• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
পুরান ঢাকায় অভিযান অব্যাহত

রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম উচ্ছেদে গতকাল রাজধানীর হাজারীবাগে অভিযান চালায় ডিএসসিসির টাস্কফোর্স

ছবি : বাংলাদেশের খবর

মহানগর

২৯ গোডাউনের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

পুরান ঢাকায় অভিযান অব্যাহত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০১৯

পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম উচ্ছেদে একসঙ্গে পাঁচ জায়গায় অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টাস্কফোর্স। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত একযোগে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার, সিদ্দিকবাজার, হাজারীবাগ, তাঁতীবাজার ও চকবাজার এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ২৯টি কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক গোডাউনের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় এ তথ্য জানান।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরিফ আহমেদের নেতৃত্বে একটি দল গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চকবাজারের হরনাথ ঘোষ রোডে অভিযান চলায়। অভিযানের শুরুতেই হরনাথ ঘোষ রোডের ৯৫/৫ নম্বর হোল্ডিংয়ে একটি একতলা বাড়ির সামনের অংশে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের একটি গুদাম পান তারা। পরে ওই গুদামের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

বাড়ির মালিক হাজি মোহাম্মদ আলমাস সাংবাদিকদের বলেন, মাসে আট হাজার টাকায় বাকের হোসেন নামের একজনকে বাড়ির সামনের অংশ গুদাম হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। পরে তাকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়। এই গুদাম তুলে দিলেই বাড়ির ওই অংশের জন্য পুনরায় বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানান উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা।

ওই রোডের আরেক বাড়িতে রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের গুদামের পাওয়া গেলে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আগেই মালামাল সরিয়ে নেয় মালিকপক্ষ। এরপর কে বি রুদ্র রোডেও একটি বাড়িতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।

ডিএসসিসির টাস্কফোর্স টিমের সঙ্গে থাকা ডিএসসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আজো (গতকাল) চকবাজারের বিভিন্ন আবাসিক ভবনে অভিযান চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি প্লাস্টিক ও কসমেটিকস গোডাউনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

টাস্কফোর্সের টিম-৩ অভিযান পরিচালনা করে পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার থেকে সিদ্দিকবাজার পর্যন্ত। অভিযানে এই এলাকার ৭টি ভবনের ৩টি সিলিন্ডারের দোকান এবং ৩টি কেমিক্যালের গোডাউন ও প্লাস্টিক কারখানার গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন ডিএসসিসির টাস্কফোর্স সদস্যরা।

এ বিষয়ে বংশাল থানার ওসি সাহিদুর রহমান জানান, সিদ্দিকবাজারের হাজি ওসমান গনি রোডে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৭টি সিলিন্ডার, প্লাস্টিক ও কেমিক্যালের দোকানের সব ধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর আগে তাদের সতর্ক করা হলেও কেউ মালামাল স্থানান্তর করেননি।

পুরান ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ অভিযান চালায় টাস্কফোর্সের আরেকটি টিম। এই টিমের নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্ণা শিরিন। ডিএসসিসির কর্মকর্তা জুনায়েদ আমিন জানান, হাজারীবাগ এলাকায় ৮টি আবাসিক ভবনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেখানে রঙের গোডাউন ছিল। ওই ৮টি ভবনে থাকা গোডাউনের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

টাস্কফোর্সের অপর একটি টিম পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকায় অভিযান চালায়। এই এলাকার ৭টি আবাসিক ভবনে থাকা প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল গোডাউনের গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। টিমের পরিচালক ডিএসসিসির কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান জানান, তাঁতীবাজার এলাকার ৭টি কারখানার গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্যাটারির কারখানা ছিল।

টাস্কফোর্সের এই অভিযানগুলোতে ডিএসসিসি কর্মকর্তাসহ বিস্ফোরক অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ঢাকা ওয়াসা ও ডিপিডিসি, ফায়ার সার্ভিস এবং সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের প্রাণহাণির পর পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিকের গুদাম সরাতে সময় বেঁধে দেয় সরকার। চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে অন্তত পাঁচটি ভবন পুড়ে যায়, যেগুলোতে প্লাস্টিক দ্রব্য, রাসায়নিক কিংবা প্রসাধন সামগ্রীর গুদাম ছিল।

নয় বছর আগে নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির পরও পুরান ঢাকার সব রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছিল। উদ্যোগ নেওয়া হলেও ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতায় তা সম্ভব হয়নি বলে সরকারের ভাষ্য।

চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের পর সরকার আবারো উদ্যোগ নিলে প্রথম দিনই আপত্তি তোলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ভবন মালিকদের অনেকে। গত রোববার লালবাগের শহীদনগর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তাদের প্রায় দুই ঘণ্টা একটি প্লাস্টিক কারখানায় অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তার আগের দিনও অভিযান চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন টাস্কফোর্সের সদস্যরা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads