• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

আখাউড়ায় গ্রামে গঞ্জে জমজমাট ক্ষুদ্র ব্যবসা

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০২১

সকাল থেকেই গ্রামের পথে ঘাটে বাড়িতে বাড়িতে শোনা যায় ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক। সবজি,মাছ, মসলা, ফল, প্লাষ্টিক সামগ্রী,তৈরী পোশাক,গজ কাপড় লেইস ফিতা, চুড়ি, সহ বিভিন্ন প্রকার পণ্য নিয়ে তাদের চলছে হাঁকডাক । কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা ভ্যানগাড়িতে নিত্যপণ্য নিয়ে বিরামহীন ভাবে চলছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গঞ্জে । বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই তাদের পেশা বদল করেছেন। কেউ বাধ্য হয়ে কেউ বা জীবিকার তাগিদে করেছেন। এদিকে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গঞ্জে ভ্রাম্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠায় কর্মহীন অনেক লোকজন পেয়েছে নতুন কর্মের ঠিকানা। আর এই নতুন ঠিকানায় বিভিন্ন বয়সী লোকজন গ্রামের পথে ঘাটে বাড়িতে বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি,মাছ, মসলা, ফল, প্লাষ্টিক সামগ্রী,তৈরী পোশাক,গজ কাপড় লেইস ফিতা, চুড়ি, সহ বিভিন্ন প্রকারের ভোগ্যপণ্য সামগ্রী বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করছেন। তবে এক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় এসে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন।

করোনার পরিস্থিতিতে উপজেলার অন্ত‍ঃত শতাধিক পরিবার এই ক্ষুদ্র পেশায় যুক্ত হয়ে আছে বলে তাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বর্তমান এই পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্য সামগ্রী হাতের কাছে পেয়ে এলাকার লোকজনের মাঝেও অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে।

স্থানীয় লোজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করতে অনেক কষ্ট করে তাদের শহরে যেতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। বাজারের জন্য তাদের কোন প্রকার দু:শচিন্তা করতে হয় না। গ্রামে গ্রামে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের বিচরণ থাকায় সহজেই নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল পেয়ে খুশিমনে তারা ক্রয় করছেন।

সরেজমিনে আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম, তারাগন, রাধানগর, কলেজপাড়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে গিয়ে দেখা যায় ভ্যাম্যমান ব্যবসায়ীরা সকালে ভ্যান গাড়ি দিয়ে সবজি,মাছ,ফল, আর কাদে করে প্লাষ্টিক সামগ্রী,তৈরী পোশাক,গজ কাপড় লেইস ফিতাসহ বিভিন্ন প্রকার পণ্য সাধারণ মানুষের দোরগড়ায় নিয়ে যাচ্ছে।

বিক্রেতারা জানায় এক সময় তারা বিভিন্ন পেশার কাজ করতেন। কিন্তু করোনার পরিস্থিতিতে তাদের অনেকেরই পূর্বের পেশা নেই। জীবিকার তাগিদে এখন এই ক্ষুদ্র ব্যবসা করে দিনানিপাত করছেন। তবে এসব নিত্যপণ্যসামগ্রী গ্রামে গঞ্জে ভালো চাহিদা রয়েছে।

মাছ বিক্রেতা মো.হোসেন মিয়া জানায়, করোনা পরিস্থিতির আগে তিনি একটি হোটেল কাজ করতেন। কিন্তু গত প্রায় ১ বছর ধরে ব্যবসা মন্দা থাকায় মালিক তাকে আর হোটেলে রাখেন নি। কর্ম হারিয়ে খুবই বেকায়দায় পড়তে হয় তাকে। এক পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি শুরু করে বলে জানায়। আগে যেখানে হোটেল থেকে দৈনিক ৩শ টাকা মজুরি পেতাম এখন মাছ বিক্রি করে দৈনিক ৬শ টাকার উপর আয় হয় বলে জানায়।

সবজি বিক্রেতা মো.সবুজ মিয়া জানায়, তিনি ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকুরি করতেন। করোনা আসায় গার্মেন্টস বন্ধের উপক্রম হওয়ায় তিনি খুবই সমস্যায় পড়েন পরিবার নিয়ে। কোন উপায় না পেয়ে পরিবার নিয়ে বাড়িতে এসে পড়েন। এক পর্যায়ে স্থানীয় বাজার থেকে নানা প্রকার সবজি এনে ভ্যান গাড়ি দিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করছেন। সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত চলে তার বেচাকেনা। প্রতিদিন খরচ বাদে ৪ শ টাকার উপর আয় হয় বলে জানায়।

শাহআলম বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ট্রেনের মধ্যে আচার বিক্রি করছেন। তার পরিবারে ২ ছেলে ১ মেয়েসহ ৫ জন সদস্য রয়েছে। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে তাকে বিপাকে পড়তে হয়। তাই আচার বিক্রি বাদ দিয়ে গ্রামে গ্রামে ফল বিক্রি করছেন। তবে আচার বিক্রি থেকে ফলে ভালো আয় হয় বলে জানায়।

মাছ বিক্রেতা আলফু মিয়া বলেন প্রতিদিন ভোরে স্থানীয় বাজার থেকে মাছ নিয়ে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করা হয়। গ্রামে মাছের চাহিদা ভাল থাকায় নানা প্রকার কাছ আনা হয়। প্রতিদিন ৬০-৭০ কেজি মাছ ২ থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে বিক্রি গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করা হয়। ওই মাছ বিক্রি করে ৫শ টাকার উপর আয় হয় বলে জানায়।

আম বিক্রেতা আলফু মিয়া বলেন, শহরের তিনি ঢাকায় ছাপা খানায় কাজ করতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজের চাহিদা তেমন না থাকায় এক প্রকার বাধ্য হয়ে বাড়িতে আসতে হয়েছে তাকে। অন্যকোন কাজ জানা না থাকায় জীবন বাঁচাতে তিনি ভ্যান গাড়ি দিয়ে গ্রামে গ্রামে আম বিক্রি করছেন। গ্রামের ভ্রাম্যমান ব্যবসায় দৈনিক ৩শ থেকে ৪শ টাকায় আয় হয় বলে জানায়।

সরাইল এলাকার আলাল মিয়া বলেন তিনি আখাউড়া মসজিদপাড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গজ কাপড় বিক্রি করছেন। এক সময় তিনি ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকুরি করতেন। চাকুরি না থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ভৈরব থেকে গজ কাপড় কিনে মানুষের দোরগড়ায় নিয়ে বিক্রি করে খরচ বাদে দৈনিক ৬ শটাকার উপর আয় হয় বলে জানায়। যে দিন আকাশ ভাল থাকে না ওই দিন অবসর থাকতে হয়।

মসলা বিত্রেতা সিদ্দিক মিয়া বলেন, লকডাউন থাকায় স্থানীয় হাটবাজারে মসলা নিয়ে বিক্রি করা যায় না। তাই তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করছেন। তবে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করা কষ্ট হলে ও আয় ভালো হয়।

এদিকে ভ্রাম্যমান ব্যবসার সাথে জড়িত সবুজ মিয়া, লাল বাজারের আনু মিয়া, ভবানিপুরের গোপাল, রাজেন্দ্রপুরের আলফু মিয়া ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মালেক মিয়া, মামুনসহ একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানায়, সবজি,মাছ,ফল, প্লাষ্টিক সামগ্রী,তৈরী পোশাক,গজ কাপড়সহ বিভিন্ন প্রকার পণ্য বিক্রির আয় দিয়ে চলছে তাদের সংসার।

পৌর শহরের তারাগন গ্রামের ক্রেতা লিপি আক্তার বলেন, তার স্বামী প্রবাসে থাকে। বাড়িতে তেমন লোকজন নেই। তাছাড়া বর্তমান এই পরিস্থিতিতে ইচ্ছে করলেই শহরে গিয়ে সব সময় বাজার করা সম্ভব হয় না। তাই ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিত্যদিনের বাজার করতে পেরে তিনি খুবই খুশি।

মর্জিনা বেগম বলেন, মাছ সবজিসহ সবকিছুই এখন সকাল বেলা বাড়িতে পাওয়া যায়। ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজারের দরেই কেনা বেচা করায় সব সময় তাদের কাছ থেকে তিনি নিত্যপণ্য ক্রয় করছেন। বড় ধরনের কোন প্রয়োজন ছাড়া কষ্ট করে আর বাজারে যেতে হয় না।
মো. খোরশেদ মিয়া বলেন, দৈনিক শ্রম বিক্রি করে তার সংসার চলতে হয়। বাজারে আসা যাওয়া করতে অনেক সময় চলে যায়। সেই সাথে অতিরিক্ত টাকা ও খরচ হয়। তাই সকালে ঘরের সামনে নিত্যপণ্য পাওয়ায় বাজারের জন্য এখন আর চিন্তা করতে হয় না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads