• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
‘ধর্ষকদের’ যম হারকিউলিস

‘ধর্ষকদের’ যম হারকিউলিস

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

‘ধর্ষকদের’ যম হারকিউলিস

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গ্রিক পুরাণের মহাবীর হারকিউলিস একাধারে ছিলেন সাহসী, শারীরিক শক্তিশালী এবং দয়ালু। ট্রয় যুদ্ধে এক কুমারীকে উদ্ধার করে তিনি আরো মহিমান্বিত হন। সেই হারকিউলিসই কি আবার ফিরে এলেন বাংলাদেশে? প্রশ্নটি গতকাল শুক্রবার থেকে আলোচিত হচ্ছে সারা দেশেই। ঝালকাঠিতে ধর্ষণ মামলার এক আসামির মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোচিত হচ্ছে বিষয়টি। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার আন্ডারিয়া গ্রামে শুক্রবার দুপুরে পরিত্যক্ত ইটভাঁটার পাশে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। লাশের গলায় সুতা দিয়ে ঝোলানো সাদা কাগজে লেখা- ‘আমি পিরোজপুর ভাণ্ডারিয়ার...(অমুকের) ধর্ষক রাকিব। ধর্ষকের পরিণতি ইহাই। ধর্ষকেরা সাবধান- হারকিউলিস।’ সংবাদমাধ্যমে এই খবর আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

চলতি বছরের প্রথম মাসেই দেশে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অনেক ঘটনার অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কয়েকটি ঘটনার অভিযুক্তরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে ঢাকার আশুলিয়ায় দল বেঁধে ধর্ষণের পর পোশাক শ্রমিককে হত্যা ও পিরোজপুরের এক মাদরাসাছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি মারা গেছে রহস্যজনকভাবে। গেল ১৮ জানুয়ারি সাভারের খাগান এলাকার আমিন মডেল টাউনের ভেতরে খালি এক মাঠ থেকে ওই মামলার প্রধান আসামি ও একই পোশাক কারখানার লাইন চিফ ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানা এলাকার আবদুল লতিফের ছেলে রিপনের (৩৯) লাশ উদ্ধার  করে পুলিশ। তার গলায় ঝোলানো একটি চিরকুটে লেখা ছিল- আমি ধর্ষণ মামলার মূল হোতা। তবে কে বা কারা রিপনকে গুলি করে হত্যা করেছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেনি পুলিশ।

এই ঘটনার কয়েক দিন পর গত ২৬ জানুয়ারি ঝালকাঠিতে ধর্ষণ মামলার এক আসামি সজল জোমাদ্দারের (২৮) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার গলায়ও ঝোলানো চিরকুটে লেখা ছিল- ধর্ষণের কারণে আমার এই পরিণতি। পাশের জেলা পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার নদমুলা গ্রামের আলম জোমাদ্দারের ছেলে সে।

ওই ঘটনার ঠিক ছয় দিন পর ওই মামলার প্রধান আসামি রাকিব মোল্লার (২০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার গলায়ও সুতা দিয়ে ঝোলানো সাদা কাগজে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে লেখা রয়েছে, আমি পিরোজপুর ভাণ্ডারিয়ার...(অমুকের) ধর্ষক রাকিব। ধর্ষকের পরিণতি ইহাই। ধর্ষকেরা সাবধান হারকিউলিস।

পুলিশ, নিহত রাকিবের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, ১৪ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে ওই মাদরাসাছাত্রী বাড়ি থেকে তার নানাবাড়ি যাচ্ছিল। উপজেলার নদমূলা গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রাকিব মোল্লা ও সজল জোমাদ্দার মেয়েটির মুখ চেপে ধরে জোর করে পাশের একটি পানের বরজে নিয়ে যায়। এরপর তারা পালাক্রমে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। রাকিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় সজল ভিডিও করে। এ ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি রাতে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে রাকিব ও সজলকে আসামি করে স্থানীয় থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর রাকিব ও সজল এলাকা থেকে ঢাকা চলে যায়। এর মধ্যে গত ২৬ জানুয়ারি সজলের লাশ উদ্ধার হয়। আর ওই দিন সন্ধ্যায় রাকিব মোল্লাকে ঢাকার সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে কয়েকজন ব্যক্তি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর গতকাল চিরকুটসহ তার লাশ পাওয়া যায়।

ধর্ষণ মামলার আসামিদের এই পরিণতি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই সারা দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। কেউ কেউ সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার কেউ বলেছেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় ধর্ষকের সাজা হওয়া উচিত।

ফেসবুকে শাকিল মাহবুব নামের একজন লিখেছেন, গ্রিক দেবতা ফিরে এসেছেন নারীর মর্যাদা রক্ষা করতে। স্বাগতম হারকিউলিস।

নিপা আহসান নামের একজন লিখেছেন, ধর্ষকদের পরিণতি আরো ভয়াবহ হওয়া দরকার। এবার যদি পাপীরা একটু ভয় পায়।

তবে এই ধরনের ঘটনায় ভিন্ন মতামত দিয়েছেন কেউ কেউ। শফিউর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ধর্ষকের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া দরকার। কিন্তু সেটা একটা বিচারিক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত। কারণ অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনিই যে প্রকৃত দোষী তেমন নাও হতে পারে।

মিতা রহমান নামের একজন লিখেছেন, ধর্ষকের জন্য কোনো অনুকম্পা বা সহমর্মিতা নেই। তবে রহস্যজনকভাবে ধর্ষণ মামলার আসামিদের যে পরিণতি হচ্ছে তা উদ্বেগের। প্রমাণ হওয়ার আগেই হত্যার শিকার হচ্ছে যারা, তারা প্রকৃত অপরাধী নাও হতে পারে। আবার তারা মারা যাওয়ায় হুকুমদাতাও আড়ালে থেকে যেতে পারে।

তিনি লিখেছেন, বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। অপরাধ প্রমাণের পরে প্রয়োজনে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হোক। আর নাহলে সমাজের একটা অন্যায় বন্ধ করতে গিয়ে আরেকটি অন্যায়কে উসকে দেওয়ার মতো ভুলও হতে পারে।

 

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads