স্পেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক গোলরক্ষক ইগর আকিনফেভ! মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রোববার ইগরই রুশ জনতার মহানায়কে পরিনত হয়েছেন। টাইব্রেকারে স্পেনের কোকে আর ইয়াগো আসপাসের শট বাঁচিয়ে বত্রিশ বছরের এই রুশ ফুটবলার মনে করালেন রাশিয়ার কিংবদন্তি ইয়াশিনকেই। ইয়াশিন তার মতোই পেনাল্টি বাঁচানোয় অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে এবং সামনে থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ক্লাব ও দেশের প্রতি তার বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবেই আকিনিফেভকে এবার জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়েছে। সেই ষোলো বছর বয়স থেকে তিনি খেলছেন সিএসকে মস্কোয়। এবং তার নিজের বয়স যখন মাত্র কুড়ি বছর, তখনই মস্কোর ক্লাবটি রুশ ফুটবলে ত্রিমুকুট জিতে ফেলে!
আজ পর্যন্ত তিনি ক্লাব বদলাননি। বলা হয় তোত্তিও রিয়াল মাদ্রিদে যেতে পারতেন, কিন্তু ইগর কোনোদিন মস্কো ছেড়ে যাবেন না। এতটাই তার দেশপ্রেম। ইউরোপের অন্য অনেক ক্লাবের মতো এমনকি তিনি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
স্বভাবতই রুশ ফুটবল কর্তাদের কাছে তিনি খুবই প্রিয়। সেই ২০০৪ সাল থেকে টানা ১৪ বছর তিনি জাতীয় দলের হয়ে একশোটির বেশি ম্যাচ খেলেছেন। এমনিতেই তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসটা বেশি রুশ ফুটবল মহলে। রোববার স্পেনের বিরুদ্ধে যেভাবে তিনি আসপাসের শেষ শটটি আটকেছেন তাতে ফুটবল পণ্ডিতেরা মুগ্ধ। ডান দিকে শরীর ছুঁড়ে দিয়েও আকিনফেভ লক্ষ্য করেন বল তার পায়ের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। এবং সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ‘রিফ্লেক্স’ দিয়ে তিনি সেই শট তার পা দিয়েই আটকে দেন। বুঝিয়ে দেন কেন তিনিই রাশিয়ার অধিনায়ক। কেন তার ফুটবল জীবনে সিএসকে মস্কো ছয়বার রুশ লিগ আর রাশিয়ান কাপ জিতেছে। সঙ্গে একবার উয়েফা কাপও। স্বভাতই রোববারের পর থেকে তিনি জাতীয় নায়ক।
এবং অকুণ্ঠ ভালবাসায় উড়তে উড়তে তার আবেগাপ্লুত প্রতিক্রিয়া, ‘এই বিশ্বকাপে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। শুধু আমার নিজের দেশের ভক্তদের জন্য নয়, অন্য দেশের ফুটবলপ্রেমীরাও বুঝতে পারছেন রুশরা সত্যিই ফুটবলটা খেলতে জানে। আর ফুটবলটা খেলতেও চায়।’ ইগরের খেলা দেখে মুগ্ধ আর এক কিংবদন্তি গোলরক্ষক অলিভার কানও। তার প্রতিক্রিয়া, ‘অনেক বছর আগে আমিই কিন্তু বলেছিলাম, এই ছেলেটা ফুটবলজীবন শেষ করবে বিশ্বের এক নম্বর গোলরক্ষক হিসেবেই।’
আবেগে ভেসেছেন মারিয়া শারাপোভাও। রুশ টেনিস সুন্দরী তার মাতৃভাষায় টুইট করে লিখেছেন, ‘হুররে। দারুণ জিতেছ।’