• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

জনপ্রশাসনে জবাবদিহিতা

উন্নয়নের গতিবৃদ্ধিতে আবশ্যক

  • প্রকাশিত ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন কার্যকর সংসদ এবং দক্ষ প্রশাসন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধিরা সংসদে আইন প্রণয়ন করেন। জনপ্রশাসকরা মাঠপর্যায়ে সরকারি নীতি বাস্তবায়ন করেন। আবার সংসদ সদস্যরা কমিটির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। একটি দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটাই প্রচলিত পদ্ধতি। আমরা জানি, জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রশাসকদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা ও তাদের দ্বারা পরিচালিত কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সরকারের নীতি ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে সফল হতে পারে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার। সরকারের কাজ মন্ত্রিপরিষদসহ অন্যান্যের সমন্বয়ে সুসংহত, বাস্তবসম্মত ও ভবিষ্যৎমুখী নীতি প্রণয়ন করা। আর এই নীতি বাস্তবায়নের দায় ও দায়িত্ব জনপ্রশাসনের। যারা নীতি প্রণয়ন করবেন আর যারা নীতি বাস্তবায়ন করবেন, তারাই যদি দুর্নীতি আর অসততার দুষ্টে দূষিত হয়ে পড়েন-তাহলে আর আশার কোনো জায়গা থাকে না। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নীতির বদলে দুর্নীতি আর সততার বদলে অসততা ও অস্বচ্ছতার ধারাবাহিকতায় গোটা প্রশাসনযন্ত্রে পচন ধরেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সুসংহত বিকাশে বহুল সমালোচিত হলেও জনপ্রশাসন নিয়ে ইতোপূর্বে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তার ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। সরকার উন্নতির গতি বাড়াতে চাইলেও দেখা গেছে প্রশাসনিক গতিহীনতা ও দুষ্ট-দুর্বলতার কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি।

বর্তমান পরিবর্তিত বিশ্ব আঙ্গিকের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার ওপরই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চতুর্থ মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার জনপ্রশাসনে কর্মরতদের দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে সামনে এসেছে জনপ্রতিনিধি-রাজনীতিকদের দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার বিষয়টিও। কেননা জনপ্রশাসন চলে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনায়। যেহেতু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি-রাজনীতিক আর বাস্তবায়ন ও প্রয়োগের পর্যায়ে জনপ্রশাসন মিলেই সচল রাখেন পুরো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাটি। সেহেতু দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, অসততার সবরকম দায়-দায়িত্ব সামগ্রিকভাবে তাদের ওপরই বর্তায়। আশার খবরটি হলো, জনপ্রশাসনে দুর্নীতি হলেই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক আগ্রহ ও কঠোর অবস্থান জনমনে নতুন প্রশান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জোরালোভাবেই বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ফলে দুর্নীতির কোনো প্রয়োজনই নেই। আসলেও তা-ই। গত তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার সকল পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের যে হারে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়িয়েছে, এরপরও দুর্নীতির প্রশ্ন আসাটাই বরং অনুচিত। কিন্তু দুর্নীতি হলো একধরনের প্রবণতা। এই প্রবণতা রোধ করার ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ, জবাবদিহিতা, অপরাধের শাস্তি কার্যকর করার পাশাপাশি নীতিবান, সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের পুরস্কার প্রবর্তন করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে রূপায়ণে সরকারের ‘রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে অতি আবশ্যিক একটি সৃজনশীল, দক্ষ, সৎ ও নিষ্ঠাবান জনপ্রশাসন। আর তা করতে হলে জনপ্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো

বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads