• সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪২৯
মাজারের নামে দানবাক্স, বছরে বাণিজ্য ২ কোটি টাকা!

রূপগঞ্জ সদর উইনিয়নের মনু শাহ নামে এক মাজারের এক ভক্ত দাবক্সে দান করছেন

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

মাজারের নামে দানবাক্স, বছরে বাণিজ্য ২ কোটি টাকা!

  • রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়, পথেঘাটে কিংবা অফিসের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে লাল-কালো, গোল-চৌকানো ৪ শতাধিক দানবাক্স। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব দানবাক্স থেকে প্রতিদিন আয় হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সে হিসাবে পুঁজিবিহীন এই ধর্মীয় বাণিজ্যে বছরে আয় হয় প্রায় ২ কোটি টাকা। মাজারের উন্নয়ন ও পীরের সন্তুষ্টির নামেই চলছে এ দানবাক্স বাণিজ্য। তবে অভিযোগ রয়েছে, ওইসব দানবাক্সের দেখভালকারী খাদেমরাই দানের অর্থের বেশিরভাগ আত্মসাৎ করেন। মাজারের উন্নয়নের চেয়ে তাদেরই ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটছে দানের অর্থে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জের বিভিন্ন কাঁচাবাজার, চালের আড়ত, পীরের মাজার, মসজিদ-মাদরাসার প্রবেশপথ, নদীর ঘাট, বাস-বেবিট্যাক্সি-রিকশা স্ট্যান্ড কিংবা অফিসের সামনে টিনের তৈরি ছোট ছোট দানবাক্স ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলোর গায়ে বিভিন্ন পীরের নামে দান করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রূপগঞ্জে যেসব পীরের নামে দানবাক্স চালু রয়েছে তার মধ্যে ইয়ারউদ্দিন (র.), চন্দ্রপাড়া (র.), শাহবাবা ফরিদপুরি (র.), খাজা মঈনউদ্দিন চিস্তীয়া (র.), শর্ষিনা পীর (র.), বাবা মনু শাহ দরবার শরীফ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পীরের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মানস্বরূপ একশ্রেণির খাদেম এর দেখভাল করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ দানের অর্থ পীরের মাজার উন্নয়নে ব্যবহারের নজির খুবই কম। তারা জানান, ঘরের বাইরে বেরিয়ে মসজিদ, বাজার, স্টেশন, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ভাবাবেগে জনগণ এসব দানবাক্সে এক টাকা থেকে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত দান করেন। তবে দানের অর্থের বেশিরভাগই চলে যায় দানবাক্স চালুকারী ব্যক্তির পকেটে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের নবগ্রাম, গঙ্গানগর আধুরিয়া, গোলাকান্দাইল, ভুলতা, মুড়াপাড়া, রূপসী, কাঞ্চন, তারাবো, গন্ধবপুর, দিঘীবরাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব দানবাক্স রয়েছে। আধুরিয়া এলাকায়ই রয়েছে প্রায় ১০টির মতো দানবাক্স। যেসব পীর ও মাজারের নামে এই দানবাক্সগুলো তাদের কারোর অস্তিত্ব ছিল না রূপগঞ্জে। অথচ সবগুলোর টাকা তোলা হয় রূপগঞ্জ থেকে।

খাদেম ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুঁজিবিহীন ধর্মকেন্দ্রিক এই বাণিজ্যে দৈনিক এসব দানবাক্সে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পড়ে। ৫০ টাকা করে পড়লেও এই চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। মাস শেষে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরে বাণিজ্য হয় ২ কোটি টাকা। এর একটি টাকাও যায় না সরকারি কোষাগারে। আধুরিয়া এলাকার ইয়ারউদ্দিন (র.) দানবাক্সের খাদেম ফজলুল করিম বলেন, আমরা মাসিক বেতনে দায়িত্ব পালন করি। মাস শেষে একজন লোক এসে টাকাপয়সা নিয়ে যান। নাম জানতে চাইলে তিনি ওই ব্যক্তিকে চেনেন না বলে জানান। দাউদপুর এলাকার শর্ষিনা পীর (র.) দানবাক্সের খাদেম গোল মোহাম্মদ বলেন, আমাগো জিগাইয়া কোনো লাভ নাই। আমরা হুকুমের গোলাম।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এসব দানবাক্সের টাকা খাদেম, স্থানীয় হোমরাচোমরা ও প্রশাসনই পেয়ে থাকে। নামেমাত্র কোথাও কোথাও লোকদেখানো মাজারের উন্নয়ন বা পীরের সহযোগিতা করা হয়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক খাদেম বলেন, ‘কী করমু বাপ। বয়স অইছে। কামাই করবার পারি না। পোলারা খাওন দেয় না। হের লাইগ্যা এই ব্যবসা দরছি। একটা কিছু কইরা তো বাঁচন লাগব।’

এ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জ থানার ওসি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নেব।

একটি প্রতারকচক্র নিজেদের প্রয়োজনে ধর্মের দোহাই দিয়ে এই দানবাক্স বাণিজ্য করছে। ধর্মের নামে এই চাঁদাবাজিতে প্রতারিত হচ্ছে লাখ লাখ সরলপ্রাণ মানুষ। ধর্মই এ ব্যবসার মূল পুঁজি, যেখানে কোনো লোকসান নেই, শুধুই লাভ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads