রানীনগর ও আত্রাই- এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ততই আতঙ্ক বাড়ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। সরকারি দলের হামলার ভয়ে মাঠে নামতে পারছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছাড়ছেন তারা। নির্বাচনে প্রচার ও গণসংযোগের সময় আ.লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে বাধা, হামলা ও ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন এ আসনের বিএনপি প্রার্থী সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর।
জানা গেছে, প্রতীক বরাদ্দের আগ থেকেই এলাকায় আ.লীগের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। বিএনপি চূড়ান্তভাবে আলমগীর কবীরকে মনোনয়ন দিলেও দলের মধ্যে বিভেদ থাকায় প্রচারণা শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হয়। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীদের টানানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। দিনের বেলায় পোস্টার লাগানো হলেও রাতেই ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। গণসংযোগের সময় বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
বিএনপির অভিযোগ, রাতের আঁধারে বিএনপির নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে মারপিট করা হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে এ দুই উপজেলার কয়েকশ নেতাকর্মী পুলিশি গ্রেফতার এড়াতে গ্রাম ছেড়েছেন। শতাধিক বাড়িতে হামলা ও হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। গত তিন দিন ধরে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারনা বন্ধ আছে।
গত ৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে আত্রাই উপজেলা গেটের সামনে থেকে ১০-১২টি মোটরসাইকেলযোগে এসে হেলমেট বাহিনীরা ডিবি পরিচয় দিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তছলিম উদ্দীনকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর আত্রাই মহিলা কলেজের সামনের রাস্তায় বেধড়ক পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেয়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
১২ ডিসেম্বর পতিসর বাজারে ধানের শীষের নির্বাচনী সভা চলাকালীন সময় কয়েকজন মোটরসাইকেলে করে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে চলে যায়। ওইদিন রাত ৮টার দিকে নওদুলি বাজারে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। ১০ ডিসেম্বর রাতে রানীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়নের বগারবাড়ী নামক বাজারে বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, ৩০ তারিখের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতেই এ সহিংসতা ঘটানো হচ্ছে।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা ও হামলার ঘটনায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
আত্রাই থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম রেজাউল ইসলাম বলেন, ভোটের মাঠে লেভেল প্লেয়িং নেই। দুই থানার নেতাকর্মীরা এখন গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপি প্রার্থী আলমগীর কবীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রঘাতী খেলায় নেমেছেন। সব প্রথা ও প্রতিষ্ঠান ভেঙেছেন। কোর্ট-কাচারি, সিভিল প্রশাসন ধ্বংস করে এখন নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করছেন।
নওগাঁ সদর, আত্রাই ও রানীনগর থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিমন রায় বলেন, ইতঃপূর্বে যাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বিভিন্ন মামলা ও নাশকতার মামলা রয়েছে তারা যেন নির্বাচনে কারো পক্ষে পেশি শক্তি ব্যবহার করতে না পারে এবং অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার না হয় এজন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।