• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
দেড় কোটি টাকার সরকারি গুচ্ছগ্রাম ৫ বছরেই বসবাসের অনুপযোগি

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

দেড় কোটি টাকার সরকারি গুচ্ছগ্রাম ৫ বছরেই বসবাসের অনুপযোগি

  • এস কে সাহেদ, লালমনিরহাট
  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ভারতীয় ভু-খণ্ড বেষ্টিত বহুল আলোচিত দহগ্রাম ইউনিয়নে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি গুচ্ছগ্রামের ঘর তদারকি আর সংস্কারের অভাবে এখন বসবাসের অনুপযোগি। নেই যোগাযোগের রাস্তা, ধসে পড়েছে ঘরের মাটি।

সরেজমিন জানা গেছে, সরকারী ঘর নির্মাণের পরের বছর থেকে ১৩০টি ঘরের ৮০টি ঘর ফাঁকা পড়ে থাকার ৪ বছর পেরিয়ে গেছে। বাকি ৫০টি ঘরে লোকজন বসবাস করলেও তাদের নানামূখী সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। বন্যার পানিতে অধিকাংশ ঘর থেকে মাটি সরে গেছে। গুচ্ছগ্রামটির সাথে যোগাযেগের একমাত্র রাস্তাটিও ধসে গেছে। ধ্বসে গেছে সেতুর সংযোগ সড়ক। দীর্ঘদিন মেরামত না করায় গুচ্ছগ্রামটি বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে তদারকি আর সংস্কারের অভাবে সরকারের দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘরগুলো এখন কোন কাজেই আসছে না।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ৫ বছর আগে ওই গুচ্ছগ্রামটি নির্মাণে মাটি ভরাট করতে ব্যয় করা হয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন চাল। ঘর নির্মানে ব্যয় করা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। মোট ১৩০টি ভূমিহীন পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয় এসব ঘর।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারীদের অভিযোগ, মাটি ভরাটের কাজ করেছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা (পিআইও) ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকের মাধ্যমে মাটি সংগ্রহ ও ভরাট করার কথা ছিলো। কিন্তু তারা গুচ্ছগ্রামের পাশেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে তা দিয়ে ঘর ও উঠনের মাটি ভরাটের কাজ করেন। এ কারনে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ঘরগুলো থেকে বালু মাটি ধসে গেছে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে গুচ্ছগ্রামের ঘর পাওয়া লোকজন প্রতিবাদ করেছিলেন কিন্তু তাদের প্রতিবাদ কোন কাজে আসেনি। গুচ্ছগ্রামটির পাশে গাইড ওয়াল নির্মান করার কথা থাকলে শুধু সামান্য কিছু জিও-ব্যাগ ফেলে বরাদ্দের সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।

গুচ্ছগ্রামের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, তাদের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ও সেতুর সংযোগ সড়ক বন্যার পানিতে ধসে যাওয়ায় অনেক কষ্ট করে বসবাস করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে একাধিকবার আবেদন করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তাই রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালিয়ে যারা জীনযাপন করেন তারা গুচ্ছগ্রামের ঘর ফেলে অন্যত্রে বসবাস করছেন। ধসে যাওয়ায় সেতুর সংযোগ সড়কে তারা নিজেরাই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচল করছেন বলেও তিনি জানান।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী ফাতেমা বেগম বলেন, ঘর থেকে বালু ধ্বসে গেছে তাই তারা ঘরে বসবাস করতে পারছেন না। গাইডওয়াল থাকলে ঘর থেকে মাটি ধ্বসে যেতো না। বর্তমানে যারা বসবাস করছেন তারাও্ ঘর ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী শামসুল ইসলাম জানান, ঘর নির্মানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। তারা নিম্নমানের ঘরগুলোতে বসবাস করতে পারছেন না। তিনি গুচ্ছগ্রামের ঘরে তিনমাস বসবাস করার পর ঘর ছেড়ে দিয়ে এখন অন্যত্রে বসবাস করছেন। 

তবে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, গুচ্ছগ্রামটি তিস্তা নদীর পাড়ে। এ কারনে প্রতিবছর বন্যার সময় গ্রামটি প্লাবিত হয়। বন্যায় ‘রাস্তা ও সেতুর সংযোগ সড়ক ধ্বসে যাওয়ায় গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারীরা সমস্যায় পড়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, কাজের সুবিধার জন্য শ্রমিকের পরিবর্তে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে গুচ্ছগ্রামে মাটি ভরাটের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু এতে কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়নি। এ প্রকল্পে গাইডওয়াল ধরা ছিলো না। বাঁশের পাইলিং করে জিও-ব্যাগ ফেলে মাটি ধ্বসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে একটি প্রোটেকশন ওয়ার্ক করেছিলেন বলেও তিনি জানান।

পাটগ্রাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) উত্তম কুমার নন্দীর জানান, অনেকদিন আগের কাজ তাই  কিছু মনে নেই। তবে কাজটি ইউপি চেয়ারম্যান করেছিলেন।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুর রহমান বলেন, তিনি উপজেলায় নতুন যোগদান করেই গুচ্ছ গ্রমের মানুষজনের সাথে মতবিনিময় করেছেন। শীগগিরই দহগ্রামের সরকারি ওই গুচ্ছগ্রামে যাতায়াতের সড়ক ও সেতু মেরামত করা হবে। ঘরগুলো বসবাসের উপযুক্ত করতে তিনি নিজেই তদারকি করছেন বলেও জানান।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads