• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রীপুরে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র দুই বিভাগের দ্বন্দ্বে বন্ধ, সেবাবঞ্চিত প্রান্তিক মানুষ

মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রেই অস্থায়ী ভাবে শুরু করা হয়েছিল উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রম

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

শ্রীপুরে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র দুই বিভাগের দ্বন্দ্বে বন্ধ, সেবাবঞ্চিত প্রান্তিক মানুষ

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা ভীতি চলছে বিশ্ববব্যাপী। তার ব্যতিক্রম নয় আমাদের দেশেও। করোনাকালে মানুষ সামান্য অসুখেই অনেক বেশি ভীতু হয়ে পড়ে। অসুখ দেখা দিলেই দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন সহসা‌ই। ভয় দূর করতে শেষ ভরসা হাসপাতাল ও চিকিৎসক।  তবে এমনি ক্রান্তিকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এ মাসের ৭ তারিখ থেকে দুই বিভাগের রশি টানাটানিতে বন্ধ হয়ে গেছে । দুই বিভাগের বৈধ অবৈধ দ্বন্দ্বে তা বন্ধ করা হলো। জরাজীর্ণ ভবন থেকে  নিরাপত্তার কথা ভেবে পাশের মা ও শিশু কল্যান ভবনে চিকিৎসা সেবা চালু করায় এ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।  এতে  চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার কয়েক লাখ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করতে আসা রোগীরা। প্রতিদিনই দুরদুরান্ত থেকে রোগী এসে দেখে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। এতে সেবা না পেয়ে ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভে বাড়ি ফিরে যান রোগীরা। এ নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সেবা গ্রহীতাদের মাঝে। দ্রুত এ সমস্যার নিরসন চান সেবা গ্রহিতারা।

স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দকৃত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি অনেকদিন ধরেই ভাঙাচোরা ব্যবহারে অনুপযোগী। তার পরেও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ওখানেই চলছিল সেবাদান। সম্প্রতি অনেক বেশি ঝুঁকিপুর্ণ হওয়াতে পরিত্যক্ত করা হয় এ ভবনটি। অধিক জরাজীর্ণ হাওয়ায়  প্রায় দেড় মাস উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের অস্থায়ী কার্যালয়টি এ চত্বরের পাশেই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের  একটি কক্ষে পরিচালিত হয়ে আসছিল। এতে করে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কার্যক্রম চালানো কক্ষটি তালা বন্ধ করে সেবাদানকারীদের বের করে দেওয়া হয়। এ সময় ব্যবহৃত জিনিসপত্রসহ কক্ষটি তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবারও একাধিক রোগী সেবা নিতে এসে ফিরে গেছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দুই বিভাগেই প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দানে কাজ করে। তাদের দাপ্তরিক দ্বন্দ্বের কারনে কেন সাধারন মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে?  আমরা দুর থেকে এসে সেবা না পেয়ে দ‍ুর্ভোগে পড়ছি নিয়মিত। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করার দাবি জানান তারা।

নান্দিয়াসাঙ্গুন গ্রামের তানিয়া বেগম আসেন হাসপাতালে। তাঁর চার বছরের শিশু (মেয়ে) কদিন ধরেই জ্বরে ভোগছে। সব সময় কোনো অসুখে পড়লেই তিনি এ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সেবা নেন। এবার এসে দেখেন বন্ধ। পরে জানতে পারেন নিজেদের দ্বন্দ্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হাসপাতালটি। পরে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনেন তিনি।

তিনি বলেন, বরমীসহ আশপাশের হাজার হাজার মানুষ এখান থেকে সেবা নেন। পাশের কাপাসিয়া ও গফরগাঁও থেকেও মানুষ এসে সেবা নেন। তিনি আরো বলেন, এ সময় শিশু বৃদ্ধরা মৌসুমি জ্বরসহ বিভিন্ন অসুখে পড়ছেন। এ হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়াতে সাধারনের স্বাস্থ্যসেবা অনিশ্চত হয়ে পড়ল। 

বরমী বাজারের ব্যবসায়ী তালুকদার আবুল হোসাইন জানান, উপজেলা সদর প্রায় ১২ কিলোমিটার। গরীব অসহায় মানুষ সহজেই সেবা পেতে এখানে আসতো। সদরে যাওয়া আসাতে যে খরচ তা অনেকেই ব্যয় করতে পারে না। তাই হাতের কাছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে তারা খুশি। তিনি বলেন, বরমী ও আশপাশসহ প্রায় লক্ষ মানুষ বিভিন্ন সময় সেবা গ্রহন করেন এখানে। তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের দুই দপ্তরের বৈধঅবৈধ দ্বন্দ্বে প্রান্তিক মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত তা নিরসন করে সাধারন মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে বলে দাবি করেন।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, আমাদের নিজেদের ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ। এই অবস্থার মধ্যেই আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। তবে রোগী এবং চিকিৎসকের নিরাপত্তার স্বার্থে, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে আমরা কার্যালয়টি পাশের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করি। কিন্তু সেখান থেকে আমাদের কার্যালয়ের কক্ষে তালাগুলো সিলগালা করে দেয় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। আমাদের জিনিসপত্র ভিতরে রেখেই সিলগালা করা হয়। বর্তমানে বরমী ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র টি বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিনাত শারমিন বলেন, তারা অবৈধভাবে আমাদের ভবনে কার্যালয় চালাচ্ছিলেন। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন তদন্ত করে ওই কার্যালয়টি ছেড়ে দেয়ার জন্য তাদেরকে পাঁচ দিন সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ঐ সময়ের মধ্যে কার্যালয় ছাড়েননি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই কক্ষের তালাগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়। ভিতরের জিনিসপত্র তারা যে কোন সময় নিয়ে যেতে পারবেন।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ শামসুল আরেফিন বলেন, শিগগিরই  উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যালয়টি সংস্কার করে চালু করা হবে। যত দ্রুত সম্বব প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads