• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বৃষ্টি মাথায় রাজপথে শিক্ষার্থীরা

মিরপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

ছবি -বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

বৃষ্টি মাথায় রাজপথে শিক্ষার্থীরা

লেন ধরে যানবাহন ও রিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণ #করছে পথচারীদের ফুটপাথ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ আগস্ট ২০১৮

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সরকারি ঘোষণা এবং বৈরী আবহাওয়াও ঘরে আটকাতে পারেনি নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের। তারা গতকাল বৃহস্পতিবার টানা পঞ্চম দিনের মতো রাস্তায় নেমে আসে; আগের চেয়ে আরো গোছালোভাবে। নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে রাজপথ মাতিয়ে রাখে। একই সঙ্গে রাস্তায় চলাচলরত গাড়ির চালকদের লাইসেন্স যাচাই করে। পুরো নগরীজুড়ে তারা যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং পথচারীদের ফুটপাথ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে।

সকাল ১০টা থেকেই রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর, লালমাটিয়া মিরপুরসহ নগরীর অর্ধশত পয়েন্টে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন বক্তব্য লেখা সংবলিত ব্যানার প্রদর্শন করে এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি জানায়। এ ছাড়া যানবাহনের চালকদের লাইসেন্স যাচাই করে দেখে এবং লাইসেন্সবিহীন গাড়ি আটকে দেয়। দুই মন্ত্রী, এমপি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, বিজিবি ও পুলিশের গাড়িও ছাড় পায়নি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের হাত থেকে। নগরী চলে যায় শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে। ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে কলেজ শিক্ষক ও অভিভাবকদের মৌন সমর্থন লক্ষ করা যায়। অনেক অভিভাবক টিফিনে করে খাবার, কলা-রুটি তাদের সন্তানদের জন্য রাজপথে সরবরাহ করেন।

বিজয় সরণির মোড়ে তেজগাঁও কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা অবস্থান নেয়। তারা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানের লাইসেন্স পরীক্ষা করে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ও নিউমার্কেট এলাকায় সড়কে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্ররা অবরোধ করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাস্তায় বাস রেখে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। তারা যানবাহনের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করে। ১১টার দিকে উইনার পরিবহনের একটি বাস আটকায় শিক্ষার্থীরা। চালক লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হলে বাসটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

আশপাশের বিভিন্ন কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। ব্যারিকেড দিয়ে শাহবাগে ঢোকার প্রতিটি মোড়ে একটি করে লেন তৈরি করে যানবাহনের লাইসেন্স চেক করা শুরু করে। এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্টদেরকে নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যেসব গাড়ি চালকের লাইসেন্স আছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যাদের লাইসেন্স নেই তাদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশকে মামলা দিতে বাধ্য করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের গাড়ি আটকে দেয়। লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ট্রাফিক পুলিশ ডেকে চালকের বিরদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। অবশ্য এ সময় মুখ্য সচিব গাড়িতে ছিলেন না।

মন্ত্রী এমপির গাড়িও ছাড় পায়নি : বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল নগরজুড়ে অবরোধের সময় মন্ত্রী এমপি ও পুলিশের গাড়িকেও ‘থোরাই কেয়ার’ করেছে। বরং ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ভড়কে গেছেন তারা। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর গাড়ি আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অন্য একটি গাড়িতে চড়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া সংসদে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে ও বের হতে পারেননি অন্যান্য এমপি-মন্ত্রীও। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সংসদ ভবন, আসাদ গেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মনিপুরী অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। গাড়ির কাগজপত্র ছাড়া শিক্ষার্থীদের ভয়ে সংসদে ঢুকতে না পেরে বাতিল করা হয়েছে সংসদীয় কমিটির বৈঠকও। অবস্থা বেগতিক দেখে সংসদ থেকে বের হওয়া গাড়ি ঘুরিয়ে ফের সংসদে প্রবেশ করেছে।

দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের ড্রাইভারের কাগজপত্র না থাকায় আসাদ গেটে তার গাড়ি আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। এতে বাধ্য হয়ে মন্ত্রী গাড়ি রেখে হেঁটে সংসদে প্রবেশ করেন। ঝিনাইদহের পৌর মেয়র সাইদুল কবির মিন্টুর গাড়ির ড্রাইভারের লাইসেন্স ছিল না। এজন্য তাকেও আটকে রাখা হয়। এমনকি সংসদের অনেক কর্মকর্তাও কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি নিয়ে সংসদে যাতায়াত করতে পারেননি। সংসদ চত্বরে থাকা একাধিক গাড়ির ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে বসে থাকে দেখা যায়।

এর আগে বিক্ষোভের চতুর্থ দিনে বুধবার বাংলামোটরে উল্টোপথে চলতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি। মন্ত্রীর সামনেই শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয় ‘আইন সবার জন্য সমান’।

পুলিশ বিজিবির গাড়ি আটক : ধানমন্ডিতে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর দায়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দুটি গাড়ি আটকে ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে চালকের নামে মামলা দেয় শিক্ষার্থীরা। ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীরা গাড়ি দুটি আটক করে। সার্জেন্ট রনি দুই চালকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর গাড়ি দুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পাশে মিরপুর রোডে অবস্থান নিয়ে লাইসেন্স পরীক্ষা করার সময় সেখানে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের একটি এবং ঢাকা ওয়াসার একটি গাড়ির চালকের লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। পরে উপস্থিত এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করানো হয়। শাহবাগে দুই পুলিশ কর্মকর্তার মালিকানাধীন দুটি প্রাইভেটকারের চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় সার্জেন্টকে মামলা দিতে বাধ্য করে শিক্ষার্থীরা।

এর বাইরে মিরপুর, কাফরুল, পল্লবী, কালসী ও বিমানবন্দর সড়কে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নামে। যাত্রীবাহী বাস না পেয়ে তারা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং মটরসাইকেলের চালকদের আটকে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করে। উত্তরায় চালকের লাইসেন্স না থাকায় দুটি বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ির চাবি নিজেদের জিম্মায় নেয় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা : সারা দিনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পর বিকালে কাফরুল ও মিরপুর এলাকায় পুলিশের পিটুনি এবং হামলার শিকার হয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে, পুলিশের সঙ্গে হামলায় অংশ নেয় স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। মিরপুরের বাইরেও কোনো কোনো পয়েন্টে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া ধানমন্ডির সায়েন্স ল্যাবরেটরি সিগন্যালে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টের ওপর হামলা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। শনিরআখড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে না পারায় এক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় এক পুলিশ সদস্যকে লাঞ্ছিত করে শিক্ষার্থীরা। বেলা পৌনে ৩টার দিকে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীর শার্টের কলার ধরার অভিযোগে এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই পুলিশ সদস্যের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads