• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
মানুষকে ঘরে ফেরাতে দ্বীন ইসলাম হাতে নিয়েছে লাঠি, মুখে বাঁশি!

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

মানুষকে ঘরে ফেরাতে দ্বীন ইসলাম হাতে নিয়েছে লাঠি, মুখে বাঁশি!

  • রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
  • প্রকাশিত ১৪ এপ্রিল ২০২০

নিজের খাদ্য নিশ্চয়তা না থাকলেও দ্বীন ইসলাম (৪০) নামের এক কর্মহীন যুবক পালন করছেন মানুষকে ঘরে ফেরানোর সামাজিক দায়িত্ব। দ্বীন ইসলাম গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভা ৩নং ওয়ার্ড ভাদার্ত্তী দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার ইজারাকৃত বাসস্ট্যান্ডে একজন দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিক। স্থানীয়ভাবে তিনি কালীগঞ্জের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে একটি অতি পরিচিত প্রিয় মুখ।

দ্বীন ইসলাম সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে গত ২৩ মার্চ থেকে নিজ গ্রামে বাড়িতেই সময় অতিবাহিত করছেন। ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধে মানুষকে ঘরে রাখতে শুরু থেকে স্থানীয়ভাবে উপজেলা, পুলিশ ও পৌর প্রশাসনের নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশনাগুলো কেউ কেউ পালন করলেও অনেকেই তা পালন করছে না। দেশের এই পরিস্থিতি মানুষকে ঘরে ফেরাতে গত ২৭ মার্চ থেকে দ্বীন ইসলাম হাতে তুলে নিয়েছে লাঠি আর মুখে বাঁশি। আর ভাদার্ত্তী দক্ষিণপাড়া গ্রাম এবং পুরাতন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এলাকার মানুষগুলোকে বুঝিয়ে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নেন। দেশের এ পরিস্থিতিতে দ্বীন ইসলামের এই কাজে সবাই বেশ প্রশংসাও করেছেন।

স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের নির্দেশায় ওই গ্রামের পাশের দোকানপাট বন্ধের তাগিদ দিচ্ছেন। একসাথে অনেক মানুষের সমাগমে বাধা প্রদান করছেন। সেই সাথে এলাকার মসজিদগুলোতে কম সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে জামাত আদায়ের অনুরোধ করছেন। বাইরের কোনো লোক এ এলাকার প্রবেশ করলে তিনি তার খোঁজ খবর নিচ্ছেন।আর এই খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে তিনি অনেকের অজান্তেই স্থানীয়ভাবে প্রশাসনে সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন।  

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও মহামারী আকার ধারণ করেছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা মেনে যারা ঘরে রয়েছে সেই সব কর্মহীন মানুষগুলোর সহায়তায়। তেমনি ব্যক্তি বা নানা সামাজিক সংগঠনের খাদ্যসমাগ্রী বিতরণেও দ্বীন ইসলাম স্থানীয় যুবকদের সাথে সমান সহযোগীতা করছে।

এ ব্যাপারে কথা হয় স্বেচ্ছাসেবি দ্বীন ইসলামের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, শুধুমাত্র মানবিক কারণে আমি এগিয়ে এসেছি। যখন দেখছি করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোন মানুষ মারা গেলে পরিবারের মানুষ তাকে বাইরে ফেলে রাখছে। ভয়ে সবাই তার কাছ থেকে দূরে থাকছে। তাই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে মানুষকে ঘরে ফিরাতে সামাজিকভাবে এ দায়িত্ব তুলে নিয়েছি। তবে এজন্য স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন ও যুবসমাজ আমাকে উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। প্রশাসনিকভাবে নানা দিক দিয়ে কিছু গণমাধ্যমকর্মীও সহযোগীতা করছে। এ জন্য এ দায়িত্ব পালন আমার জন্য সহজ হয়েছে। পরিবার, সমাজ ও দেশের করুণ পরিনতি দেখতে না চাইলে তিনি সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস বাংলাদেশেও মহামারী আকার ধারণ করেছে। আর দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা গাজীপুর জেলা পুলিশের নির্দেশনায় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ দিনরাত নানামুখি কাজ করে যাচ্ছে। তবে দ্বীন ইসলামের মত মানুষ মানবিক দিক বিকেচনা করে এগিয়ে আসা আমাদের জন্য আশার আলো। তবে আমাদের থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল সহযোগীতা থাকবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক জানান, স্থানীয় এক গণমাধ্যম কর্মীর মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের বিষয়টি শুনেছি। তার বিষয়টি আমাদের আশার আলো দেয়ায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে খাদ্য সহায়তার আশ্বাসও দেন ওই কর্মকর্তা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads