• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
মিয়ানমারে প্যাগোডা ও মাঠে লাশের স্তূপ

সংগৃহীত ছবি

এশিয়া

মিয়ানমারে প্যাগোডা ও মাঠে লাশের স্তূপ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১১ এপ্রিল ২০২১

মিয়ানমারে অন্তত ৬০ বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গড়ে তোলা ব্যারিকেড অপসারণ করতে গিয়ে মধ্যাঞ্চলীয় শহর বাগোতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। প্রাচীন এই শহরটির প্যাগোডা ও স্কুলের খেলার মাঠে মরদেহ স্তূপ করে রেখেছে জান্তা সরকারের বাহিনী। এ নিয়ে দেশটিতে গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১৮ জনে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষকে। খবর : বিবিসি ও সিএনএনের

এছাড়া এক সামরিক কর্মকর্তার সহযোগীকে হত্যার অভিযোগে ১৯ বেসামরিক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকারের আদালত। এদিকে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগে মিয়ানমারকে ‘নো ফ্লাই জোন’ (উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা) ঘোষণা ও দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রতিনিধি। সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শুক্রবার মিয়ানমারের বাগো শহরে গুলিবৃষ্টি চালিয়েছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। প্রায় আড়াই লাখ মানুষের বাগো শহরটিতে শুক্রবার সন্ধ্যা নামার আগেই অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগো শহরের এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের মানুষেরা বুঝতে পেরেছিল তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) আসতে পারে। আর এজন্য রাতভর অপেক্ষা ছিল। সেনাসদস্যরা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। আমরা মর্টারশেলও পেয়েছি। মেশিনগান দিয়েও প্রচুর গুলি করা হয়েছে। তাজাগুলি ছাড়াও সেনাসদস্যরা গ্রেনেড লাঞ্চারও ব্যবহার করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত মাত্র তিনটি মরদেহ উদ্ধার করতে পেরেছেন তারা। এছাড়া জিয়ামুনি প্যাগোডা এবং কাছের একটি স্কুলে স্তূপ করে রাখা মরদেহ সরিয়ে নিচ্ছে সেনাবাহিনী। বাগো শহরের এই রক্তক্ষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি মিয়ানমারের সেনা সরকার। এছাড়া এক সামরিক কর্মকর্তার সহযোগীকে হত্যার অভিযোগে গত শুক্রবার ১৯ বেসামরিক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির জান্তা সরকারের আদালত।

দেশটির সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন মিওয়াদ্দি টেলিভিশনে জানানো হয়, সামরিক আদালতের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গত মাসে ইয়াঙ্গুনের উত্তর ওক্কালাপা জেলায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনকে মারধর এবং নির্যাতন করে তার এক সহযোগীকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এরপর ওই জেলায় সামরিক আইন জারি করা হয়। ফলে সেখানে সামরিক আদালত পরিচালনায় কোনো বাধা ছিল না। তবে মৃত্যুদণ্ড পাওয়াদের মধ্যে বর্তমানে ১৭ জনই পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী একজন কিশোরীও রয়েছে।

 

এদিকে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ প্রয়োগে মিয়ানমারকে নো ফ্লাই জোন (উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা) ঘোষণা ও দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রতিনিধি। শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে কিয়াও মোয়ে তুন বলেন, মিয়ানমারে শিশুসহ শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পরও হত্যা বন্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চলমান অরাজকতা বন্ধ এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তাৎক্ষণিক ও শক্ত ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

বেসামরিক এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনীর বিমান অভিযান চলছে। আরো রক্তপাত এড়াতে অঞ্চলগুলোকে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা উচিত। সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।

রেডিও ফ্রি এশিয়া জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুনসহ বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা চলছে। বিক্ষোভকারীদের তৈরি করা ব্যারিকেড ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনরত মানুষের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে পুলিশ। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিক্ষোভ দমনের লক্ষ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণে নিহত ছয় শতাধিক মানুষের মধ্যে অন্তত ৪৩ শিশু ছিল। যদিও শিশুহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাও মিন তুন বলেন, বাড়িতে ঢুকে শিশুদের ওপর সেনাসদস্যরা কখনোই গুলি চালাবে না। যদি এমন কিছু ঘটে থাকেও তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদেক চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে সীমান্তপথে ভারতে অনুপ্রবেশ করছে মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক নাগরিক। ভারতের মণিপুরে সীমান্ত অঞ্চলে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের মিয়ানমার থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের ভালোভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক জনরোষের মুখে দ্বিতীয় একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। এতে মিয়ানমার থেকে আসা আহত আশ্রয়প্রার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ সব ধরনের মানবিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক বছরের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে। তখন থেকে প্রায় প্রত্যেকদিন গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads