• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

করোনা রোগীদেরও ঠাঁই নেই

ঢাকার বড় বড় হাসপাতালের আইসিইউ’র অবস্থা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০২০

আবারো সরকারিভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সবগুলো শয্যায় রোগী রয়েছেন। কোনো শয্যা খালি নেই। গতকাল সোমবার করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জটিল রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, করোনা রোগীদের শতকরা ৮০ শতাংশের মধ্যে মৃদু লক্ষণ দেখা দেয়। তাদের হাসপাতালে যেতে হয় না। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশের উপসর্গ তীব্র হয় এবং হাসপাতালে যেতে হয়। বাকি ৫ শতাংশের অবস্থা থাকে জটিল, তাদের আইসিইউ বেডের পাশাপাশি দরকার হয় ভেন্টিলেটর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) থাকা যথাক্রমে ১৬ শয্যা, ১০ শয্যা, ১০ শয্যা এবং ১৬ শয্যার প্রতিটিতে রোগী ভর্তি আছেন। কোনো শয্যা ফাঁকা নেই।

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই রোগী শনাক্তের হার চলে যায় ২০ শতাংশের ওপরে। এ অবস্থা চলতে থাকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে থাকে। প্রায় এক মাসের বেশি সময় শনাক্তের হার ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে গত ২ নভেম্বর রোগী শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশে।

সংক্রমণের মাঝের সময় জুন-জুলাইয়ের দিকে আইসিইউ না পেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে এসেছে। তারপর থেকে সংক্রমণের হার কমার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা এবং সাধারণ শয্যা ফাঁকা হতে শুরু করে। শয্যা ফাঁকা থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল কমিয়ে আনে। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোর আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে। আইসিইউতে রোগী কেন বাড়ছে, জানতে চাইলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম বলেন, ‘ভাইরাস আগের চেয়ে আরো বেশি তীব্রতা নিয়ে আক্রমণ করছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।’ ‘আবার ঢাকার বাইরে থেকেও জটিল রোগীদের এখানে রেফার করা হচ্ছে। কারণ, ঢাকার বাইরে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা তত উন্নত না’, যোগ করেন তিনি। ঢাকার সরকারি আইসিইউ শয্যাগুলোর অধিকাংশই ফাঁকা থাকে না জানিয়ে ডা. শাহজাদ হোসেন বলেন, ‘আবার বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সবার পক্ষে এফোর্ট করাও সম্ভব হয় না।’

অপরদিকে, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা রয়েছে ১৬টি, তাতে রোগী আছেন ১০ জন, ফাঁকা রয়েছে ছয়টি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ২৪টি শয্যা, রোগী আছেন ১৭ জন, ফাঁকা সাতটি। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ১৫টি, রোগী আছেন ১৪ জন, ফাঁকা রয়েছে একটি। অর্থাৎ সরকারিভাবে থাকা ১১৩টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ৯৭ জন আর ফাঁকা রয়েছে মাত্র ১৬টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ১০, রোগী আছেন পাঁচজন। আসগর আলী হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৩২, রোগী আছেন ২৪ জন। স্কয়ার হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৫, রোগী আছেন ১৪ জন। ইবনে সিনা হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ছয়টি, রোগী আছেন চারজন। ইউনাইটেড হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২২, রোগী আছেন নয়জন। এভার কেয়ার হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২০, রোগী আছেন ১৮ জন। ইম্পালস হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২৫, রোগী আছেন আটজন। এ এম জেড হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ২১, রোগী আছেন আটজন এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১২টি, প্রতিটিতেই রোগী আছেন। বেসরকারি এসব হাসপাতালে মোট আইসিইউ সংখ্যা ২৮৬টি, রোগী আছেন ১৯৯ জন, শয্যা ফাঁকা রয়েছে ৮৭টি। অপরদিকে, সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য মোট আইসিইউ রয়েছে ৫৬৮টি, এতে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ২৯৭ জন আর শয্যা ফাঁকা রয়েছে ২৭১টি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads