• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
বাহরাইনে ভবনে ধসে নিহত চাঁদপুরের জাকির ও হান্নানের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

বাহরাইনে নিহত চাঁদপুরের কচুয়ার আব্দুল হান্নান (বামে) ও হাজিগঞ্জের মো. জাকির হোসেন প্রধানীয়

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

বাহরাইনে ভবনে ধসে নিহত চাঁদপুরের জাকির ও হান্নানের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

  • চাঁদপুর প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১২ অক্টোবর ২০১৮

বাহরাইনের মানামা সিটিতে গত ৯ অক্টোবরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ভবন ধসের ঘটনায় নিহত চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হান্নান ও হাজীগঞ্জের জাকির প্রধানিয়ার বাড়ীতে চলছে এখন শোকের মাতম।

আজ শুক্রবার (১২ অক্টোবর) সকালে হাজীগঞ্জের কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের জাকিরের বাড়িতে দেখা যায় শুনশান নীরবতা। মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। একই অবস্থা কচুয়ার পরানপুরের জাকির হোসেন প্রধানিয়ার বাড়ীতেও।

নিহত জাকির হাজীগঞ্জের কালোচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বকাউল বাড়ির আব্দুল রশিদ বকাউলের ছেলে। আর হান্নান কচুয়া উপজেলার কড়াইয়া ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের দক্ষিণ প্রধানিয়া বাড়ির ফজলুল হক প্রধানিয়ার ছেলে।

এদিকে জাকির কিংবা হান্নানের মরদেহ কবে কীভাবে দেশে আনা হবে এ বিষয়ে তাদের পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারছে না। তবে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে যদি নিহতের লাশ দেশে আনার ব্যবস্থা করে দিলে নিহত পরিবারের সদস্যরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

নিহতের স্বজনরা জানান, গত ৯ অক্টোবর বাহরাইনের মানামা সিটির কুমিল্লা হোটেলের বিপরীতে একটি ভবনে থাকতেন কয়েকশ বাংলাদেশি। এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিলেন হাজীগঞ্জের জাকির আর কচুয়ার হান্নান।        

নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জাকির ও তার অপর ভাই জুলহাস থাকতো একই রুমে। ঐ দিন সন্ধ্যা রাতে জাকিরকে রুমে রেখে বড় ভাই জুলহাস যায় বাজার করতে আর হান্নানের রুমমেটরা পাশের হোটেলে চা খেতে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব করলে হান্নানের শরীর খারাপ বলে রুমেই থেকে যায়। এর কিছু পরেই ঘটে ঐ দুর্ঘটনা।

জাকির প্রায় ৩ বছর আগে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন খাটরা বিলওয়াই গ্রামের আবদুল মালেকের মেয়ে লিপিকে বিয়ে করে। তাদের ঘরে কোনো সন্তান আসেনি। নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে জাকির দেশে আসার কথা ছিল।

হাজীগঞ্জের জাকিরের বাড়িতে দেখা যায় পরিবারের ছোট ছেলেকে হারিয়ে শোকের মাতম চলছে পুরো পরিবারে। জাকিরের স্ত্রী লিপিকে এখনো পর্যন্ত জানানো হয়নি জাকির মারা গেছে। পরিবার স্ত্রীকে জানিয়েছে জাকির সামান্য আহত হয়েছে হাসপাতালে ভর্তি আছে।

কচুয়ার নিহতের হান্নান প্রধানিয়ার গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল হাসেম জানান,  ফজলুল হক প্রধানীয়া ২ বিয়ে করেছিল। প্রথম ঘরে ৪ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে হান্নান দ্বিতীয়। তার বাবা-মা কেউ বেঁছে নেই। খুবই নিরীহ ও গরীব মানুষ। তার ৩ ছেলে। বড় ছেলে মাসুম ইসলাম হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের ছাত্র। দ্বিতীয় ছেলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। ছোট ছেলে ৯ম শ্রেণিতে পড়ে।

ওই ইউপ সদস্য আরো জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হান্নান। হান্নানকে হারিয়ে পুরো পরিবারটি পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

হান্নানের বড় ছেলে মাসুম ইসলাম জানান, আমার বাবাকে দেশে আনতে আমরা একেবারে অক্ষম। সরকার একটু সহযোগিতা করে তাহলে আমরা আমাদের বাবার লাশটি দেখতে পারবো।

হাজীগঞ্জের জাকিরের বাবা বয়োবৃদ্ধ আব্দুল বাসার জানান, ৬ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট  জাকির। প্রায় ১০ বছর হতে চললো ছেলে বিদেশ আছেছ। প্রায় আট বছর আগে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ধেররা গ্রামের আ. মালেকের মেয়ে লিপির সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে বছর তিনেক আগে সে দেশে এসেছিল। আগামী নভেম্বরে তার দেশে আসার কথা ছিল।

হাজীগঞ্জ উপজেলার কালোচোঁ দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, লাশ দেশে আনার সামর্থ্য নেই নিহতদের পরিবারের। সরকার লাশ আনার ব্যবস্থা করলে পরিবারগুলো অন্তত লাশ দেখতে পারতো।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads