• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
সেবায় বাধা দুর্নীতি ও অনিয়ম

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট নিয়ে সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন

সেবায় বাধা দুর্নীতি ও অনিয়ম

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২২ নভেম্বর ২০১৯

জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। তবে বাড়ছে না সেবার মান। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালটির সেবার মানে প্রধান বাধা দুর্নীতি ও অনিয়ম।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। হাসপাতালটির সেবার মান পর্যবেক্ষণ করতে সংসদীয় কমিটি একটি উপকমিটি গঠন করে। উপকমিটি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে তারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সাধারণ রোগী, রোগীদের স্বজনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।

সূত্র জানিয়েছে, উপকমিটি একটি বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করে সংসদীয় কমিটিকে দিয়েছে। সংসদীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রিপোর্টটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে হাসপাতালটি হার্টের রোগীদের চিকিৎসাসেবায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে অনিয়ম আর দুর্নীতি দূর করা যায়নি।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে পদে পদে দিতে হয় উৎকোচ। টাকা থাকলেই চিকিৎসা মেলে জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। টাকা না থাকলে ঠিকমতো সেবা পান না সাধারণ মানুষ। কর্মচারীরাও দুর্নীতিতে জড়িত। জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ড প্রতিটি ক্ষেত্রে টাকা ব্যয় করতে হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালটির অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এর উন্নয়নে। কিন্তু সেবার মান নিয়ে অসন্তোষ রয়ে গেছে।

জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল মানেই রোগীর ভিড়। বহির্বিভাগে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র পেতে দাঁড়াতে হয় দীর্ঘ লাইনে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কক্ষগুলোর সামনে থাকে উপচে পড়া ভিড়। হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলেও শয্যা আর কিছুতেই মেলে না। কারণ নির্ধারিত শয্যা সংখ্যার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি রোগী সব সময়ই ভর্তি থাকে এখানে। তাই হাসপাতালের বারান্দা, করিডর থেকে শুরু করে সিঁড়িতে পর্যন্ত থাকতে হয় রোগীদের। তবে হূদরোগ চিকিৎসায় দেশের একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালের নতুন করে ৮৪০ শয্যা যোগ হচ্ছে। পাশাপাশি কেবিন, আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাথল্যাব ও অপারেশন থিয়েটার (ওটি) কমপ্লেক্স সুবিধাও তিন গুণ বাড়ছে। এসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চিকিৎসক এবং নার্স থেকে শুরু করে অন্যান্য জনবলও বাড়ানো হচ্ছে।

এশিয়ার সবচেয়ে বড় কার্ডিয়াক আইসিইউয়ের স্বীকৃত অর্জন করেছে জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। সম্প্রসারিত আধুনিক কার্ডিয়াক আইসিইউ এবং ওটি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে ৭টি কার্ডিয়াক অপারেশন থিয়েটার এবং ৫০টি আধুনিক মানের আইসিইউ বেড বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্য ও  পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। 

কার্ডিয়াক অপারেশন থিয়েটার ও আইসিইউ বেড বৃদ্ধি পাওয়ায় হূদরোগীদের চিকিৎসাসেবার মান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। এতে পূর্বের তুলনায় একসঙ্গে অধিক সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। প্রচলিত মানসম্মত হূদরোগ সেবার পাশাপাশি বুকের পাঁজর না কেটে ছোট ছিদ্রের সাহায্যে কার্ডিয়াক অপারেশনের মতো অধুনাপ্রবর্তিত অত্যাধুনিক পদ্ধতির অপারেশনও শুরু হয়েছে। গত ৩০ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো হাসপাতালটির কোনো কনট্রাস্ট ব্যবহার না করে জটিল কিডনি রোগীদের হূদরোগ চিকিৎসার জিরো কনট্রাস্ট এনজিওপ্লাস্টি পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়। এছাড়া এ হাসপাতালে সর্বাধুনিক থ্রিডি ম্যাপিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে জটিল অ্যারিদমিয়া রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে নামমাত্র মূল্যে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের চিকিৎসাসেবায় কিছুটা টানাপড়েন রয়ে গেছে। তবে সরকার সবার জন্য চিকিৎসাসেবা এবং হয়রানিমুক্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আধুনিক চিকিৎসাসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে যেতে ব্যাপক উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে শয্যার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। চিকিৎসকরা যাতে মফস্বলে থাকেন তার জন্য কঠোরতা আরোপ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সংসদীয় কমিটির একটি প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসেছে। তাতে যেসব সুপারিশ ও নির্দেশনা উঠে এসেছে সেগুলো পরিপালন করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সেবার মান নিশ্চিত করতে তদারকি জোরদার করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads