অবশেষে পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলো সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ। এ দ্বীপে এখনো কিছু সামুদ্রিক প্রবাল জীবিত আছে। এসব প্রবাল সংরক্ষণে পর্যটক যাতায়াতে সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ এ তথ্য জানান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারেভজ চৌধুরী জানান, সম্প্রতি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্য সুরক্ষা ও ইকোট্যুরিজম উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা আসে। এই নির্দেশনা প্রেক্ষিতে সেন্টমার্টিন নিয়ে কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন এবং স্থাপনা নির্মাণ বন্ধসহ দ্বীপ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। যার কারণে ছেঁড়াদ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ছেঁড়াদ্বীপগামি সকল নৌ যান এবং সড়কপথে ইজিবাইক। ফলে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত পর্যটকদের ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষেধ।
পারেভজ চৌধুরী আরো বলেন, সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্য রয়েছে। বিভিন্ন ভৌগোলিক কারণে এ দ্বীপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে এ দ্বীপটি অতিঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার চায়, খুব দ্রুত সেন্টমাটিনকে ভালো ম্যানেজমেন্ট করতে।
সেন্টমার্টিন স্পিড বোট ও লাইফ বোট মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম জানান, গত সোমবার থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ছেঁড়াদ্বীপে যাওয়ার সকল নৌযান বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল হতে কোনো ধরনের লাইফ বোট, স্পিড বোট ও ট্রলার চলাচল করছে না। আগে প্রতিদিন ৩০টি স্পিড বোট, লাইফ বোট ও ট্রলার পর্যটকদের নিয়ে ছেঁড়াদ্বীপে ভ্রমণে যেত প্রায় ৩ শতাধিক পর্যটক। এখন ছেঁড়াদ্বীপে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখায় কোনো পর্যটকই ভ্রমণে যেতে পারছেন না।
খোরশেদ আলম আরো জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক আসে ৪ থেকে ৫ মাস পর্যন্ত। এসময় পর্যটকদের ছেঁড়াদ্বীপে ভ্রমণে নিয়ে সংসার চালায় কয়েকশ স্পিড বোট, লাইফ বোট ও ট্রলারচালক ও শ্রমিকরা। কিন্তু এখন ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় এসব মানুষের জীবিকা বন্ধ হয়ে গেল। এখন সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে এসব মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করার জন্য। না হয় এসব মানুষ কষ্টে পড়ে যাবে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপ অংশে পর্যটকদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিনে ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা না মেনে দীর্ঘদিন ধরে ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণে যায় পর্যটকরা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনো তদারকিও ছিল স্থানীয় প্রশাসনের। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুয়ায়ী, সেন্টমার্টিনের সৈকতে কোনো ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চালানো যাবে না। রাতে সেখানে আলো বা আগুন জ্বালানো যাবে না। রাতের বেলা কোলাহল সৃষ্টি বা উচ্চস্বৈরে গানবাজনার আয়োজন করা যাবে না।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে ১৩টি সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়। এ লক্ষ্যে গত মাসের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দ্বীপ রক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। তারই সূত্র ধরে, সেন্টমাটিনে সরেজমিনে সুপারিশ বাস্তবায়নে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া ইকোট্যুরিজমসহ দ্বীপকে ঘিরে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এই দ্বীপের অবস্থান।