• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
ঐতিহ্যবাহী ঝাপান ও লাঠিখেলা

সাপনির্ভর এ খেলার প্রধান আকর্ষণ হলো বড় আকারের সব গোখরা সাপ

সংরক্ষিত ছবি

সারা দেশ

ঐতিহ্যবাহী ঝাপান ও লাঠিখেলা

  • ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৮

দিনে দিনে আমরা প্রবেশ করছি আধুনিক সভ্যতার যুগে। এখন প্রযুক্তিই মানুষের মনন দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ফলে স্বাভাবিক কারণেই আমাদের কাছ থেকে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কিছু খেলাধুলা বা বিনোদন কর্মকাণ্ড হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় এসবের গুরুত্ব এত বেশি ছিল যে, বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের দিনে আমরা তার প্রয়োজন অনুভব করি ও স্মৃতি রোমন্থন করি। তেমনি দুটি খেলা আজ আমাদের সমাজ ও দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে শুধু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও লালনের অভাবে। অথচ এই দুটি খেলা আমাদের দেশকে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে এনে দিতে পারে অমূল্য সম্মান আর খ্যাতি। প্রাচীন জমিদাররা তাদের শক্তি প্রদর্শন ও লাঠির কলাকৌশল দেখানোর জন্য ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে সাঁওতাল, বুনো, বাগ্দি সম্প্রদায়ের লোক এনে নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন চালাত আর তা করা হতো যখন কোনো কৃষক নীলচাষ করতে অনাগ্রহ দেখাত। ওইসব সাঁওতাল, বুনো, বাগ্দি সম্প্রদায়ের লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও যেহেতু নিম্নবর্ণের ছিল, তারা দরিদ্র ও সাধারণ কৃষকদের সঙ্গে সখ্য গড়তে থাকে। একসময় তাদের মধ্যে বন্ধুত্বও জন্মায়। তাদের কাছ থেকেই কৃষকরা লাঠিখেলা নামক বাঁশের লাঠির ব্যবহার শিখে নেয় বলে বর্ষীয়ানদের কাছে জানা যায়।

ঝাপান খেলা : ঝাপান খেলাও আমাদের দেশের একটি প্রাচীন খেলা। সাপনির্ভর এ খেলার প্রধান আকর্ষণ হলো বড় আকারের সব গোখরা সাপ। অসংখ্য সাপ নিয়ে দুজন ওঝা কোনো মঞ্চে উঠে যখন সাপের খেলা দেখান, তাকেই ঝাপান খেলা বলা হয়ে থাকে। ঝিনাইদহের দুধসর গ্রামের প্রাচীন দুই ওঝা জয়া বাগদি আর শৈলকুপার নবাব আলীর (নবা সাপুড়ে) নাম মানুষের হূদয়ে গাঁথা থাকবে যুগের পর যুগ। এই দুই সাপুড়ের সাপ যেন তাদের চোখে চোখ রেখে দুলত, নাচত, কথা বলত, খেলত। তিন হাত থেকে পাঁচ-ছয় হাত লম্বা গোখরা সাপ দেখে দর্শক চমকে উঠত। আর খেলার সময় হাজারো করতালিতে মুখরিত থাকত মঞ্চ। গুণী ওই দুই সাপুড়ের মৃত্যুর পর তাদের উত্তরসূরিরা প্রতিষ্ঠা পায়নি। হরিণাকুণ্ডুতে বেশ কয়েকজন সাপুড়ের নাম শোনা গেলেও এখন আর ঝাপান খেলা বড়মাপের ওঝার অভাবে আগের মতো সাড়া জাগাতে পারছে না বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।

লাঠিখেলা : জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর এলাকার ধনাঢ্য, জোতদার হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ নিজেদের আধিপথ্য বজায় রাখতে স্থানীয়দের দিয়ে লাঠিয়ালের কাজ করাত। দিন বদলাতে বদলাতে এখন লাঠিয়ালের কাজটি লাঠিখেলা হিসেবে একটি শিল্পে রূপ নেয়। এখনো দেশের বেশকিছু এলাকায় লাঠিখেলা জনপ্রিয় ও ঐতিহ্য বলেই ধরে নেওয়া হয়। শৈলকুপার কবিরপুর গ্রামের প্রায় শতবর্ষী শাহজাহান শেখ জানালেন, কোথাও লাঠিখেলার ঢোল আর কাঁসির শব্দ শুনলেই নারী-পুরুষ, শিশু সবাই ছুটে যেত। এমনকি খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নাওয়া-খাওয়াও থাকত না। ঝাউদিয়া গ্রামের বিশিষ্ট লাঠিয়াল মধু শেখের ছেলে ওসমান শেখ জানালেন, কদর না থাকায় তাদের সব লাঠি দিনে দিনে নষ্ট হয়ে গেছে, বাপের বানানো লাল-কালো রঙের পুরনো জামা-প্যান্ট এখনো বাক্সের মধ্যে গন্ধ ছড়াচ্ছে। ঘুগরি (ঝুমুরগুলো) এখন আর তাল তোলে না। লাঠিয়াল মধু শেখের ছেলে হিসেবে শুধু নামেই তিনি পরিচিত বলে জানালেন ষাটোর্ধ ওসমান শেখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads