• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
দীর্ঘমেয়াদি খরার কবলে পড়তে পারে উত্তরাঞ্চল

দীর্ঘমেয়াদি খরার কবলে পড়তে পারে উত্তরাঞ্চল

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

দীর্ঘমেয়াদি খরার কবলে পড়তে পারে উত্তরাঞ্চল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দৃশ্যমান হয়ে উঠছে দিন দিন। কোনো এলাকায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা আবার কোথাও কোথাও বাড়ছে গরম। মেঘের ধাবমান ক্ষমতা বদলে বৃষ্টিপাতের তারতম্যও হচ্ছে অঞ্চল ভেদে। ফলে কোনো কোনো এলাকা অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে, আবার কোনো কোনো এলাকা পড়ছে দীর্ঘমেয়াদি খরার কবলে। জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেও। সেখানে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে নামছে বৃষ্টি। চলতি বছরও উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামসহ লালমনিরহাট ও নীলফামারী শুষ্ক মৌসুমে বড় ধরনের খরার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওইসব জেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা আগাম খরার মুখোমুখি হয়েছেন। এর ফলে মাটির উর্বরতাশক্তি কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে ওইসব জেলার চরাঞ্চলের কৃষক।

স্থানীয় কৃষক, আবহাওয়াবিদ ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমে তুলনামূলক বৃষ্টিপাত না থাকা এবং গেল বছর বন্যা না হওয়ার কারণে এবার বেশি হুমকির মুখে কৃষকরা। কৃষকদের বক্তব্য, বন্যা অভিশাপ হয়ে এলেও তা মাটির উর্বরতা বাড়ায়, মাটিতে রস সৃষ্টি হয়। এতে ফলনও আশানুরূপ হয়। কিন্তু গেল বর্ষা মৌসুমে বন্যা তো নেই-ই, এমনকি বৃষ্টিও হয়েছে খুবই কম।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর যাত্রাপুরের কৃষক আবদুল লতিফ চরের তিন বিঘা জমিতে ধান, বাদাম, মাষকালাইসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করেছেন। তিনি জানান, চলতি শুষ্ক মৌসুমে মাটি শুকনো থাকায় খরচ বেশি পড়েছে। ফলনও তেমন একটা হয়নি।

একই এলাকার কৃষক বক্কর, সোবহান আলী জানান, এবার যে তাপের অবস্থা তাতে চরাঞ্চলে আবাদ করা নিয়েই সংশয় রয়েছে। মাঘ মাসেই নদ-নদীর পানি কমে গেছে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে যে কী অবস্থা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।

তাদের তথ্য মতে, বিগত বছরগুলোতে বাদাম চাষে বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ করে ফলন উঠত ১২ থেকে ১৪ মণ। কিন্তু এবারো একই খরচ করে বাদাম পাওয়া যাচ্ছে সাত থেকে আট মণ। ধার-দেনা করে অনেকেই চাষ করে এখন লোকসানের মুখ পড়তে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ুর প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে নদ-নদীসহ জীববৈচিত্র্যে এর প্রভাব পড়ছে। এই মৌসুমে বড় ধরনের খরার কবলে পড়তে পারে কুড়িগ্রামসহ আশপাশের কয়েক জেলা।

তবে খরা মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে নদ-নদী খনন কাজের প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি। প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে পানির সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে আশা তার।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়াম্যান আবদুর রহিম রিপন জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নটি দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র দ্বারা বেষ্টিত। এ বছর নদ-নদীর পানি কমে যাওয়া মাটিতে রস নেই। ফলে সেচ দিয়ে আবাদ করতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে কৃষককে বাড়তি খরচ। তাপমাত্রা বেশি থাকায় চরের ফলনও কমে এসেছে। ফলে ধার-দেনা করে আবাদ করলেও লোকসানের মুখে পড়েছেন এখানকার কৃষক।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিসের আবহওয়া পরিদর্শক এএইচএম মোফাখখারুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, চলতি শুষ্ক মৌসুম জুন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাপমাত্রা এবার ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়ারও পূর্বাভাস দেন তিনি।

এই আবহাওয়াবিদ আরো বলেন, তবে এ বছর কালবৈশাখী ঝড়ের সময় অধিক বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হবার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরের মে মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কুড়িগ্রামে রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, বন্যা আর বৃষ্টিপাত না থাকায় কৃষককে ফলন উৎপাদনে ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় কুড়িগ্রামের আবাদি জমিতে পানি ধরে রাখার ধারণক্ষমতা কম থাকাকেও খরার জন্য দায়ী বলে মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন খরার কথা স্বীকার করে জানান, জেলার নদ-নদীতে পানি না থাকায় চরাঞ্চলের কৃষকসহ অনেক কৃষকই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিশেষ প্রণোদনাসহ চরাঞ্চলের কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads