• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
পেঁয়াজের দাম কমা নিয়ে পূর্বানুমান সম্ভব নয়

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

পেঁয়াজের দাম কমা নিয়ে পূর্বানুমান সম্ভব নয়

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯

যতই আমদানি করার কথা বলা হোক না কেন, এখনো বিদেশি পেঁয়াজের জোগানের বারোআনা ঘাটতি রয়েছে। কারণ অধিকাংশ রপ্তানিকারক দেশেই পেঁয়াজের চরম সংকট চলছে। ফলে সেসব দেশ থেকে কম দামে দ্রুততার সঙ্গে পেঁয়াজ আনা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া দেশের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের ব্যাপক জোগান আসবে ফেব্রুয়ারির পরে। আর পেঁয়াজের সংকট কাটতে সেটাই একমাত্র সমাধান। কম দামে পেঁয়াজ খেতে হলে ওই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 

তবে এ বিষয়টি স্বীকার না করে এত দিন পেঁয়াজ নিয়ে নানা প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন দায়িত্বশীলরা। কখনো বলেছেন দুদিনে কমবে, কখনো বলেছেন এক সপ্তাহের কথা। আবার কখনো প্রচুর পেঁয়াজ উড়োজাহাজে আসার বুলি শুনিয়েছেন। কখনো শুনিয়েছেন দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজে সয়লাব স্থানীয় বাজারের গল্প।

অবশেষে গত রোববার পেঁয়াজের দাম কবে কমবে সে প্রশ্নের জবাবে প্রথমবারের মতো কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, পেঁয়াজের দাম কবে কমবে তা পূর্বানুমান করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের ব্যবহার কমানোর কথা বলেছেন তিনি। তার মতে, এ সমস্যা সমাধানের একটাই পথই দেশে উৎপাদন বাড়ানো।

কিন্তু এক সপ্তাহ আগেও মন্ত্রীসহ সরকারি কোনো কোনো সংস্থা ঘাটতির কথা মানছিলেন না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা, সরবরাহ ও যৌক্তিক মূল্যের ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৈঠকেও কয়েক দিনের মধ্যে উড়োজাহাজে ৪০০ টনের মতো পেঁয়াজ আসার কথা জানিয়ে টিপু মুনশি বলেছিলেন, সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের যা লাগবে, সব আছে, সংকটের কথা বললে ঠিক কথা বলা হবে না।

ওই সময় বাণিজ্যমন্ত্রী নতুন করে আশ্বাস দিয়েছিলেন। ১০ দিনের মধ্যে আমদানি করা বড় চালান এসে যাবে ও  দেশি পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম কমবে। আর সেটা ছিল পেঁয়াজ সংকটের পরে তার অষ্টম আশ্বাস। এর আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এরপর পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকায় উঠেছিল। তার আগেও বিভিন্ন সময় সরবরাহ বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাজারে সরবরাহ সেভাবে না বাড়ায় দাম দিন দিন নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফলে পেঁয়াজ কিনতে না পেরে অনেক দরিদ্র মানুষকে পেঁয়াজ ছাড়াই তরকারি খেতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, প্রথমে রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি আর শেষে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করেছিল গত ২৯ সেপ্টেম্বর। ততদিন বাংলাদেশ যত পেঁয়াজ আমদানি করেছে তার ৯০ শতাংশই ভারত থেকে। এরপরেও সরকার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছিল পেঁয়াজের দর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অন্যান্য উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানিও করা হবে, বড় শিল্পগোষ্ঠী  পেঁয়াজে সয়লাব করে দেবে। এরপর সেই পেঁয়াজ শতক ছাড়াল, এমনকি দ্বিশতকও ছাড়িয়ে আড়াই শ হয়েছে। কিন্তু আশ্বাস দেওয়া ছাড়া কোনোকিছুই করতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বক্তৃতা ছাড়া ওখান থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপের সুফল পায়নি ভোক্তারা।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি যখন বলেছিলেন, পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকার নিচে আপাতত নামবে না, তখন ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর আরো সুযোগ পেয়ে যান। এ ধরনের বক্তব্যকে দাম বাড়ানোর ‘লাইসেন্স’ হিসেবে দেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এরপর রাতারাতি হুহু করে দাম বাড়ে পেঁয়াজের।

এদিকে পেঁয়াজ নিয়ে যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করেন ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্য সচিব গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ভারতের পেঁয়াজের রপ্তানি বন্ধে বিষয়টি আগেই আঁচ করার সুযোগ ছিল। যেটা হয়নি। এরপরেও বাজারের পরিস্থিতি শুরুতেই যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছিল তখন সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের দরকার ছিল। অথচ কার্গো বিমানে করে বিশেষ পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে এখন। যদিও এটি ব্যয়বহুল। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না।

তবে সংকট কাটাতে উৎপাদনের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, পেঁয়াজ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সময় এসেছে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতি এটা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, আমাদের পর্যাপ্ত পেঁয়াজের জোগান নেই। এখন নিজস্ব উৎপাদনের বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads