• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
তিতলির প্রভাবে সারা দেশে নৌ চলাচল বন্ধ

রবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌ চলাচল বন্ধ

সংরক্ষিত ছবি

আবহাওয়া

তিতলির প্রভাবে সারা দেশে নৌ চলাচল বন্ধ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১১ অক্টোবর ২০১৮

ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় তিতলি। বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ ভারতের তিন রাজ্য এবং বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানতে পারে প্রবল এই ঘূর্ণিঝড়টি। তবে এর প্রভাবে গতকাল বুধবার দুপুরের দিক থেকে দুই দেশের বিভিন্ন এলাকার টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আবহাওয়া বৈরী হতে শুরু করায় নেওয়া হয়েছে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রমও স্থগিত রাখা হয়েছে দুপুরের পর থেকে। সারা দেশে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলও বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। উপকূলের জেলাগুলোতে আসন্ন এই ‘দুর্যোগ’ মোকাবেলায় নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। আর ভারতের কয়েকটি রাজ্যেও নৌপথে বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি ওড়িশা ও অন্ধ্র প্রদেশের স্কুল-কলেজও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের ওবেয়সাইটে প্রকাশিত আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি আকারে বেশ বড়। এটি ভারতের উপকূলবর্তী তিনটি রাজ্য এবং বাংলাদেশের ওপর বিস্তৃত। সেটি প্রতি ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। ভারতের তিন রাজ্যের মধ্যে প্রথমে ওড়িশায় আঘাত হানতে পারে। এরপর পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

তবে দুই দেশের আবহাওয়া অফিসই মনে করছে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার আগেই শক্তি হারিয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে তিতলি। কিন্তু তার আগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, মেঘালয় ও ঝাড়খণ্ডে প্রচুর বৃষ্টি ঝরাবে সেটি।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তিতলির কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। এ কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। এদিকে বুধবার দুপুর থেকে বৈরী হয়ে উঠেছে দেশের অভ্যন্তরের আবহাওয়া। দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া হয়েছে ৪ নম্বর স্থানীয় হুশিয়ারি সঙ্কেত। এরই প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশের অভ্যন্তরীণ রুটেও যাত্রীবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে।

এ বিষয়ে নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবীর সংবাদমাধ্যকে জানান, ঘূর্ণিঝড় তিতলির আঘাত হানার আশঙ্কায় ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বুধবার বেলা ৩টা থেকে ঢাকা নৌবন্দর থেকে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।

বাংলাদেশ আবাহওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় তিতলি আকারে বেশ বড়। এটি ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী তিনটি রাজ্য এবং বাংলাদেশের ওপর বিস্তৃত। মঙ্গলবার তিতলির গতিমুখ ভারতের উড়িশামুখী হলেও বুধবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ অভিমুখী হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে বুধবার মধ্যরাতে বা বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলসহ বেশিরভাগ এলাকায় বৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে আসন্ন এই ‘দুর্যোগ’ মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় জেলাগুলোতে নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। বাংলাদেশের খবরের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সেসব খবর।

চট্টগ্রামে দিনভর বৃষ্টি : তিতলির প্রভাবে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে চট্টগ্রামে। বুধবার সারা দিনই থেমে থেমে বৃষ্টি নেমেছে সেখানে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস থাকায় ভূমি ধসের ঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যেতে গতকাল সকাল থেকে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন। তাদের জন্য লালখানবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

খুলনায় প্রস্তুত ২৪২ আশ্রয়কেন্দ্র : খুলনা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলায় ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা ও উপজেলায় মেডিকেল টিম, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরাও সতর্ক আছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। যেকোনো সম্ভাব্য দুর্যোগে সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্র্রহণ করে উদ্ধার কার্যক্রম, ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে সভায় আহ্বান জানানো হয়।

বাগেরহাট : উপকূলের জেলা বাগেরহাটেও ঘূর্ণিঝড় তিতলি মোকাবেলায় নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। দিনভর টানা বৃষ্টি নেমেছে সেখানে। জেলায় ২৩৪ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে। বন্দরে জাহাজ আগমন ও নির্গমন বন্ধ রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটেও নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুন্দরবনের সব পর্যটকের ও সুন্দরবনের সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর : জেলাটিতে মঙ্গলবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার বিকালে মেঘনা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। জেলার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির রামগতি ১০১ ইউনিটের ১ হাজার ৫১৫ জন এবং কমলনগর উপজেলার ৬৩ ইউনিটের ৯৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads