• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রেণিকক্ষের বিম ধসে শিশুছাত্রী নিহত

বরগুনার তালতলীর ছোটবগী ইউনিয়নের পি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিম ভেঙে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মানসুরা নিহত হয়

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

শ্রেণিকক্ষের বিম ধসে শিশুছাত্রী নিহত

  • তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৯

বরগুনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের বিমের অংশ ধসে মানসুরা নামে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে একই শ্রেণির আরো চার শিক্ষার্থী। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তালতলী উপজেলার ৫ নং ছোটবগী পি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাকেরিন জাহান বলেন, আমি বিশেষ প্রয়োজনে ছুটিতে ছিলাম। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি ভবনের পলেস্তারা ধসে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে। দুপুরে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বাংলার পাঠদান চলছিল কক্ষটিতে। হঠাৎ ছাদের বিমের একটি বড় অংশ ধসে পড়লে মানসুরাসহ পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত অন্য শিক্ষার্থীরা হলো সাদিয়া আক্তার, রুমা, ইসমাইল ও শাহিন। গুরুতর আহত অবস্থায় মানসুরাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। নিহত মানসুরার বাবার নাম নজির হোসেন তালুকদার। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মানসুরা সবার ছোট। নিহত মানসুরার বাড়ি উপজেলার গেন্ডামার গ্রামে।

ছোটবগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌফিক উজ জামান তনু জানান, যে ভবনটির বিমের অংশ ধসে পড়েছে সে ভবনটি সেতু এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০০২ সালে নির্মাণ করে। এরপর একাধিকবার তা সংস্কারও করা হয়েছে। তারপরেও এ ধরনের ঘটনা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও ঠিকাদারদের দায়িত্ব অবহেলাকেই চিহ্নিত করে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে তালতলী থানার ওসি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আহত অন্য শিক্ষার্থীরা শঙ্কামুক্ত। দুর্ঘটনার পর ওই ভবনে পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার শাহাদাত হোসেন বলেন, আহত মানসুরাকে হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। অপর তিন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা শঙ্কামুক্ত।

জানা গেছে, উপজেলার ৫ নং ছোটবগী পিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০২ সালে আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগ স্কুল ভবন নির্মাণ করে। ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেতু এন্টারপ্রাইজ। ওই সময় ভবনটি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় ওই ভবনের বিমে ফাটল ধরে পলেস্তারা খসে পড়ে।

২০১৬ সালে বিদ্যালয়ের ভবনটি জরাজীর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা শাকেরিন জাহান ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা জানিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনিরুজ্জামান রিপনকে অবহিত করেছেন। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওই জরাজীর্ণ ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে ক্লাস চালিয়ে নেওয়ার আদেশ দেন। ফলে বাধ্য হয়ে ওই জরাজীর্ণ ভবনেরই পাঠদান করাতে হচ্ছে।

গতকাল শনিবার ওই বিদ্যালয়ে প্রথম শিফটের ক্লাস শেষে দ্বিতীয় শিফটের ক্লাস শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বিষয়ের ক্লাস চলছিল। ওই শ্রেণির ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এ সময় বিদ্যালয় ভবনের ওই কক্ষের ছাদ ভেঙে শিক্ষার্থীদের মাথায় পড়ে। এতে ১০ শিক্ষার্থী মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগে আহত হয়। গুরুতর আহত মানসুরাকে দ্রুত উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে ছুরিকাটা নামক স্থানে তার মৃত্যু হয়। আহত সাদিয়া, ইসমাইল ও রুমা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অপর আহত রোজমা ও শাহীনসহ চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

স্কুলছাত্রীর নিহতের ঘটনায় অভিভাবকরা ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করেছেন।  আহত শিক্ষার্থী ইসমাইল, সাদিয়া ও রুমা জানান, বাংলা ক্লাসে শিমু ম্যাডাম আমাদের একটি প্রশ্ন লিখতে দেয়। আমরা ওই প্রশ্নে উত্তর লিখছিলাম। এমন মুহূর্তে একটি বিকট শব্দ হয়ে ছাদ ভেঙে আমাদের ওপরে পড়ে যায়। এতে অনেকজন আহত হয়েছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুম ও কুমকুম আক্তার জানান, বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে ছাত্রদের দ্রুত উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে মানসুরার মৃত্যু হয়।

বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেতু এন্টারপ্রাইজের মালিক কবির উদ্দিন সেতু বলেন, আমার লাইসেন্স দিয়ে ওই বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করিনি। কে বা কারা করেছে আমি জানি না?

জানতে চাইলে তালতলী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনিরুজ্জামান রিপন জরাজীর্ণ ভবনের কথা স্বীকার করে বলেন, ২০০২ সালে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। সেই ভবন ১৬ বছরের মাথায় ভেঙে শিক্ষার্থী মারা যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। যারা ভবন নির্মাণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে এ বিষয়টি তালতলী উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি আমার কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি।

তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মদ আলী বলেন, বিদ্যালয় ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে এমন কথা আমাকে কেউ জানায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাশ শুভ বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads