• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
বাস্তবায়ন বিজ্ঞপ্তিতে সীমাবদ্ধ

লোগো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)

যোগাযোগ

সড়কে নিরাপত্তায় বিআরটিএ’র সিদ্ধান্ত

বাস্তবায়ন বিজ্ঞপ্তিতে সীমাবদ্ধ

# গণপরিবহনে চালক-সহকারীর লাইসেন্স ও মোবাইল নম্বরসহ ছবি প্রদর্শন # দূরপাল্লার বাসে চালক ও যাত্রীর সিটবেল্ট সংযোজন # জরাজীর্ণ গণপরিবহনের ডেন্টিং-পেইন্টিং করা # চলমান অবস্থায় দরজা লাগিয়ে রাখা

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ১৭ অক্টোবর ২০১৮

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে নেওয়া এসব সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন ও বিজ্ঞপ্তির মধ্যেই রয়েছে সীমাবদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রে এসব সিদ্ধান্ত জানতেও পারেন না সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডররাও। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নানা বিতর্কের মধ্যে এই আন্দোলন শেষ হলেও আন্দোলনকারীদের দাবির পক্ষে সমর্থন ছিল সাধারণ মানুষ ও সরকারের।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা করছে বিভিন্ন কর্মসূচি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও নেওয়া হয়েছে বেশকিছু সিদ্ধান্ত। দুই সিটি করপোরেশনসহ, রাজধানীর অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গঠন করা হয়েছে কমিটিও। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বৈঠক করেছে। তবে সড়কের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) অধিকাংশ সিদ্ধান্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে দাফতরিক নথিতেই। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে তেমন কার্যকর ভূমিকাও নেই সংস্থাটির। অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিএ’র নেওয়া অধিকাংশ সিদ্ধান্তই জানানো হয় না পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকার রাস্তায় ফিটনেসবিহীন, ভাঙাচোরা, লক্কড়-ঝক্কড়, রঙচটা গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করতে গত ৭ সেপ্টেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিআরটিএ। ‘ঢাকা মহানগরীর যানবাহনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিআরটিএর জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তিটিতে উল্লেখ করা হয়েছে ফিটনেস সনদ নেওয়ার পরও রাজধানীতে রঙচটা, জরাজীর্ণ ও লক্কড়-ঝক্কড় গণপরিবহন চলাচল করছে। এসব রঙচটা, জরাজীর্ণ, দৃষ্টিকটু ও লক্কড়-ঝক্কড় গণপরিবহনকে গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যথাযথ ডেন্টিং-পেইন্টিং ও প্রয়োজনীয় মেরামত করে দৃষ্টিনন্দন অবস্থায় সড়কে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। উল্লেখিত তারিখের পর সড়কে জরাজীর্ণ দৃষ্টিকটু গণপরিবহন চলাচল করলে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

একই মাসে বিআরটিএ’র আরেকটি সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তিতে গণপরিবহন মালিক, চালক ও কন্ডাক্টরদের উদ্দেশে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান অবস্থায় গাড়ির দরজা বন্ধ রাখতে হবে, নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া গাড়ি থামানো যাবে না, গণপরিবহনে বিশেষ করে বাসে দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও সহকারীর ছবিসহ নাম এবং চালকের লাইসেন্স ও মোবাইল নম্বর প্রদর্শন করতে হবে। একই সঙ্গে মহাসড়কে চলমান সব দূরপাল্লার বাসের চালকের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সিটবেল্ট ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্ব-স্ব পরিবহন কোম্পানিকে বাসে সিটবেল্ট সংযোজন করতে হবে। এসব নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

বিআরটিএ’র এমন সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বেঁধে দেওয়া সময় পার হলেও তা বাস্তবায়নের কোনো নমুনা দেখা যায়নি সড়ক ও মহাসড়কের গণপরিবহনগুলোতে। ৩০ সেপ্টেম্বরের পরও রাজধানীতে রঙচটা, লক্কড়-ঝক্কড় গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। ফিটনেস সনদ থাকায় অধিকাংশ গণপরিবহনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হলেও কোনো গণপরিবহনেই দেখা যায়নি চালক ও সহকারীর ছবি। এমনকি দূরপাল্লার গণপরিবহনে যাত্রীর সিটবেল্ট সংযোজনের নির্দেশ থাকলেও সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি। আর আদেশ অমান্য করায় এ-সংক্রান্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে মাঠেও দেখা যায়নি বিআরটিএ-কে।

বিআরটিএ’র বিজ্ঞপ্তি দুটির বিষয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গণপরিবহনের সৌন্দর্য বর্ধন ও দূরপাল্লার বাসে যাত্রীদের সিটবেল্ট সংযোজন সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা তারা জানেন না।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর-খিলগাঁও রুটে চলাচলকারী মিডলাইন পরিবহনের চালক আমিনুল ইসলাম বলেন, গাড়িতে ভাড়ার চার্ট লাগানোর নির্দেশ আছে, সেটা আমরা লাগিয়ে রেখেছি। কিন্তু আমাদের লাইসেন্স, মোবাইল নম্বরসহ ছবি লাগিয়ে রাখার বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনার কাছেই প্রথম শুনছি।

রাজধানীর কাঁটাবন সিগন্যালে দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সার্জেন্ট আবুল কাশেম বলেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও রঙচটা, লক্কড়-ঝক্কড় এমন বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আর ভাড়ার তালিকা বাসের ভেতর লাগানোর ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আছে জানি; কিন্তু অন্য বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত আছে আর না মানলে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে বিষয়েও আমরা কিছু জানি না।

অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম কাজল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাসের দৃশ্যমান জায়গায় ড্রাইভার, হেলপারের ছবিসহ লাইসেন্স নম্বর লাগানোর বিষয়ে বিআরটিএ থেকে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এমনকি দূরপাল্লার বাসের যাত্রীদের সিটবেল্ট সংযোজনের বিষয়েও কোনো অর্ডার আমার জানা নেই। আসলে বিআরটিএ কখন কী নির্দেশ দেয়, সেগুলো তারাও মনে রাখে না। মাঝে মধ্যে পত্রিকায় কিছু বিজ্ঞপ্তি দেখি; কিন্তু সে বিষয়ে আমাদের ডেকে কিছুই তারা বলে না।

বিআরটিএ’র সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের উপপরিচালক মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টদের আমরা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দিই। পাশাপাশি চিঠির মাধ্যমেও তাদের অবগত করা হয়। এখন কেউ যদি বলে তারা কোনো নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না, তাহলে এটা তাদের দায়িত্ব পালন না করার অজুহাত।

তিনি বলেন, নির্দেশনা অমান্য করার দায়ে বিআরটিএ নিয়মিত আইন প্রয়োগ করছে। আমাদের ধারাবাহিক যেসব ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করে, সেগুলোর মাধ্যমেই আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। আলাদাভাবে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads