• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
রায় ১০ অক্টোবর

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা

সংরক্ষিত ছবি

আইন-আদালত

রায় ১০ অক্টোবর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলার রায় আগামী ১০ অক্টোবর। বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এ হামলা করা হয়। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করার মধ্য দিয়ে ১৪ বছর আগের নৃশংস ও বর্বরোচিত এ হামলা মামলা নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে।

যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এ মামলায় জামিনে থাকা পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরীসহ আট আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আগের দিন সোমবার জামিনে থাকা আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আরজি জানিয়েছিল সরকারপক্ষ।

গতকাল মঙ্গলবার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন দীর্ঘ ১১৯ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন। দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

যুক্তিতর্কের শেষ দিনে আসামিদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জনকে বিশেষ এজলাসে হাজির করা হয়।

শেষ দিনে আসামিপক্ষে আইনি যুক্তিতর্ক পেশ করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান, এসএম শাহজাহান। তারা তাদের মক্কেলদের (আসামি) খালাসের আরজি জানিয়ে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন।

সরকারপক্ষে শুনানিতে ছিলেন প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, মোশাররফ হোসেন কাজল, বিশেষ পিপি মো. আবু আবদুল্লাহ্ ভূঁঁইয়া, আকরাম উদ্দিন শ্যামল, ফারহানা রেজা, আমিনুর রহমান।

রায়ের দিন ধার্য করার আগে আদালত বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন পর এ মামলার বিচারের শেষ দিকে আমরা এসেছি। এ মামলার বিচারে কোনো ফাঁক রাখার চেষ্টা করিনি। কখনো কারো অধিকার বঞ্চিত করিনি। বিচারকাজ আজ শেষ হচ্ছে। আমাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে।’

আদালত বলেন, ‘এত দিন ধরে এখানে বিচারকাজ পরিচালনা করে এ আদালত বড় আপন হয়ে গেছে। এ আদালতের জানালা, ফ্যান, সবকিছু বড় চেনা। আর এক দিন এখানে আসতে হবে। সেদিন আমি রায় ঘোষণা করব। এ মামলায় আসামিরা, তাদের আইনজীবী, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যরা যে সহযোগিতা করেছেন, তা হূদয় দিয়ে অনুভব করছি। সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিশিষ্ট আইনজীবী এ মামলা পরিচালনায় এ বিচারিক আদালতকে অলঙ্কৃত করেছেন। বিচারক সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এ মামলায় সম্পূর্ণ ঘটনাকে সামনে এনে আইনি ব্যাখ্যার আলোকে রায় ও আদেশ দেওয়া হবে।’

আসামিদের জামিন বাতিলের ব্যাপারে আদালত বলেন, ‘আসামিরা জামিনে থাকলে বিচারে সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য আসামিদের জামিন বাতিল করা হলো।’

রায় ঘোষণার দিন ধার্য হওয়ার পর প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য এ হামলা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএএম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না। সাজা দেওয়ার মতো কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই।’

গত ৫, ১০, ১১ ও ১২, ১৭ সেপ্টেম্বর সরকারপক্ষে আইনি যুক্তি উপস্থাপন করেন সৈয়দ রেজাউর রহমান, মোশররফ হোসেন কাজল, বিশেষ পিপি মো. আবু আবদুল্লাহ্ ভূঁঁইয়া ও আকরাম উদ্দিন শ্যামল। আসামিপক্ষে গত ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী এসএম শাহজাহান আইনি যুক্তি শেষ করেন। এ নিয়ে যুক্তি ১১৯ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক শুনানি হয়েছে। তার মধ্যে ৮৯ কার্যদিবসে আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করেছে।

সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হন তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শ নেতাকর্মী।

গ্রেনেড হামলার পর ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা (নম্বর-৯৭) দায়ের করেন।

জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ৯ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে সিএমএম আদালতে দুটি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। ওই বছরই মামলা দুটির কার্যক্রম দ্রুত বিচার আদালত-১-এ স্থানান্তর করা হয়। এ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের ২৯/১১ (হত্যা) ও ৩০/১১ (বিস্ফোরক) মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ৬১ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার হয়েছিল।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে মামলার অধিকতর তদন্ত করে। মামলার দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের ওপর। অধিকতর তদন্ত শেষে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন করে আসামি করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এরপর দুই অভিযোগপত্রের মোট ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়।

এর মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (মানবতাবিরোধী অপরাধ), হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও শরীফ সাহেদুল আলম বিপুলের (ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়। এতে আসামি এখন ৪৯। লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামি কারাগারে রয়েছেন। তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ পলাতক ১৮ জন। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।

গতকাল তিন আইজিপিসহ ছাড়া কারাগারে পাঠানো অপর পাঁচজন হলেন- খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অব.) রুহুল আমিন, এএসপি (অব.) আবদুর রশিদ ও এএসপি (অব.) মুন্সি আতিকুর রহমান।

সরকারপক্ষে ৫১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads