• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
আসবাব মেলা শুরু আজ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

আসবাব মেলা শুরু আজ

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সস্তা শ্রমের কারণে বাংলাদেশে সুবিধা পায় শ্রমঘন শিল্পগুলো। এমন একটি শিল্প আসবাব, এখন সময়ের বিবর্তনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে প্রতি বছর বাড়ছে দেশের তৈরি আসবাবপত্র বা গৃহস্থালি পণ্যের রপ্তানি। আর গত কয়েক বছরে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থানও তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের আসবাবপত্র।

তবে সম্ভবনার তুলনায় এখনো এ যাত্রা বেশ ধীরগতির বলে মনে করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও হাতিলের কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিশ্বের আসবাবের বাজারের সবচেয়ে বড় অংশীদারি দেশ চীন ধীরে ধীরে এ বাজার থেকে সড়ে যাচ্ছে। কারণ তাদের নজর এখন উন্নত প্রযুক্তির পণ্যের দিকে। সেটা বাংলাদেশ ভারত বা ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর জন্য অনেক বড় সুখবর। কারণ এ বাজার আমরা দখল করতে পারি।

তিনি বলেন, একই সময়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধও নতুন আরেকটি সম্ভাবনার তৈরি করেছে। চীনের পণ্য অনেক দেশে যাচ্ছে না। কিন্তু তড়িঘড়ি করে এ বাজারগুলো ধরতে এখন আমাদের দরকার স্বল্পমেয়াদির বেশ কিছুু পরিকল্পনা। আর শ্রমঘন এ শিল্পকে টেকসই করতে আরো প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াাদ নীতি সহায়তা। কিন্তু এসব নীতি সহায়তার অভাবে আমরা দ্রুত এগোতে পারছি না। যতটা সম্ভব ছিল।

দেশ থেকে আসবাবেব রপ্তানি বাড়ছে প্রতি বছরই। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৭ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের থেকে ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৬ কোটি ৩১ লাখ ডলার। আর গত চার বছরে আসবাব রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আসবাব রপ্তানি হয়েছিল ৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের।

তবে সেই বিবেচনায় এ খাতের সুযোগ সুবিধা বাড়েনি বলে দাবি করে সেলিম এইচ রহমান বলেন, আমাদের আসবাবশিল্পে ব্যবহূত উপকরণ (হার্ডওয়ার) আমদানিতে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ ডিউটি দিতে হচ্ছে। এ ডিউটি দিয়ে দেশের বাজারে আসবাব বিক্রি লাভজনক হলেও, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় শক্ত অবস্থান সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, আসবাব রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বিকল্প নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু আমদানির ডিউটির তুলনায় সেটা অনেক কম। এ কারণে এ খাতের উপকরণ আমদানিতে হয় ডিউটি কমাতে হবে নতুবা বিকল্প নগদ সহায়তা বাড়াতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের নকশার আসবাব তৈরি হয়। দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশে তাদের শোরুমও চালু করেছেন। অন্যদিকে সম্প্রতি দেশে আসবাব তৈরিতে বিনিয়োগ করেছে অ্যাশলে ফার্নিচার হোমস্টোর নামের বিশ্বের সেরা একটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান।

দেশের বাজারেও কাঠের পাশাপাশি স্টিল, অন্যান্য ধাতু ও প্লাস্টিকের তৈরি নানা ধরনের আধুনিক আসবাব বিস্তার লাভ করে চলেছে। এগুলো এখন বাসগৃহ, অফিস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল ও সম্মেলনকেন্দ্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলে দেশের পুরো চাহিদা মেটানোর পরে রপ্তানি আয়ের একটি বড় উৎস এ আসবাবশিল্প।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ শিল্প এগিয়ে থাকার একটি প্রধান কারণ দেশের সস্তা শ্রম। কারণ অনেক দেশে এখন আসবাব তৈরির লোকবল খুব একটা পাওয়া যায় না। আবার যেখানে পাওয়া যায় সেখানে শ্রম বেশ ব্যয়বহুল। কিছু দেশে যন্ত্রের সাহায্যে রেডিমেড আসবাব তৈরি হলেও হাতের স্পর্শ আছে এমন আসবাবের চাহিদা এখনো সেই তুলনায় অনেক বেশি। আর এগুলো ঐতিহ্যগতভাবেই করে আসছে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশ ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যে, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসহ আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় আসবাব রপ্তানি করছে দেশের দেড় ডজন প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে বড় বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ খাতে নতুন বিনিয়োগ করছে।

এদিকে এমন পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ১৬তম জাতীয় ফার্নিচার মেলা ২০১৯। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় মেলা চলবে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ মেলায় গৃহস্থালির খাট, খাবার টেবিল-চেয়ার, সোফাসহ নানা বাহারি আসবাব পাওয়া যাবে। মিলবে অফিস আসবাবও। বিভিন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠান তাদের সেরাটা নিয়ে হাজির হচ্ছে পাঁচ দিনের এই মেলায়। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ফ্রিতে এ মেলা উপভোগ করতে পারবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads