• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

একই জমিতে ৩ ফসল : আখাউড়ায় আউশের বাম্পার ফলন

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ আগস্ট ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে মাঠজুড়ে আউশ ফসলের ক্ষেত সবুজে ভরে উঠেছে। চোখ জুড়ানো দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে সবুজের সমারোহ হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। যে দিকে চোখ যায় শুধু আউশের ক্ষেতে সবুজ আর সবুজ চোখে পড়ছে। মাঠে মাঠে বাতাসে দোলা খাচ্ছে আউশ ধানের গাছ। ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। মাঠের ধানকে ঘিরে কৃষকরা স্বপ্নের জাল বুনায় তাদের মনে দোলা দিতে থাকে অনাবিল আনন্দও।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়া ও বাজারে বিক্রিতে ধানের দাম ভাল পাওয়া এবং সরকারী ভাবে সার্বিক সহায়তায় বোরো ধান ঘরে তোলার পর পরই আউশ ধান আবাদে ঝুঁকে পড়েন। একই জমিতে ৩টি ফসল হওয়ায় কৃষকরা বেজায় খুশি। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা মাঠের ধানকে ঘিরে স্বপ্নের জাল বুনছেন। এখন পযর্ন্ত জমির যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে স্থানীয় কৃষকরা বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়,চলতি মৌস‍ুমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হলেও বৃষ্টিপাতের অভাবে প্রায় ১শ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। সরকার আউশ আবাদের জন্য বিনামূল্যে সার,বীজ প্রদান করেন। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা জমির পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানায় আউশ হল একটি বর্ষালী ও লাভজনক ধান । এই চাষ আবাদে খরচ তুলনামূলক অনেক কমহয়। সেইসাথে ফলন ও ভাল হয়। তাছাড়া এই ধানের আবাদ তুলে আবার পুনরায় ওই জমিতে সহজে রোপা আমন ধানের চাষ করা যায়। এতে আমন আবাদের কোন ক্ষতি হবে না। সময়মতো বৃষ্টিপাত হলে স্থানীয় কৃষকরা আরো বেশী জমিতে আউশ ধান রোপণ করতে পারতো।

সরেজমিনে মোগড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বোরো ক্ষেতে সবুজে সমারোহ হয়ে আছে। যে দিকে চোখ যায় মাঠে শুধু আউশ ধান ক্ষেত চোখে পড়ে। ইতিমধ্যে কোন কোন জমিতে ধানের শীষ বের হতে শুরু হয়েছে। কোথাও জমি ধান কাটা শুরু হয়েছে ।

সঠিক সময়ে চারা রোপন,নিবিড় পরিচর্যা ও সার দেয়া সবই করেছে স্থানীয় কৃষকরা। সেইসাথে ফলন ভালো করতে নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তারা তদারকিও করছেন। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আউশ ধানের ফলন ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।

এদিকে কৃষি অফিস বলছেন তারা রোগবালাই ও পোকামাকড় হতে ফসল রক্ষায় মাঠে মাঠে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কৃষকদেরকে সার্বিক ভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছেন ।

মোগড়া এলাকার কৃষক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, এবছর ৩ বিঘা জমিতে আউশ ধান তিনি আবাদ করেছেন। বর্ষা মৌসুমে আউশ ধান চাষের সময় পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। সরকার আউশ আবাদের জন্য বিনামূল্যে সার,বীজ দেওয়ায় আমন বোরো চাষের থেকে খরচ অনেক কম হয়। । তাই জমিতে আউশ ধান আবাদ করা হয়। বর্তমানে জমির অবস্থা খুবই ভালো। আশা করছি আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে ধান কাটা হবে। বিঘা প্রতি ১৭-১৮ মন ধান পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।

কৃষক শহীদ মিয়া বলেন, এ বছরই তিনি প্রথম ৫০ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। বোরো ধান আবাদে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় ও সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে সার বীজসহ অন্যান্য উপরণ দেওয়ায় আউশ ধান আবাদে তার আগ্রহ বেড়ে যায় বলে জানায়। আগামী সপ্তাহে তার জমির ধান কাটা হবে বলে জানায়। বিঘা প্রতি ১৮-২০ মন ধান পাওয়া যাবে বলে জানায়।

কৃষক মো. স্বপন মিয়া বলেন গত কয়েক বছর ধরে তিনি আউশ ধান আবাদ করে আসছেন। এবছর তিনি বিনামূল্যে সার বীজসহ অন্যান্য উপকরণ পাওয়ায় ৩ বিঘা জমিতে আউশ ধান আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি ১ বিঘা জমিতে ধান কেটেছেন। বোরো ধানের চাইতে তার আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে তার বলে জানায়। আগামী সপ্তাহে বাকী ধান কাটা হবে। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি খুবই খুশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় আউশ ধানের আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে এ উপজেলায় আউশ ধানের আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন এ উপজেলার ২০০ জন কৃষকের মাঝে আউশ আবাদের জন্য বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়। ফলন ভাল করতে কৃষকদেরকে সব রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানায়। যারা আউশ ধান আবাদ করতে পারেনি তারা আমন ধান আবাদ করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads