• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯
এবার ইউএনওর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ চেয়ারম্যানের

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

এবার ইউএনওর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ চেয়ারম্যানের

  • লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ নভেম্বর ২০২০

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লাঞ্ছিতের অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। শনিবার বিকাল ৫টায় নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস ৭টি অভিযোগ তোলেন তিনি।

এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অসদাচরণ, দুর্ব্যবহার ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তুলে উপজেলার ১৭ জন অফিসারের গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়ের করে বিভিন্ন দপ্তরে অনুলিপি পাঠিয়েছেন ইউএনও।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, ৪৭ হাজার ভোটে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দুর্নীতিমুক্ত মডেল উপজেলা গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। দায়িত্বগ্রহণের পরে বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আসায় কর্মকর্তাদের সতর্ক করি এবং জনগণের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করতে ইউএনওকে জানাই। একইসঙ্গে বিগত অর্থ বছরের উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি চেয়ে দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠাই। এতে সব দপ্তরের কর্মকর্তারা অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একইসঙ্গে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর পেয়ে ইউএনওকেও দুর্নীতিমুক্ত থাকার আহ্বান জানাই। এটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ায় বলে যোগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। 

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় এসব অনিয়মের বিরোধিতা করায় ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে আমি সভা অসমাপ্ত রেখে নিজের কার্যালয়ে চলে আসি। এরপর ইউএনও তাকে গালমন্দের মিথ্যা নাটক তৈরি করে নিজেদের অনিয়মের অপরাধ ঢাকতে অফিসের সেবা বন্ধ রেছে সব কর্মকর্তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইউএনওর বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলো হলো- ইউএনও মনসুর উদ্দিন যোগদানের পর থেকে কাল্পনিক ও একই প্রকল্প বারবার দেখিয়ে খেয়াল খুশিমত সরকারি টাকা ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। মুজিববর্ষের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে টাকা আত্মসাৎ করেন। হাটবাজারের ইজারার টাকা দীর্ঘদিন নিজস্ব তহবিলে রেখে তার ১০ শতাংশ কমিশন নিয়ে জমা করেন। উপজেলা কোয়ার্টার মেরামতসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিজেই ঠিকাদার হিসেবে করছেন ইউএনও। চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ, সরকারি গাছ কর্তনসহ  নানা দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে সাবেক গাড়িচালক আজিজুলকে ব্যবহার করতেন ইউএনও। যা প্রকাশ পেলে নিজেকে বাঁচাতে চালক আজিজুলকে বরখাস্ত করেন। রেজুলেশন ছাড়াই উন্নয়নমূলক কাজ নামকাওয়াস্তে করে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেন ইউএনও। জনস্বাস্থ্যের টিউবওয়েল বিতরণে কোনো ধরনের পরিপত্র না মেনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। যেখানে সভাপতি হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরও নেওয়া হয়নি। নিজের বানানো নিয়মে উপজেলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইউএনও। 

এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করায় ইউএনও মনসুর উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সভায় ও অফিসে প্রতিবাদ করায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি মিথ্যা অভিযোগ আনেন। জীবনে মামলার মুখোমুখি হয়নি। আমার আচরণে ত্রুটি থাকলে উপজেলাবাসী তা জানতেন এবং আমাকে ভোট দিতেন না। তিনি বলেন, পুরো ছাত্র জীবন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। আমার আচরণে ত্রুটি থাকলে বঙ্গবন্ধু কন্যার আশ্রয় পেতাম না। ইউএনওসহ অফিসারদের দায়ের করা অভিযোগটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও দাবি করেন তিনি। 

 

উল্লেখ্য, গত ১২ নভেম্বর রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানে ফারুক ইমরুল কায়েসের নামে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন, মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেন।

এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবাইলে কল করে তার দলের লোকদের ডাকলে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনার পর থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনার পরপরই ইউএনওসহ উপজেলার সব দফতরের কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। 

পরে ওইদিন রাতে ইউএনওসহ উপজেলার ১৮জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক বরাবরে এ সংক্রান্ত গণস্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ  দায়ের করেন। যার স্মারক নং - ০৫.৪৭.৫২০২.০০০.০২.০৮৩.২০- ৭৬৪। 

এর অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে পাঠানো হয়। অভিযোগে উপজেলা পরিষদ আইনের লঙ্ঘন করায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads