• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

বাংলাদেশ

ডিপিডিসির ২৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান পুরস্কৃত

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ০৫ এপ্রিল ২০১৮

রানা হানিফ

বনশ্রী ডিভিশনে ২৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির পরিবর্তে উল্টো ‘পুরস্কৃত’ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। সম্প্রতি সংস্থাটির কাজ পেয়েছে অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেনের ভাই লিয়াকত হোসেনের এমআই অ্যাসোসিয়েটকে মোট তিনটি ডিভিশনের বার্ষিক সিএসএস কাজ দেওয়া হয়েছে।

বনশ্রীর বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছিল। কিন্তু তা আমলে না নিয়ে নতুন কার্যাদেশের পেছনে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে ডিপিডিসির শীর্ষ দুই পরিচালকের বিরুদ্ধে।

ডিপিডিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে সংস্থাটির বনশ্রী ডিভিশনে লজিক্যাল মিটার এক্সচেঞ্জে অনিয়ম এবং বিলিং সফটওয়্যারের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ৫৫৬ জন গ্রাহকের ১১ লাখ ৭৪ হাজার ১৩১ ইউনিট বিদ্যুৎ কারচুপি করা হয়, যার সর্বনিম্ন মূল্য এক কোটি টাকার বেশি। ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ডিপিডিসির তদন্ত কমিটি অন্যান্য ডিভিশনের আরো প্রায় ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৮ ইউনিট বিদ্যুৎ কারচুপির প্রমাণ পায়, যার সর্বনিম্ন মূল্য ২৭ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগের ব্যাপারে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী সারোয়ারে কায়ানাত মোহাম্মদ নূরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গ্রাহক পর্যায়ে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পায়। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি কমিটি ডিপিডিসির বনশ্রী ডিভিশনের লাইনম্যান মীর কামাল হোসেন ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানাসহ সিএসএস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ১০ জন মিটার রিডারকে কারচুপির সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফাজ্জল হোসেনকে বনশ্রী ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মহসিন আবদুল্লাহ ও সহকারী প্রকৌশলী শাহানূর রশীদ সহযোগিতা করছেন বলে উল্লেখ করা হয়। অভিযুক্ত দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ডিপিডিসি। তারা বর্তমানে বনশ্রী ডিভিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। কিন্তু দুই মাসেরও বেশি সময় পার হলেও শুধু লাইনম্যান মীর কামাল হোসেন ও বিভাগটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এরই মাঝে এবছরের মার্চে অভিযুক্ত মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিংকে মানিকনগর, নারায়ণগঞ্জ পশ্চিম ডিভিশনের সিএসএস ঠিকাদারি কার্যাদেশ দিয়েছে ডিপিডিসি। আর নারায়ণগঞ্জ পূর্ব ডিভিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তোফাজ্জলের ভাই লিয়াকত হোসেনের এমআই অ্যাসোসিয়েট এবং এমআরএ কনসোডিয়াম ও বেসকম অ্যাসোসিয়েটের সমন্বিত জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানকে।

মানিকনগর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিংকে বার্ষিক সিএসএস ঠিকাদারি কাজ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি যোগাযোগ করেনি। তবে তাদের কাজের ওপর নজরদারি করা হবে।’ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নারায়ণগঞ্জ পূর্ব ডিভিশনের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কালাম আজাদ। তিনি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বনশ্রীর ঘটনা ডিপিডিসির সবার জানা। এরপর যদি হেড অফিস থেকে মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিংকে কাজ দেওয়া হয় তাহলে আমাদের কী করার আছে? তবে আমরা প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন।’

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বাংলাদেশের খবরকে জানান, বনশ্রীর অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগেই মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিংকে ওই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত হওয়ার পরেও কেন কার্যাদেশ স্থগিত করা হলো না— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। আমরা আরেকটা তদন্ত কমিটি করেছি যেটা প্রাথমিক তদন্তের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে। এরপর যদি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নতুন তদন্ত কমিটি কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেবে, এমন প্রশ্নে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে ‘বনশ্রীর বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় পুনঃতদন্তে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে’ ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এমন দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ডিপিডিসির পরিচালক (কারিগরি) হারুনুর রশীদ ও পরিচালক (প্রশাসনিক) জাকির হোসেনের সম্পৃক্ততায় নতুন তিনটি ডিভিশনের সিএসএস দায়িত্ব মুন্সি ইঞ্জিনিয়ারিংকে দেওয়া হয়েছে। এ কাজে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। দেশের বাইরে অবস্থান করায় অভিযোগের বিষয়ে হারুনুর রশীদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জাকির হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অভিযুক্ত হওয়ার পরও একটা প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুতের মতো সেবা খাতে দায়িত্ব দেওয়া দুর্নীতির প্রশ্রয় ছাড়া কিছুই না। এর মাধ্যমে প্রচলিত আইনকে ডিপিডিসি অমান্য করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads