• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
খাদ্যপণ্যের আড়ালে তৈরি হয় বিষাক্ত মশার কয়েল

মশার কয়েল

সংরক্ষিত ছবি

সারা দেশ

‘কাকে কীভাবে ম্যানেজ করতে হয় আমি জানি’

খাদ্যপণ্যের আড়ালে তৈরি হয় বিষাক্ত মশার কয়েল

# গ্যাস সংযোগ অবৈধ # আছে শিশুশ্রমিক

  • আশুলিয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৯

খাদ্যপণ্য তৈরির লাইসেন্স নিয়ে ঢাকার অদূরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার আবাসিক ও পোশাক কারখানার গা ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে বিষাক্ত কেমিক্যালমিশ্রিত মশার কয়েল তৈরির কারখানা। কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত বায়ুদূষণে ভুগছেন এসব পোশাক কারখায় কর্মরত শ্রমিকরা। শুধু বিষাক্ত বায়ুদূষণ নয়, এ ফ্যাক্টরিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই চালানো হচ্ছে অবৈধ্য গ্যাস সংযোগ দিয়ে। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ ও শিশুশ্রমিক কারখানা দিয়ে চালিয়ে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধ কারখারখানা মালিকরা। এসব বিষাক্ত কেমিক্যাল কারখানার অনুমতি দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে কারখানা চালিয়ে যাওয়ার দম্ভোক্তি করেছেন একটি কারখানার মালিক। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার এজাক্স সোয়েটারের প্রাচীর ঘেঁষে রয়েছে এমনি কোয়েল তৈরির সাইনবোর্ডবিহীন একটি কারখানা। যেখানে আশরাফ ফুড প্রোডাক্টসের নামে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনও রয়েছে, রয়েছে পিএইচপি নম্বরও। ফুড প্রোডাক্টসের নাম ব্যবহার করলেও সেখানে কোনো ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি করা হয় না। সেখানে র্যাটরো ওভেল নাম ব্যবহার করে দুই থেকে তিন ধরনের মোড়কে বাজারজাত করা হচ্ছে মশার কয়েল। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আশরাফ ফুড প্রোডাক্টস নামের কারখানায় কোনো ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি না করে বিভিন্ন রঙের মশার কয়েল তৈরি করছে।

এ কারখানার বিষাক্ত বায়ুদূষণে পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা রোগে ভুগছে পোশাক শ্রমিক ও এলাকাবাসী। এছাড়া অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে শুকানো হচ্ছে মশার কয়েল। কারখানার ভেতরে কর্মরত বেশিরভাগ শিশুর বয়স ১২ বছরের নিচে। কিন্তু তাদের কারো মুখেই মাস্ক নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ফ্যাক্টরির ভেতর থেকে নির্গত বিষাক্ত কেমিক্যালের দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু ও ময়লা পানির কারণে অনেকের হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এলাকার পরিবেশ দূষিত হওয়ায় আমাদের বসবাস করতে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ওইসব কারখানা মালিক যে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করছে তা নিয়েও আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি, কখন যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, এসব কারখানার অবৈধ্যভাবে গ্যাস ব্যবহার করে একদিকে যেমন লাইনে গ্যাসের চাপ কমাচ্ছে তেমনি সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এছাড়া কিছু কারখানা আবাসিক বাড়ির মধ্যেও চালানো হচ্ছে।

আশরাফ ফুড প্রোডাক্টসের কারখানায় দায়িত্বরত আমিরুল নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘আমাদের কারখানার ২২টি লাইসেন্স আছে। সাংবাদিক কী করবে, সাংবাদিকের খাওয়া নাই, র্যাব, পুলিশ ও ডিবি আমাদের কিছু করতে পারে না।’ এছাড়া তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এই প্রতিনিধিকে বিভিন্ন ধরেনর হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন।

ওই কারখানার মালিক আশরাফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার পর এক সময় তার সঙ্গে দেখা হলে তিনি সাংবাদিকদের উচ্চস্বরে বলেন, ‘আপনার কোথা থেকে এসেছেন? আমি তো গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে টাকা দিয়ে আমার ফ্যাক্টরি চালাচ্ছি। এছাড়া আমার ফ্যাক্টরির ১৮টি লাইসেন্স আছে কয়েল জগতে। আমার একটাই দুর্বলতা, সেটা হচ্ছে আমার গ্যাস লাইনটি অবৈধ।’

এছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমি কিছু দিন আগে সময় টেলিভিশনের যুবায়ের নামের এক সাংবাদিককে লাথি মেরে বের করে দিছি।’

শিশুশ্রমিকদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তা স্বীকার করেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘আমি আজ ১১ বছর ধরে ব্যবসা করি, কাকে কীভাবে ম্যানেজ করতে হয় আমি জানি। সবশেষে তিনি সাংবাদিকদের ভাই-বন্ধু বলে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।’

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads