• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
দশ বছরে দেড় হাজার প্রাণ গেছে আগুনে

দশ বছরে দেড় হাজার প্রাণ গেছে আগুনে

সংরক্ষিত ছবি

দুর্ঘটনা

দশ বছরে দেড় হাজার প্রাণ গেছে আগুনে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০১৯

গত ১০ বছরে সারা দেশে ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ১ হাজার ৫৯০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অগ্নিঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ পুরান ঢাকা শীর্ষক গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এই গণশুনানির আয়োজন করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বেলা, ব্লাস্ট, ব্র্যাক, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট, এএলআরডি এবং নিজেরা করি নামক সংগঠন।

বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। সে ঘটনায় একই পরিবারের ১১ জন প্রাণ হারান। নিমতলীর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে ওই এলাকার রাসায়নিক মজুতকে চিহ্নিত করে এবং পুরান ঢাকার সব আবাসিক ভবন থেকে রাসায়নিক দোকান কারখানা গুদাম উচ্ছেদের সুপারিশ করে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে আরো ৭১ জনের প্রাণহানি হয়। বিভিন্ন মহল থেকে দোষী ব্যক্তির শাস্তির আশ্বাস মিললেও এখনো তা দৃশ্যমান হয়নি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের নগর ও পরিবেশ সম্পাদক ড. ফরিদা নিলুফা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পুরান ঢাকা সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া গড়ে উঠেছে। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী এসব ভবনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে সবাইকে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে।

বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া বলেন, অগ্নিকাণ্ডের মতো যখন ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমরা শর্ট টার্ম, লং টার্ম পরিকল্পনার কথা না ভেবে তাৎক্ষণিক সবকিছু করে ফেলতে চাই। কিন্তু নিরাপত্তাবিষয়ক জনসচেতনতা আগে তৈরি করতে হবে। এরপর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কার্যকর করতে হবে সঠিকভাবে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে একটা জায়গায় আমাদের আসতে হবে।

গণশুনানিতে অংশ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, পুরান ঢাকা থেকে ক্ষতিকর, ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে ৩৫টি ক্ষতিকর দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যেন পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকায় না থাকে সেজন্য টাস্কফোর্স কাজ করছে। আমাদের এটাও ভাবতে হবে ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ তাদের দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা আশা করছি পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে খুব শিগগির ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নিতে পারব।

মেয়র বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা অসহায় বা যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছেন, তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ডিএসসিসিতে আবেদন করলে আমাদের আওতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব তাদের চাকরির ব্যবস্থা আমরা করব।

গণশুনানিতে বক্তারা বলেন, নিমতলীর পর চুড়িহাট্টায় ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা প্রমাণ করে নিমতলী থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। তদন্ত কমিটিগুলোর কোনো প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি, এমনকি আদালতেও দাখিল করা হয়নি। কমিটিগুলোর সুপারিশ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হয়নি ফলে নিরাপদ পল্লী স্থাপনের প্রক্রিয়া অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিলম্বিত হয়েছে। কোনো রকম অনুমোদন, লাইসেন্স ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই পুরান ঢাকায় এখন পরিচালিত হচ্ছে হাজার হাজার বিস্ফোরক ও রাসায়নিক গোডাউন ও গুদামঘর।

 

তারা বলেন, আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের এমন বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তা কার্যকরভাবে বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে। লোভ ও অব্যবস্থাপনার কাছে জিম্মি রয়েছে পুরান ঢাকার লাখ লাখ বাসিন্দা।

মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ, ব্লাস্ট অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আবদুস সালামসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads