• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
বিপাকে দশমিনার শ্রমজীবি মানুষ

পটুয়াখালী মানচিত্র

সারা দেশ

করোনায় লকডাউন

বিপাকে দশমিনার শ্রমজীবি মানুষ

  • দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০২০

সাইদুর রহমান সাইদ, দশমিনা (পটুয়াখালী) থেকে 

করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে কর্মহীন হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর দশমিনায় শ্রমিক ও দিনমজুররা। গত কয়েক দিন হলো উপজেলার বেশীর ভাগ দোকানপাট বন্ধ। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। তাই বাসষ্টান্ড সহ ফাকা এখন রাস্তাঘাট। রাস্তায় দু’একটা রিকশা, অটোরিকশা ও ভাড়ায় চালিত হোন্ডা দেখা গেলেও যাত্রী সঙ্কটে ভাড়া পাচ্ছেনা চালকরা।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাঁচাবাজার, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা না থাকায় সন্ধ্যা ৭টার পরেই দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে উপজেলার অনেক শ্রমজীবি মানুষ। উপজেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি ও মাইকিং করে দোকানপাট, হাটবাজার বন্ধ রাখা, ঘর থেকে না বের হওয়া সহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

এ নির্দেশনা কার্যকর করতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী। এদিকে উপজেলা প্রশাসন খাদ্য সহায়তা প্রদান করলোও প্রয়োজনীয় তুলনায় অপ্রতুল।

অটোরিকশা চালক দেলোয়ার খান বলেন, গাড়ি চালাইয়া যে টাহা পাই, হ্যাতে সংসার চলেনা। করোনার কারনে যাত্রীও নাই, কামাইও নাই। জানিনা কয়দিন এভাবে চলবে আর কি খামু।

মোটরসাইকেল চালক হাসান বলেন, গত পাঁচ দিন হইছে নিষেধের কারনে হোন্ডা চালাই নাই। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে আছি।

চায়ের দোকানদার আনিস বলেন, এ অবস্থা থাকলে বউ বাচ্চা নিয়ে অনাহারে মরতে হবে। হুনছি সরকার ত্রান দেয়, আমরাতো এহনো কোনো ত্রান পাই নাই। উত্তর লক্ষীপুর গ্রামের মাটিকাটা

শ্রমিক জলিল সরদার জানান, মাটি কেটে সংসার চালাই, করোনা ভাইরাসের কারনে এহন আর কেউ মাটি কাটায় না। বাজার সদয় কিছুই করতে পারি না। দোকানদাররা কেউ বাকীতে কিছু দিতে চায় না। লক্ষীপুর গ্রামের টমটম চালক মোঃ জামাল হোসেন ঘরামি (৪০), আরজবেগী গ্রামের রফিক গাজী (৩৫) ও কামাল মৃধা (৪৫) সাথে, তারা জানান, আমরা দিন আনা, দিন খাওয়া মানুষ। সরকার লকডাউন দেওয়ায় রাস্তায় নামতে পারছি না। হুনছি সরকার চাউল ডাইল দেয়। কিন্তু আমরা পাই না। অসহায় অবস্থায় চলছে জীবন সংসার।

গছানী গ্রামের অটোরিকসা চালক কালাম ফকির জানান, রাস্তায় লোক নাই, যাত্রী নাই, দৈনিক ১শত টাকা আয় করতে কষ্ঠ হয়। আগে প্রতিদিন ৪/৫শ টাহা কামাই করতাম। এহন আর পারি না। এহন যাহা পাই, তাহা দিয়া আর সংসার চলে না। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ২সন্তান নিয়া আমার সংসার। সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মাইনা চলি, ভয়ংকর না হলে সরকার এত গুরুত্ব দিত না। পেটের দায় রাস্তায় নামি।

উপজেলা সদর বাজারে বস্তা টেনে জীবিকা নিবাহ করে আক্কাস সরদার, কালু সরদার, বেল্লাল প্যাদা জানান, আমরা আছি করোনা, পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা বাহিনী’র ও অভাব অনাটনের আতংকে। ইউপি চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি ও উপজেলা

আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইকবাল মাহামুদ লিটন জানান, হতদরিদ্র মানুষগুলো খুবই কষ্টে আছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বৃত্তবান ব্যক্তিদের সাহায্য সহযোগিতায় নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।

এদিকে করোনা ভাইরাস সতর্কতায় দুঃস্থ ও কর্মহীন মানুষের সহায়তায় আর্থিক রবাদ্দ দিয়েছে সরকার। এতে প্রতিটি উপজেলায় দুঃস্থ ও কর্মহীন মানুষদের তালিকা করে চাল, আলু, লবন, ডাল ও সাবান কিনে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানা গেছে। অনেকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক কিছু খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌস জানান, দশমিনায় করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারী বরাদ্দকৃত দ্রব্যাদি ত্রাণ হিসেবে দেয়া শুরু হয়েছে। আরও সহায়তা দেয়ার জন্য দুঃস্থদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads