• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
কাজ না পেয়ে ফিরছেন ঢাকায়

প্রতীকী ছবি

সারা দেশ

কাজ না পেয়ে ফিরছেন ঢাকায়

‘গ্রামে কোনো কাজ-কাম নাই, তাই আবার ঢাকায় চলে আসতে হলো’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ নভেম্বর ২০২০

করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। কাজ হারিয়ে অনেকে নেমে গেছে দরিদ্রের কাতারে। হঠাৎ বেকার হওয়া হাজার হাজার মানুষ গ্রামে ফেরেন। কিন্তু সেখানেও কর্মসংস্থানের ব্যাপক সংকট থাকায় তাদের বেশির ভাগই সুবিধামতো কাজ জোগাড় করতে পারেননি। ফলে গ্রামে থাকা বাবা-মা-ভাইসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনের ওপর ভর করে চলতে হয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে। এমনই কঠিন বাস্তবতায় ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

আগারগাঁও বস্তির সরেজমিনে গেলে বাসিন্দারা জানান, আগারগাঁও বস্তির প্রায় ২০০ ঘরের আকারভেদে ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। করোনার প্রথম তিন মাসে বস্তি থেকে প্রায় ৬০টি ঘরের মানুষ গ্রামে চলে যান। কেউ কেউ ফিরছেন বা খালি ঘরগুলোতে নতুন কিছু ভাড়াটিয়া উঠেছেন।

বস্তির চায়ের দোকানি সাহেনা বেগম বলেন, ‘করোনার সময় মানুষ কাজের লোক বাদ দিছে, দোকানে চা খেতে আসত না, রিকশায় উঠত না। কাজ হারিয়ে অনেকে গ্রামে গেলেও বেশিদিন থাকেনি। এখন আবার বস্তিতে মানুষ যাচ্ছে আর আসছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে এইখানে তিনটা দোকান ছিল চায়ের। গত মাসে আরো দুইটা হইছে এই কোনায়। অনেক পিঠার দোকানও হইছে। এইগুলা গ্রাম থেকে ফিরে আসা মানুষেরাই করছে।’

মিরপুর-১০ নম্বরের শাহআলী প্লাজায় একটি মোবাইলের দোকানের সেলসম্যান ছিলেন রিয়াদুল। এপ্রিলে তার চাকরি চলে যায়। এরপর তিনি গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীতে চলে যান। কিন্তু সেখানে কাজ না পেয়ে সম্প্রতি রাজধানীতে ফিরে আসেন রিয়াদুল। বন্ধুর মোটরসাইকেল ধার নিয়ে অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এখন।

রিয়াদুল বলেন, ‘গ্রামে কোনো কাজ-কাম নাই। একটা দোকানে বসছিলাম কয়দিন, সেইটাতে বেচা বিক্রি নাই। তাই আবার ঢাকায় চলে আসতে হলো।’

কর্মসংস্থানের রাজধানীতে ফিরে উচ্চশিক্ষিত অনেকে আবার আগের চেয়ে নিম্নমানের বা কম আয়ের কাজে লেগে পড়েছেন। এতে নগরীর কর্মসংস্থানেও নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আরো জানা গেছে, করোনার শুরুতে চাকরি হারিয়ে যারা গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে খুব স্বল্পসংখ্যক মানুষই আগের কর্মস্থলে নিজের ঠাঁই করে নিতে পেরেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে ফুটপাতে পণ্য বিক্রিতে নেমেছেন। অনেকেই মার্কেট-শপিংমল কিংবা পাড়া-মহল্লার দোকানে সেলসম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বেকার সহকর্মীদের সঙ্গে একজোট হয়ে কেউ কেউ অনলাইন ব্যবসাসহ ছোটখাটো অন্য ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন।

পাড়া-মহল্লার একাধিক অলি-গলিতেও দেখা গেছে, করোনার আগে প্রত্যেক রাস্তায় যেখানে ২-৩ জন ভ্যানে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন, এখন সেই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে।

বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চাকরিদাতারা জানান, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের মন্দাদশা এখনো কাটেনি। ফলে তারা আগের মতো শ্রমিক-কর্মচারী, কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারছেন না। তবে এর মধ্যেই বেশি বেতনের অনেক কর্মীকে ছাঁটাই করে কম বেতনের কর্মী নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে কিছু প্রতিষ্ঠান।

মিরপুরের কালশী বস্তি মসজিদের ইমাম আলী হাসানও জানালেন, গত এক মাস ধরে জুমার নামাজে করোনাকালের চেয়ে বেশি মুসল্লিকে আসতে দেখছেন তিনি। তার ধারণা, রাজধানীতে আবার ফিরছেন মানুষ।

এদিকে করোনার কারণে প্রায় ৬০ হাজার ভাড়াটিয়া পরিবার ঢাকা ছাড়া হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভাড়াটিয়া পরিষদ। পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মানুষ ঢাকা ছেড়েছে বেশি। তাদের অধিকাংশই চাকরি হারিয়েছেন বা কিংবা ব্যবসা ছেড়েছেন।

তিনি বলেন, গত জুলাই, আগস্ট পর্যন্ত অনেক ফ্ল্যাট খালি ছিল। সেপ্টেম্বর থেকে আবার অল্প বিস্তর বাসা ভাড়া শুরু হয়েছে। তবে এখন সবাই বাসা ভাড়া আগের চেয়ে কম বলছেন। করোনার আগে যেসব ফ্ল্যাট ১৫-১৮ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া যেত, ভাড়াটিয়ারা এখন সেগুলোই ৯-১০ হাজার টাকা ভাড়ায় নিতে চাইছেন।

করোনার আগে সপরিবারে মিরপুরের কাজীপাড়ায় বসবাস করতেন নওশাদ ইসলাম। একটি প্রাইভেট কোম্পানির গাড়িচালক ছিলেন। এপ্রিলে চাকরি চলে গেলে বিপাকে পড়েন। মে মাসে গ্রামে চলে যান। সেখানেও কাজের অভাবে ফের সেপ্টেম্বর মাসে একাই ফিরে আসেন। ওই মাসেই এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় একটি ব্যাংকের এটিএম বুথে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ পান তিনি।

নওশাদ বলেন, ‘মে মাসে আমি ঢাকা ছেড়ে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় চলে যাই। প্রতি মাসে ১১ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দিতে হতো। গ্রামে থাকলে ভাড়ার ওই টাকা নিয়ে অন্তত দুশ্চিন্তা করতে হবে না, এমনটা ভেবে এসেছি। কিন্তু গ্রামে খাপ খাইয়ে নিতে পারিনি। নগরীতেই আবার ফিরে আসতে হলো।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads