। কারণ অন্যের সুখ দেখে সুখ পাবার প্রথম সিঁড়ি হলো নিজে সুখী হওয়া। আশি ও নব্বই দশকের দুটি সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ও বো আসনে এমপি পদে লেবার পার্টির মনোনয়নের জন্য শর্টলিস্টেড ছিলেন চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী। তারা হলেন- প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম, কাউন্সিলর রাজন উদ্দীন জালাল, পলা মঞ্জিলা উদ্দিন ও কুমার মুর্শিদ। দুবারই শর্টলিলিস্ট থেকে বাদ পড়েন জাহাঙ্গীর ও কাউন্সিলর রাজন। 

ব্রিটেনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা রাজন বলেন, আমাদের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে মীরজাফররা আছেন। আশির দশকেই আমার ব্রিটেনে এমপি হবার কথা। তাদের জন্যই পারিনি। লুৎফুরকে ধ্বংস করতেও বাংলাদেশিদের কাজে লাগিয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। বর্তমানে পপলার ও লাইমহাউসের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি আপসানা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধেও শুরু থেকেই বাংলাদেশিদের একটি অংশ সক্রিয়। ব্রিটেনের রাজনীতিতে বাংলাদেশিরাই বাংলাদেশিদের উত্থানে সব সময় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ বলেন, ২০১০ সালে লেবার পার্টি আমাকে এমপির টিকেট দিয়েছিল। আমি লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছিলাম। লুৎফুরের সঙ্গে হওয়া অন্যায্য আচরণের প্রতিবাদে লেবার পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads