• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
যে হাসপাতালে চিকিৎকদের সেবা পাওয়া দুষ্কর

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

যে হাসপাতালে চিকিৎকদের সেবা পাওয়া দুষ্কর

  • হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০১৯

হাসপাতাল আছে, রোগীরও অভাব নেই। কাগজে-কলমে আছেন চিকিৎসকও। কিন্তু চিকিৎকদের সেবা পাওয়া দুষ্কর সেই হাসপাতালে। রোগী ভর্তির তিন দিন পরও দেখা মেলে না চিকিৎসকের। রোগীর স্বজনরা আহাজারি করেন সেবা পাওয়ার জন্য।

গত বুধবার বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতলে ভর্তি হন আরজুদা আক্তার। কিন্তু শুক্রবারের দেখা পাননি কোনো চিকিৎসকের। আরজুদার ভাই ছাবু মিয়া সাংবাদিকদের বলছিলেন সেই কথা। তিনি বলেন, ‘আমার বইনডারে লইয়্যা দুইদিন ধইরা হাসপাতালে ভর্তি। একটা ডাক্তার আইয়াও দেখলো না। এইহানে ভর্তি থাকলেও ডাক্তার দেখাতে হয় ডায়াগনস্টিকে যাইয়া। একটা সরকারি ওষুধও পাওয়া গেলো না দুই দিনের মধ্যে। আইজকা (শুক্রবার) বিকালে রোগী লইয়্যা অন্য জায়গায় চইলা যাইমু।’

উপজেলার পীরের বাজার এলাকার বাসিন্দা ছাবু মিয়া বলেন, গত বুধবার সকালে আমার বোনের বুকে ব্যথা হলে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। কিন্তু সারা দিন চলে গেলেও কোনো ডাক্তার না আসায় চলে যাই পার্শ্ববর্তী সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানকার ডা. তানভীর আহমেদ আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ভর্তি থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু দুই দিন হাসপাতালের বেডে থাকার পরও কোনো ডাক্তার আসেননি রোগী দেখতে। ক্ষুব্ধ ছাবু মিয়া সরকারি হাসপাতালের দুর্দশা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান, শুক্রবার বিকালে আবারো ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা. তানভীর আহমেদকে দেখিয়ে তার বোনকে নিয়ে বাড়ি চলে যাবেন।

এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় এমন অবহেলা নিয়ে একই অভিযোগ করেন উপজেলা লাতিরগাঁও গ্রামের হাছেনা আক্তারও। শ্বাসকষ্টের রোগে আক্রান্ত তার স্বামী ছামির হোসেনকে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে ভর্তি করেন হাসপাতালে। কিন্তু শুক্রবার সকাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসকও তাকে এসে দেখেননি। হাছেনা বলেন, নার্স এলেও তারা সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না।

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২৫ জন ভর্তি কমপ্লেক্স। অথচ জরুরি বিভাগে নেই কোনো আবাসিক মেডিকেল অফিসার।  সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন মো. সজল মিয়া নামের এক ইন্টার্ন চিকিৎসক। এই তিন ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন সজলের পরামর্শে। এই ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছ থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয় ১৫ রোগীকেএ বিষয়ে চুনারুঘাট বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতা সাজিদুল ইসলাম বলেন, কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নিয়মিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে প্র্যাকটিস করেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা।

সোহেল আরমান নামের এক বাসিন্দা  বলেন, চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের ছত্রছায়ায় থেকে সরকারি চিকিৎসকরা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।

মানবাধিকারকর্মী শেখ মো. হারুনুর রশিদ বলেন, প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীরা এসে বসে থাকেন, চিকিৎসক না পেয়ে ইন্টার্নদের দিয়েই চিকিৎসা করান। প্রভাবশালী কেউ হাসপাতালে এলে ফোন পেয়ে তারা আসেন। সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন।

চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, একজন প্রতিমন্ত্রী হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির উপদেষ্টা। বিষয়টি নিয়ে আমি তার সঙ্গে আলাপ করব। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার মুমিন উদ্দিন চৌধুরীর জানান, শুক্রবার দায়িত্বে ছিলেন ডা. রাসমিনা আক্তার।

ডা. রাসমিনাকে হাসপাতালে না পেয়ে ফোন করলে তিনি বলেন, আজ শুক্রবার। তাই আমি আসব না। শনিবার এলে আমাকে পাওয়া যাবে। তবে হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনেক অভিজ্ঞ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুচিন্ত চৌধুরী বলেন, ইন্টার্নদের চিকিৎসা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads