• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
ছাব্বিশ নদী-খাল গিলে খাচ্ছে ১১৫৪ ভূমিদস্যু

ছবি : সংগৃহীত

সারা দেশ

ছাব্বিশ নদী-খাল গিলে খাচ্ছে ১১৫৪ ভূমিদস্যু

রোববার থেকে উচ্ছেদ অভিযান

  • এ কে হিরু, খুলনা
  • প্রকাশিত ০৪ জুলাই ২০১৯

খুলনা মহানগরীর চারপাশ ঘিরে রয়েছে রূপসা, ভৈরব, ময়ূর নদসহ অসংখ্য খাল। একসময় এসব নদী-খাল দিয়ে মহানগরীতে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব নদী, নালা, খাল ভরাট হয়ে গেছে। অবৈধ দখলদাররা এসব স্থান দখল করে ঘরবাড়ি, মার্কেট নির্মাণ করে আর্থিক ফায়দা লুটছে।

জানা যায়, খুলনা মহানগরীর নদ-নদী ও সংযুক্ত ২২টি খালের প্রায় ১৪ হাজার বর্গমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে ময়ূর নদের বেদখল হওয়া জমির পরিমাণ ১০৭৫ বর্গমিটার। নদের আয়তন কমেছে চার দশমিক ১৭ শতাংশ। অবৈধ দখলের কারণে খালগুলো সংকীর্ণ হওয়ায় পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ব্যাহত হয়। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে নগরীর বড় অংশজুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি খুলনার বেদখল হওয়া ২২টি খালের ওপর থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে। কিন্তু আইনগত জটিলতার কারণে অভিযান হঠাৎ করেই থেমে যায়। এদিকে নগরীর জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে ২৬টি নদী ও খাল চি‎‎হ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। এসব নদী ও খাল লুটেপুটে খাচ্ছেন ১ হাজার ১৫৪ জন ভূমিদস্যু। এই তালিকা ধরেই আগামী ৭ জুলাই রোববার থেকে ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। উচ্ছেদ করার পর নদী-খাল খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে খুলনা নগরের জলবদ্ধতা নিরসন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

খুলনা জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২২ নদী ও খাল দখলদারিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর অনেকেই নিম্ন ও উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে উপস্থিত হওয়ার কারণে আইনি জটিলতার কারণে উচ্ছেদ অভিযান ব্যাহত হয়। ফলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর, সহকারী কমিশনার (ভূমি), পাউবো, এলজিইডি, সওজ, বিআইডাব্লিউটিএ, কেডিএ ও খুলনা সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি গত চার মাস ধরে জরিপ করে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে তিনটি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ২৬টি নদী ও খাল চি‎‎হ্নিত করে। এসব এলাকায় অবৈধ দখলদার ৪৬০ এবং অবৈধ স্থাপনা রয়েছে ৩৮২টি। এছাড়া ভৈরব নদ ও রূপসা নদীর চারটি মৌজা যথাক্রমে বানিয়াখামার, হেলাতলা, টুটপাড়া ও লবণচরায় সীমানা চি‎‎হ্নিত করে পিলার স্থাপন এবং ১ হাজার ১৫৪ জন অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরি করে।

সূত্র জানায়, দখল হওয়া ২৬ নদী-খালের মধ্যে রয়েছে- ময়ূর নদী, মহিরবাড়ীর খাল, মতিয়াখালি খাল, মান্দার খাল, ক্ষেত্রখালী খাল, মিস্ত্রিপাড়া খাল, নবীনগর খাল, লবণচরা খাল, গল্লামারী নর্থ খাল, তালতলা খাল, তালতলা সংযোগ খাল (নার্সিং ইনস্টিটিউটের পাশে), তালতলা সংযোগ খাল (ওয়াসার পানির ট্যাংকের পাশে), ছড়ি ও ছড়ার খাল, নারকেলবাড়িয়া খোলাবাড়ীর খাল, মুরিমারী খাল,  ডুবি ও বেতবুনিয়া খাল, আড়াল বুনিয়া ও আলুতলা বড়ভিটা খাল, হরিনটানা লাউড়ি খাল, ট্রাক টার্মিনাল খাল, দেয়ানা দক্ষিণপাড়া খাল, বাটকেমারী খাল, রায়েরমহল খাল, বাস্তুহারা খাল, ক্ষুদে নদী, ক্ষুদিয়ার নদী খাল ও চক মথুরাবাদ খাল।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই যুগ আগেও ময়ূর নদে পালতোলা নৌকা চলাচল করত। অনেক জেলে পরিবারের জীবিকার মূল উপজীব্য ছিল এ নদ। গোসল ও তৈজসপত্র ধোয়ার কাজে নদীর পানি ব্যবহার করত। অথচ এখন দখল ও দূষণে আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ময়ূর নদের সঙ্গে আগে রূপসা নদীর সরাসরি সংযোগ ছিল। দখলে নদটি হারিয়েছে নিজস্বতা। ময়ূর নদের নাব্য ফিরিয়ে আনতে ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন। তাতে পুরোপুরি দখলমুক্ত হয়নি নগরীর খালগুলো। ময়ূর নদ ও ২৬ খালের প্রায় ১৪ হাজার বর্গমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে ময়ূর নদের বেদখল হওয়া জমির পরিমাপ ১০৭৫ বর্গমিটার। নদীর আয়তন কমেছে চার দশমিক ১৭ শতাংশ। সংযুক্ত হাতিয়া নদীর ৫৬৮০ বর্গমিটার ও ক্ষুদের খালের ১০১০ বর্গমিটার জমি বেদখল হয়েছে। বাস্তুহারা খাল, স্লুইসগেট খাল, গল্লামারী নর্থখাল, কাস্টমঘাট প্রভৃতি এলাকায় খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আড়ংঘাটা খালের বেদখল হয়েছে ৩৪৮ বর্গমিটার জায়গা, দেয়ানা চৌধুরী খালের ৩৪১ বর্গমিটার, বাস্তুহারা খালের ২৪২ বর্গমিটার, দুয়ানে খালের ১৩৭ বর্গমিটার, তালতলা খালের ১২১ বর্গমিটার, কাদেরের খালের ৪০৫ বর্গমিটার, নিরালা খালের ১২০৪ বর্গমিটার, চড়িছড়া খালের ১২৩ বর্গমিটার, খোলাবাড়িয়া খালের ৫১ বর্গমিটার, নারকেলবাড়িয়া খালের ৫০০ বর্গমিটার, হরিণটানা খালের ১৭৮ বর্গমিটার, মতিয়াখালী খালের ২৬৩ বর্গমিটার, শুরি খালের ২১৭ বর্গমিটার, রংমারী খালের ২৪৬ বর্গমিটার, কাশেমবাড়ী খালের ৪৮৯ বর্গমিটার ও মাথাভাঙা খালের ৭৫ বর্গমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে।

উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, আইনি জটিলতার কারণে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছিল। টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টে ২৬ নদী-খাল ও অবৈধ স্থাপনা এবং দখলদারদের চি‎হ্নিত করা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। উচ্ছেদ কার্যক্রম সফল করার জন্য ১১ সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি এবং ২৫ সদস্যের উদ্ধার কমিটি কাজ করবে।

খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বলেন, ভূমিদস্যু ও মাদক বিক্রেতাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, নগরবাসীর সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা নিরসনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং নদী-খাল খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, খালগুলো উদ্ধার করা খুবই জরুরি। ইতঃপূর্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দখলদারদের উচ্ছেদে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। কিছু খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়। এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads