কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দিয়েও গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে পারেনি পুলিশ ও ছাত্রলীগের তৎপরতায়। এদিন দুপুরে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরই কোটা সংস্কারপন্থিরা শাহবাগে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দেয় তাদের ফেসবুক গ্রুপে। এরপরই শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারী সন্দেহে শাহবাগে কয়েকজনকে মারধর করে ছাত্রলীগ।
রোববার বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ওই ছয়জনকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। তাদের দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগের দাবি, শাহবাগে জড়ো হয়ে যেন ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে’ সে কারণে পুলিশ ও ছাত্রলীগ শাহবাগ মোড় দখলে নেয়। ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে’ মাঠে ছিল তারা। তবে আন্দোলনকারীদের কাউকে দেখলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে বলে সংস্কারপন্থিদের অভিযোগ।
এদিকে ‘ছাত্রলীগের হামলা ও নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে’ আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে সকাল ১০টায় কালো পতাকা ও বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকার পরীবাগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর নাহার নীলা ও শফিউল আলম।
নীলা বলেন, ‘শনিবার ও রোববার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। রাশেদসহ আমাদের তিন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে সোমবার সকাল ১০টায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও পতাকা মিছিল করা হবে। রাশেদসহ সবাইকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। নুরসহ যাদের মারধর করা হয়েছে, তাদের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করলে আমরা এ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াব। আর যদি প্রজ্ঞাপন জারি করা না হয়, তাহলে পরবর্তীতে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজসহ রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে’ শাহবাগে অবস্থান নেয়। সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাব থাকলেও ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর ব্যতিক্রম। কোটা আন্দোলনের কোনো ধরনের প্রভাব গতকালও পড়েনি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রমে।
এ ছাড়া গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীরা মানববন্ধন করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের বাধায় মানববন্ধন করতে পারেনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে রাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আন্দোলনকারীরা ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনের জন্য জড়ো হয়। এ সময় টুকিটাকি চত্বর থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে ২৫-৩০ নেতাকর্মী ব্যানার কেড়ে নিয়ে আন্দোলনরতদের ধাওয়া দেয়। কয়েক শিক্ষার্থীকে মারধরও করে তারা। আন্দোলনকারীরা এ সময় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে ঢুকে যায়।
বেলা ১১টার দিকে গ্রন্থাগারের সামনে সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আন্দোলনকারীদের ওপর আবার হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় অন্তত ১২ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্ত, আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আবু রায়হান ও নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র আবদুল্লাহ শুভকে গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেয় আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসের সড়কে মহড়া দেয়। এ সময় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
শাবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। এদিন বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধনের উদ্দেশ্যে জড়ো হতে থাকলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের ব্যানার কেড়ে নেওয়া ও হুমকি-ধমকির ঘটনা ঘটে।
ঢাকা ও রাজশাহীতে হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ময়মনসিংহে মানববন্ধন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি থেকে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।