• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
শিল্প-কারখানার বর্জ্যে অস্তিত্ব সংকটে সুতাং নদী

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

শিল্প-কারখানার বর্জ্যে অস্তিত্ব সংকটে সুতাং নদী

  • ফয়সল চৌধুরী, হবিগঞ্জ
  • প্রকাশিত ২৫ মার্চ ২০২১

শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে হবিগঞ্জের সুতাং নদীর পানি যেন প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে। নদীতে স্বচ্ছ পানির কোনো অস্তিত্ব নেই, আছে শুধু শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের কালো কুচকুচে পানি। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীটি এখন মৃতপ্রায়। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করা ও শিল্প-কারখানার বর্জ্য এ নদীটিকে মারণব্যাধিতে আক্রান্ত করেছে। এতে অস্তিত্ব হারাচ্ছে এ নদীটি। শিল্প বর্জ্যের দূষণে নদীটি এখন দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে নদীটি এক সময় মানুষের নিঃস্বার্থ উপকার করে যেত- সেই নদীটিই এখন মৃত্যুর ফাঁদ। এর প্রধান কারণ কিন্তু কোম্পানিগুলোতে নিয়মিত ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার) ব্যবহার না করা। ফলে মারাত্মক দূষণে পানি বিষাক্ত হয়ে মরে যাচ্ছে নদীর মাছ। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কয়েক হাজার জেলে। অন্যদিকে চাষাবাদে দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। এছাড়া নদীর পানি ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, সুতাং নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে লাখাই উপজেলার মাদনা এলাকা হয়ে কিশোরগঞ্জে মেঘনার শাখা কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৮২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৬ মিটার। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের নজরদারির অভাবে বহমান এ নদীটি কালের আবর্তে বিলীন হতে চলেছে। পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণের ফলে ভারত থেকে আসা উজানের পানি ও পলি মাটিতে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে নদীটি।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অলিপুর শিল্প এলাকার পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা জানান, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা কলকারখানার দূষিত বর্জ্য সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে। এখানে গড়ে উঠা অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নেই প্রয়োজনীয় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি)। যেসব কোম্পানিতে ইটিপি রয়েছে-সেগুলো অতিরিক্ত খরচের ভয়ে নিয়মিত চালানো হচ্ছে না। সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেখাতে অনেক কোম্পানি ইটিপি স্থাপন করেছে। কিন্তু এগুলো বন্ধ রেখে কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সুতাং নদীতে। অথচ শিল্প-কারখানাতে ইটিপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক। রহস্যজনক কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা এসব দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। ফলে নদীর তীরবর্তী সদর উপজেলার নুরপুর, রাজিউড়া, ফান্দ্রাইল, সানাবই, উচাইল, বেকিটেকা, নাজিরপুর, লুকড়া, লাখাই উপজেলার করাব, বুল্লা, বেগুনাই, বরগান্দিসহ বেশকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপাশি উদ্বেগজনক মানবিক সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে সুতাং নদীর পানি কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম বাবুল বলেন, প্রায় ছয় বছর পূর্বে জাইকার সহযোগিতায় কৃষিকাজে সেচের জন্য শৈলজুড়া নামক খালটি পুনঃখনন করা হয়। ওই খাল দিয়ে প্রাণ ও স্কয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানি এলাকাবাসীর বাধার মুখেও তাদের বর্জ্য ছাড়ছে। আর এসব বর্জ্য শৈলজুড়া খাল দিয়ে সুতাং নদীতে ঢুকছে। যার ফলে খালসহ নদীর পানি দূষিত ও দুর্গন্ধময় হয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনও রহস্যজনক কারণে এ ব্যাপারে নির্বিকার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কৃষি, মৎস্যসম্পদ, গবাদিপশু ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) স্থানীয়দের নিয়ে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণের অভিযোগে মাধবপুর উপজেলার শাহপুরে অবস্থিত মার লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে বন্ধ করে দিয়েছিল এলাকাবাসী। কিন্তু আবার গোপনে চালু হয়েছে কোম্পানটি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগসাজশে চলছে এসব অনিয়ম। তিনি বলেন, সুতাং নদী এখন স্থানীয়দের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে স্থানীয়দের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads