• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সামাজিক দূরত্ব-লকডাউন মানছেন না রোহিঙ্গারা

  • জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ
  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০২০

বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ নিয়ে কোনো টেনশন নেই কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। এখানে নেই সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার বা লকডাউনের কোনো বালাই। রোহিঙ্গা শিশু, নারী বা পুরুষ কারোই এ নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই। যে যার মত করে ভাবছে এ ভাইরাস নিয়ে। কেউ মনে করছে, তাদের সমস্যা সমাধান হলেই ভাইরাস আপনা আপনি চলে যাবে। কেউ মনে করছে রোগ দিয়েছে আল্লাহ, সারাবেনই আল্লাহ। আবার অনেকে মনে করেন, আমরা নিজেরাই মজলুম নিযার্তিত। আমাদের করোনা রোগে ধরবে না। ফলে শত শত মুসল্লী নিয়ে মসজিদে নামাজ আদায় যেমন চলছে। তেমন শত শত লোকসমাগম ঘঠিয়ে বাজারও চালু রয়েছে। মেয়েরা পানি নিচ্ছে নির্দিষ্ট পয়েন্টে গিয়ে। সেখানো হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। শিশুরা ক্যাম্পের ছোটো ছোটো গলিতে চলছে তাদের মতই।

সরেজমিন টেকনাফের জাদিমোড়া, শালবাগান, নয়াপাড়া, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য উঠে আসে। গত শুক্রবার সকাল ১১ টা হতে সন্ধ্যা ৫ টা পর্যন্ত এসব ক্যাম্পের মসজিদ, বাজার, দোকান, ঘর বাড়ি ইত্যাদি দেখে কোথাও মনে হয়নি এখানে লকডাউন চলছে। করোনা ভাইরাস নামের মহামারি সংক্রমণ রোধে কোনো কার্যকর কর্মকাণ্ড আছে। ক্যাম্পের অভ্যান্তরে চলছে টমটম, অটোরিক্সা, বাজারে শত শত মানুষ সামাজিক দূরত্ব না মেনেই কেনাকাটা চালিয়ে যাচ্ছে। চায়ের দোকানে চলছে বেশ আড্ডা। জুমার নামাজে শত শত মানুষ নামাজ আদায় করছে। শিশুরা ক্যাম্পের অলিগলিতে খেলছে। দুপুর ২ টার দিকে নারী পুরুষ ও শিশুরা নির্দিষ্ট স্থান হতে পানি সংগ্রহ করছে। কোথাও কোথাও সকাল হতে এসব স্থানে সারিবদ্ধ ভাবে কলসি বা জারিকেন বসিয়ে রেখেছে পানি সংগ্রহের জন্য।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রূপবাহান জানান, আগে এনজিও’র কর্মীরা এসে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকার জন্য, বেশি বেশি হাত ধোয়া ও দূরে দূরে অবস্থান করার জন্য পরার্মশ দিলেও এখন তাদের দেখা যায় না।

তিনি আরো বলেন, ঘরে ঘরে সাবান সরবরাহ আগে থেকে দিয়ে যাচ্ছে । তবে বর্তমানে হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না অসুস্থরা।

শালবাগান ক্যাম্পের রোহিঙ্গা দোকানদার সলিম উল্লাহ বলেন, আগে জনপ্রতি দৈনিক ২০ লিটার পানি সরবরাহ করা হতো। এখন করোনা ভাইরাস জনিত সংক্রমন প্রতিরোধের জন্য বেশি পানি ব্যবহারের কথা বলা হলেও দৈনিক ১০ লিটারের বেশি পানি পাওয়া যাচেছ না। এতে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এব সময় শালবাগানে অক্সফাম ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করলেও এখন কাজ করছে এনজিও ফোরাম।

এনজিও ফোরামের মাঠ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, দৈনিক দুবেলা পানি সরবরাহ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা ক্যাম্পের ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতা কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে।

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবক আনোয়ার বলেন, করোনা হতে বাচঁতে মুখে মাস্ক ব্যবহারসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু বেশির ভাগ রোহিঙ্গা এসব মানতে নারাজ। এরা মনে করে রোগ দিয়েছে আল্লাহ। রোগ সারাবেনও আল্লাহ।

শালবাগানের মৌলভী কেফায়েত উল্লাহ বলেন, সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারি আকার ধারন করেছে। আগে এ ধরনের ভাইরাস হলে দোয়া দরূদ পরে এলাকা বন্ধ করা হতো। মহামারি চলে যেতো। আমাদের আশা ক্যাম্পে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা তেমনটি নাই। যেহেতু আমরা মজলুম বা নির্যাতিত। আল্লাহ আমাদের প্রতি রহম অর্থাৎ দয়াবান হবেন। আমরা প্রতিনিয়ত নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করছি।

যদিও বা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন সরকারী আদেশে সম্প্রতি কক্সবাজার জেলা লকডাউন ঘোষণা করেছেন। তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা লক ডাউনের মধ্যেই উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি রোহিঙ্গা ক্যাস্পও এর আওতায় পড়েছে। এরপর হতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুধু অতি জরুরি কর্মকাণ্ড ছাড়া অন্য সব কাজ বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজারের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মাহাবুব আলম তালুকদার গনমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইসোলেসন ইউনিট প্রস্তুত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইউএনএইচসিআর এ বিষয়ে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে এখনো করোনার প্রাদূর্ভাব ছড়িয়ে পরেনি। নতুন করে কোন দেশি বা বেদেশি যাতে ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে মাঝে মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নৌ বাহিনী, সেনাবাহিনী, র‌্যাব পুলিশ আনসারসহ উপজেলা প্রশাসনের টিম করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে টহল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার( ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল মনছুর।

তবে ক্যাম্পের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত একটি বাহিনীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ক্যাম্পের অবস্থা নাজুক। তারা লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব কিছুই মানছে না। তবে আগের মতো ক্যাম্প হতে লোকালয়ে যাচ্ছে না । আমরাও সেখানে আগের মত যাচ্ছি না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads