• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

ছবি : সংগৃহীত

স্বাস্থ্য

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস

  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০১৮

অনেকের মনেই একটা ভুল ধারণা আছে, বেশি চিনি বা মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস রোগ হয়। কথাটি ঠিক নয়। তবে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দিলে মিষ্টি, চিনি বা শর্করাজাতীয় খাবার নিষিদ্ধ। তাতে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। যাদের পরিবারে ডায়াবেটিস রোগ আছে বা ছিল এমন হিস্ট্রি আছে, বিশেষ করে বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা, দাদা-দাদি সম্পর্কের, তাদের অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। কারণ এটি বলতে গেলে একটি বংশগত রোগ।

তবে কিছু কারণ শনাক্ত করা হয়েছে, যে কারণে গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস হতে পারে :

- যদি আপনার বয়স ৩৫ বছরের বেশি হয়ে থাকে।

- গর্ভধারণের আগে থেকে যদি আপনার ওজন বেশি হয়ে থাকে।

- আগেও গর্ভকালীন সময়ে যদি আপনার ডায়াবেটিস হয়ে থাকে (যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার গর্ভধারণ করেছেন)।

- আপনি এর আগে যদি সাড়ে ৪ কেজি ওজনের বাচ্চা প্রসব করে থাকেন।

- আপনার বাবা, মা বা চাচা কারো যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।

- শরীর যদি গ্লুকোজ ইনটলারেন্ট থাকে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস শুধু ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে খুব শক্তভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেননা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রে বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করে। এজন্য প্রথমেই রোগীকে একটি খাদ্যতালিকা দেওয়া হয়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের এমন খাবার দিতে হবে, যা তাদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। মাকে নিয়মমাফিক খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। এ সময় অল্প অল্প করে বার বার খেতে দিতে হবে।

এমন খাদ্য বাছাই করতে হবে, যাতে চর্বির পরিমাণ কম ও বেশি আঁশযুক্ত। শর্করার উত্তম উৎস যেমন- ভাত, দানাদার শস্য, ফলমূল ইত্যাদি গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার (যেমন দুধ, বাদাম), লালশাক, পালংশাক, কচুরশাক, কচুরলতি, মলা-ঢেলা মাছসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার প্রদান করতে হবে।

যদি হাঁটতে কোনো নিষেধ না থাকে তবে রোগীকে হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেকে মনে করেন, গর্ভকালীন হাঁটাহাঁটি করা যায় না। কিন্তু যদি কোনো জটিলতা না থাকে, তবে আধাঘণ্টা হাঁটতে পারবেন। এর মাধ্যমে শরীর গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

আর তাতেও যদি না হয়, তখন তাকে ইনসুলিন দেওয়া হয়। এ সময় মুখে খাওয়ার কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। যাদের গর্ভসঞ্চারের আগে থেকেই ডায়াবেটিস আছে এবং মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করেন। তাদের ক্ষেত্রে, গর্ভসঞ্চার হয়েছে বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই মুখে খাওয়ার ওষুধ বন্ধ করে ইনসুলিন ব্যবহার শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়মিত একজন গাইনোকোলজিস্টের ফলোআপে থাকতে হবে। আর গাইনোকোলজিস্ট যদি একা না পারেন, তবে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বা ডায়াবেটোলজিস্টের কাছে রোগীকে যেতে হবে।

জন্মের পরপরই এবং প্রতি ১ ঘণ্টা পরপর বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। কারণ বুকের দুধ বাচ্চার রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে গ্লুকোজ কম থাকার দরুন যেসব সমস্যা হয় তা থেকে বাঁচায়। এ ছাড়া জন্মের পরবর্তী সময়ে স্তন্যদান করলে মায়ের শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস হয়ে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে গর্ভধারণপূর্ব আলাপ করে নিতে হবে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ডায়াবেটিস আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পরে গর্ভধারণ করতে হবে। যদি ডায়াবেটিসের পরিমাণ ৬-এর নিচে হয় তবে বাচ্চা গ্রহণ করতে পারবেন। যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তবে শিশু অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে শিশু ও মা উভয়ের ক্ষতি হবে। শিশু স্বাভাবিকের থেকে একটু বড় হয়ে জন্ম নিতে পারে। জন্মের পর শিশুর শরীরে শর্করার পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাই এসব সমস্যা রোধে প্রথম থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কীভাবে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা যায়

একবার গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে পরবর্তীকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে যায়। যেসব মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকে, তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পরবর্তী ১০-২০ বছরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তী গর্ভধারণে আবারো গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে। চলুন, ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়াতে করণীয়গুলো জেনে নিই-

- স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা

- সঠিক খাবার সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে খাওয়া

- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

- স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা বজায় রাখা

- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দুই বছর পরপর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরীক্ষা করা।

যে কোনো অসুখ মারাত্মক আকার ধারণ করার আগে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই সেসব উপসর্গকে গুরুত্ব সহকারে দেখি না। ফলে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো যায় না। অথচ সামান্য একটু সচেতনতাই পারে যে কোনো অসুখ প্রকট আকার ধারণ করার আগে আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে। একটু সচেতনতা ও সাবধানতা অবলম্বন করে চললে গর্ভকালীন জটিলতা থেকে সহজেই নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। পাশাপাশি অনাগত সন্তানের জীবনও হয়ে উঠবে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর।

 

পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা 

লেখক : পুষ্টি কানসালট্যান্ট, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads