• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
কলা আর পান ঝিনাইদহের প্রাণ

ঝিনাইদহের পান ও কলার খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে

সংরক্ষিত ছবি

সারা দেশ

কলা আর পান ঝিনাইদহের প্রাণ

  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৮

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

খুলনা বিভাগের প্রবেশদ্বার বলে খ্যাত ঝিনাইদহ জেলা ভৌগোলিক কারণেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ঝিনাইদহের পূর্বে মাগুরা, পশ্চিমে চুয়াডাঙ্গা, উত্তরে কুষ্টিয়া আর দক্ষিণে যশোর জেলা। সমৃদ্ধিশালী ঝিনাইদহে জন্মেছেন মরমি কবি পাগলাকানাই, লালনশাহ, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বিপ্লবী বাঘাযতীন, গণিতবিদ কেপি বসু, কবি গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। কালীগঞ্জের বারোবাজারে রয়েছে বারোজন আউলিয়ার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে অসংখ্য মসজিদ, গাজী-কালু-চম্পাবতীর মাজার, হরিণাকুণ্ডুতে উৎপাদিত জগদ্বিখ্যাত পান। এছাড়া রয়েছে কলা আর খেজুরগুড়, চিত্রা, কপোতাক্ষ নদের মতো বহু নদ-নদী আর সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। ১৮৬০-৬১ সালের দিকে প্রশাসনিক মহকুমা হিসেবে আত্মপ্রকাশকারী ঝিনাইদহ কাজ শুরু করে। ১৮৬৩ সালের পর থেকে পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের এক দশক পর্যন্ত মহকুমা থাকার পর ১৯৮৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলায় উন্নীত হয়। 

সুস্বাদু এবং মিষ্টি হিসেবে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উৎপন্ন হওয়া পান ও কলার খ্যাতি রয়েছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহের মাটি ও আবহাওয়া কলা চাষের উপযোগী হওয়ায় এই জেলার কৃষকরা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। জেলায় প্রতিবছর প্রায় এক লাখ টন কলা উৎপন্ন হয়। অন্য জেলার চেয়ে ঝিনাইদহের মাটিতে উৎপাদিত মিষ্টি পানেরও ব্যাপক কদর রয়েছে দেশে-বিদেশে। যে কারণে গত বছর জেলা প্রশাসন ‘কলা আর পান ঝিনাইদহের প্রাণ’—এই স্লোগান নিয়ে কলা আর পানকে ঝিনাইদহ জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য ঘোষণা করেছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, খেতে সুস্বাদু হওয়ায় ঝিনাইদহের পান ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর ১০টি দেশে রফতানি হচ্ছে এবং বছরে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আয় হচ্ছে কৃষকদের। ২০১২-১৩ সালে জেলায় ১ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হলে মোট পান উৎপাদন হয় ১৯ হাজার ৭৪ টন। ২০১৩-১৪ সালে জেলায় ১ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হলে ওই বছর মোট পান উৎপাদন হয় ২০ হাজার ৩৪২ টন। ২০১৪-১৫ সালে ২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয় ২২ হাজার ১০৮ টন। ২০১৫-১৬ সালে ২ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয় ২৬ হাজার ৩৬৩ টন। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ সালে জেলায় ২ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে মোট ২৪ হাজার ৪০৪ টন পান উৎপাদন হয়।

অপরদিকে গত পাঁচ বছরে ঝিনাইদহে কলা চাষের হিসাবে জানা যায়, ২০১২-১৩ সালে জেলার ৬ উপজেলায় ৪ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে কলার ফলন হয় ৭৯ হাজার ৭৫ টন। ২০১৩-১৪ সালে ৫ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে কলার ফলন হয় ৯০ হাজার ৯০ টন কলা। ২০১৪-১৫ সালে জেলার ৪ হাজার ৯০৭ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয় এবং ওই বছর ফলন হয় ৯১ হাজার ২৭০ টন। ২০১৫-১৬ সালে জেলার ৪ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে ফলন হয় ৯৫ হাজার ৭৬৫ টন কলা। ২০১৬-১৭ সালে জেলার ৫ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে ফলন হয় ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮ টন কলা। উল্লেখ্য, এ জেলায় চাঁপা কলা, শরবি কলা, ঠোঁটো কলা ও কাঁচ কলার চাষ হয় বেশি।

জেলার বৃহৎ কলা ও পানের বাজার মধুপুর। নির্দিষ্ট দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই কলা বেচাকেনা হয় এখানে। এ বাজারের জনপ্রিয়তার কারণে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানের কলা ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন কলা কেনার জন্য। অপরদিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ প্রধান সড়কের পাশে দীর্ঘ দিনের পানের সমৃদ্ধ বাজার লক্ষ্মীপুর। দেশের বড় বড় পান ব্যবসায়ী সপ্তাহে দু’দিন এ বাজারে এসে পাইকারি পান কিনে নিয়ে যান।

জানা যায়, জলবায়ু ও মাটির অনুকূল অবস্থা কাজে লাগিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কারিগরি সহায়তায় এ জেলার কৃষকরা কলার উৎপাদন প্রতিবছরই বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন। অপরদিকে পানচাষিদের কাছে নিজেদের ব্যাংক হিসেবে পরিচিত একেকটি পানের বরজ। একজন কৃষক যদি প্রতিদিন বরজ থেকে ৮০টি পান তুলে বাজারে বিক্রি করেন, তাহলে তার সংসার চলে যায়। জেলার হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহ সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় বেশি পরিমাণের পান চাষ করা হয়। এ এলাকার পানগুলো সুস্বাদু হওয়ায় শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু ও মহেশপুরে চাষ বেড়েছে। জেলার পানচাষিদের মতে, পান মানে সোনার পাতা। একটি পাতার দাম ২-৩ টাকা। কোনো কৃষক যদি তার এক বিঘা জমিতে পান চাষ করেন, তাহলে বছরের সব খরচ বাদ দিয়ে সহজেই ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

এক নজরে ঝিনাইদহ জেলা

মোট ১ হাজার ৯৪৯ দশমিক ৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ৬টি উপজেলায় ৬৭৭টি ইউনিয়ন, প্রতি উপজেলায় একটি পৌরসভার আদিবাসীসহ সর্বমোট জনসংখ্যা ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৩০৪, যার মধ্যে ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৯০২ জন নারী। এ জেলায় বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১৩। জেলার মানুষের গড় আয়ু ৬৯ বছর। ১২টি নদীর সবকটিই নাব্য হারিয়েছে। এর আয়তন ১ হাজার ৬৪১ দশমিক ৭১ হেক্টর। এছাড়া ১০৪টি বিলের আওতায় ১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর, ৩৫টি বাঁওড়ের আওতায় ১ হাজার ৮৮৯ হেক্টর, ৪৩টি খালের আওতায় ৩৫৯ দশমিক ৪০ হেক্টর এবং ২৭ হাজার ৬৪৯টি পুকুরের আওতায় রয়েছে ৩ হাজার ৪৭৩ দশমিক ৪৩ হেক্টর জলাশয়। জেলা শহরে আছে একটি মৎস্য খামার। একটি বিসিক শিল্পনগরী আর একটিমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে ঝিনাইদহ জেলায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চারটি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, সাতটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ছয়টি সরকারিসহ ৫০টি কলেজ, একটি ক্যাডেট কলেজ, একটি আইন কলেজ, ২৫০টি মাধ্যমিক ও এনজিও পরিচালিত ২০০টি স্কুল, ১১৬টি মাদরাসা, ৮৩৩টি সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় জেলাপর্যায়ে একটি সদর হাসপাতাল, সদর ছাড়া পাঁচ উপজেলায় একটি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, একটি মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, ৫৯টি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ ক্লিনিক, ১৬৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি চক্ষু হাসপাতাল, একটি শিশু হাসপাতাল ও ৭৯টি প্যাথলজিক্যাল সেন্টার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads