• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯

দুর্ঘটনা

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা: দশ মাসে নিহত ১০২৬

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ নভেম্বর ২০২০

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার প্রেমিকা মমতা হিয়া সুকর্না ও দেলদুয়ার উপজেলার আকতারের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে তারা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। গত ১০ নভেম্বর রাতে তারা মোটরসাইকেলযোগে বের হন। তাদের সহায়তার জন্য বাপ্পিও সাথে থাকেন। এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-আরিচা মহাসড়কের সহবতপুর দাসপাড়া (মুচি) মোড়ে এ বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনেরই মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক এ এ দুর্ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শুধু এটাই নয়, বর্তমানে আশঙ্কাজনক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারি এক এনজিওর হিসাবে গত ১০ মাসে নিহতের সংখ্যা ১০২৬।  কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, দেশে অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয় ও ব্যবহারে বাধাহীন সংস্কৃতি ও সহজলভ্যতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা। দুর্ঘটনার রোধের সুপারিশ হিসেবে কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সূত্রমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে এক হাজার ১১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক হাজার ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরো  ৪১৭ জন। নিহতদের মধ্যে ৭২৪ জনের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছর। তাদের ৩৭ জন শিক্ষক এবং ৩০৮ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ১২৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে। রোড সেফটির পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ১৫৬টি (১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ), মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৭৮টি (৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ), মোটরসাইকেলের পেছনে অন্য যানবাহনের ধাক্কা ও চাপা দেওয়ার ঘটনা ৩৫৩টি (৩৪ দশমিক ৯১ শতাংশ) এবং পথচারীকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ১২৪টি (১২ দশমিক ২৬ শতাংশ)।

৩৭৮টি (৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক নিজেই এককভাবে দায়ী।

দুর্ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী বাস ১২৩টি (১২ দশমিক ১৬), ট্রাক ৩০৪টি (৩০ দশমিক ০৬ শতাংশ), কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৭৯টি (৭ দশমিক ৮১ শতাংশ), থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-অটোরিকশা-সিএনজি-নসিমন-করিমন-ভটভটি) ৫৭টি (৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ), বাই-সাইকেল ৫টি (শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ)। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মোটরসাইকেলের সংখ্যা এক হাজার ৭৬টি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৩৯৮টি (৩৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ৩৬৯টি (৩৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ১২৮টি (১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ১১৬টি (১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে সকালে ২৫ দশমিক ০২, দুপুরে ২০ দশমিক ১৭ শতাংশ, বিকালে ২৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ এবং রাতে ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, দেশে অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয় ও ব্যবহারে বাধাহীন সংস্কৃতি ও সহজলভ্যতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা, বাস-ট্রাক-পিকআপ-প্রাইভেটকার-মাইক্রোসহ দ্রুতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা, ইজিবাইক-সিএনজি-নসিমন-করিমন ইত্যাদি স্বল্পগতির যানবাহন অপরিকল্পিত ও অদক্ষ হাতে চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা, পারিবারিকভাবে সন্তানদের বেপরোয়া আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া ও উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে কলুষিত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা।

অন্যদিকে দুর্ঘটনার রোধে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত গতিসম্পন্ন মোটরসাইকেল উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। গণপরিবহন চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে। বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মহাসড়কে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন তৈরি করতে হবে এবং স্বল্পগতির স্থানীয় যানবাহন বন্ধ করতে হবে। স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য মহাসড়কের পাশাপাশি সার্ভিস রোড নির্মাণ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সকল সড়ক-মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে। গণপরিবহন উন্নত করে মোটরসাইকেলকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। রেল ও নৌপথ সংস্কার এবং বিস্তৃত করে সড়ক পথের ওপর থেকে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের মতো পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমাতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮; এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads