• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে যেভাবে

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসে যেভাবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ আগস্ট ২০১৯

প্যাকেটজাত তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে। কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিক কোথা থেকে আসে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গরুর অসুখ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খামারিরা গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় কৃষকদের খামারে প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ লিটার তরল দুধ উৎপাদন হয়। এককভাবে এই এলাকাটিতে দেশের সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদন হয়। এসব দুধ মিল্ট ভিটাসহ বিভিন্ন কোম্পানি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে ভোক্তাদের জন্য বাজারে নিয়ে আসে।

শাহজাদপুর ও বাঘাবাড়ীর বিভিন্ন গরুর খামারে ঘুরে দেখা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কৃষকদের কাছে বেশ পরিচিত একটি বিষয়। অনেক খামারি আছেন, যারা অনায়াসে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের নাম বলতে পারেন।

শাহজাদপুরের একটি গরু খামারের মালিক আবু সিদ্দিক বলেন, গরু অসুস্থ হলে তারা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকি তখন, গরুটা যখন দেখি গরুটা খুবই মরণাপন্ন হয়ে গেছে। একটা গরুর দাম দুই লাখ-আড়াই লাখ টাকা। সেটা যদি মারা যায়, তাহলে তো খামারি শেষ হয়ে যাবে।

শাহজাদপুরের গবাদিপশুর চিকিৎসক ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো গরু রোগাক্রান্ত হলে তাকে যদি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়, তাহলে সে গুরুর দুধ দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাজারে বিক্রি করা উচিত নয়; কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যে গরুটি প্রতিদিন ২০ লিটার দুধ দেয়, সে গরুর দুধ বিক্রি যদি দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকে, তাহলে একজন খামারি ১৫ দিনে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়বে।

একজন দরিদ্র খামারির এ লোকসান মেনে নেওয়া রীতিমতো অসম্ভব। শাহজাদপুরের একটি গ্রামে প্রাণ কোম্পানির জন্য খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করেন রাকিবুল মাহমুদ। তিনি বলেন, আমি যখন দুধ এখানে রিসিভ করি, তখন অনেক সময় দেখা যায় দুধে মাই আসছে। মাই একধরনের রোগ। এটা গরুর ওলান দিয়ে বের হয়। কৃমির ট্যাবলেট দিলে দুধে মাই আসে। তখন আমি খামারিদের বলে দিই যে মাই আসা দুধ আমি রিসিভ করব না।

তিনি আরো বলেন, তাৎক্ষণিক ওরা অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ দিয়ে দেয়। স্বাভাবিকভাবে মাই সারতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে; কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক দিলে দেখা যায় ওটা পরের দিন থেকে ক্লিয়ার হয়ে যায়। ওই অ্যান্টিবায়োটিকটা যাবে কই? অ্যান্টিবায়োটিকটা এভাবেই আসে।

খামারিদের অনেকই মনে করেন, দানাদার গবাদিপশুর খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসা থাকতে পারে। যদিও এটি শুধুই তাদের ধারণা।

শাহজাদপুর উপজেলায় পোতাজিয়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ওয়াজ আলী বলেন, অনেক কোম্পানি আছে, যারা গবাদিপশুর খাদ্য বাজারজাত করার জন্য গরুর খামারিদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে। তারা খামারিদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে, তাদের কোম্পানির খাবার গরুকে দিলে দুধের উৎপাদন বাড়বে।

তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে গবাদিপশুর চারণভূমি কমে যায়। ফলে গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য প্যাকেটজাত দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। ক্যাটেল ফিডের কোম্পানি বিভিন্ন অবস্থায় হয়তো হরমোন জাতীয় দ্রব্য দিয়ে বলে আমার মালটা খাওয়াও দুধ বেশি হবে। সেই ক্ষেত্রে সরকারিভাবে ক্যাটল ফিড পরীক্ষা করুক।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাটল ফিডের বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে দুধের উৎপাদন এক থেকে দুই কেজি হেরফের হয়।

তবে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, দানাদার পশুখাদ্য থেকে ক্ষতিকর উপাদান গরুর শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। তিনি দাবি করেন, পশুখাদ্যের নমুনা বাজার থেকে সংগ্রহ করে প্রায়ই পরীক্ষা করা হয়।

গবাদিপশুর অ্যান্টিবায়োটিক এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা খামারিদের বা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলব, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করবেন না।

তিনি বলেন, গরুর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলে সেটির প্রভাব ক্ষেত্রবিশেষ সাত থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত থাকে। এ সময়টুকু দুধ খাওয়া যাবে না।

এই কর্মকর্তা আরো জানান, এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আছে যেগুলো গবাদিপশু ও মানুষ-উভয়ের শরীরের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োগের মাত্রা হেরফের হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads