• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় পা হারালো ৬ দিনের শিশু

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় পা হারালো ৬ দিনের শিশু

  • এরশাদ হোসেন, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
  • প্রকাশিত ০৪ অক্টোবর ২০২১

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ৬ দিনের শিশু অনিক কবিরাজের ভুল চিকিৎসায় পা হারিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহ্পুর মধ্যপাড়া এলাকায়।

কবিরাজ ও কথিত ডাক্তারের নাম নরেন্দ্রনাথ ওরফে কিশোর। তার বাবা হরিপদও একজন কবিরাজ বলে জানা গেছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শিশু অনিক কান্না করায় গ্রামের কলাকান্দির কবিরাজ নরেন্দ্র নাথ ওরফে কিশোরের কাছে নিয়ে যায়। কবিরাজ কিশোর ঝার-ফুক দেয়। পরে শিশুটির মা ও বাবার অনুমতি না নিয়েই শিশুর পায়ে ইনজেকশন পুশ করে।
শিশুটিকে বাসায় নিয়ে এলে রাতে কান্না না থেমে আরো বেড়ে যায়। দ্বিতীয় দিন আবার সেই কবিরাজ এর নিকট নিয়ে গেলে সেই দিন ও কবিরাজ আবার একটি ইনজেকশন পুশ করে। তৃতীয় দিন শিশুর পা ফুলে গেলে কবিরাজ বলে ঢাকা মেডিকেলে দেখাতে। কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে একালার স্থানীয় মাদবরদের নিকট বিচার দেন শিশু অনিকের বাবা আবুল বাসার। মাদবররা বিচার কবিরাজকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে কবিরাজ শিশুটিকে ইনজেকশন দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তাকে চাপপ্রয়োগ করলে কবিরাজ তাদের কথা মত বাচ্চার চিকিৎসার সকল খরচ বহন করবে বলে জানান।

কথিত ডাক্তার ও কবিরাজ নিজেই প্রথমে শিশুটিকে স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি করান।সেখানে শিশু অনিক এর অবস্থা অবনতি হলে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার শিশুটিকে ভর্তি করাতে না পেরে বাংলাদেশ স্পেশালাইড হাসপাতালে ভর্তি করার। তবে সেখানে এনআইসিউ না থাকায় ধানমন্ডিতে মাদার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসক জানান শিশু অনিকের ডান পায়ের হাড়ে পচন ধরেছে। এখন তার পা কাটা ছাড়া কোনো উপায় নেই। অবশেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শিশুটির পা কেটে ফেলা হয়।

অনিকের বাবা মা বাসায় ফিরে ২৩ দিন পর নির্মম ঘটনার কথা সাংবাদিকদের নিকট খুলে বলেন।

শিশুর বাবা আবুল বাসার অভিযোগ করে বলেন, কবিরাজ না বলে ইনজেকশন পুশ করার কারনে আমার আদরের ধন আজ পঙ্গু। আমি এর সঠিক বিচার দাবি করছি।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাদবর খবির মিয়া বলেন, শিশুটির বাবা আমার আত্নীয় কবিরাজ তার ভুলের সব ঘটনা সত্যি বলেছে এবং কবিরাজ নিজে বাচ্চার চিকিৎসার সব খরচ দিবে বলে হাসপাতালে ভর্তি ও করিয়েছেন। জানতে পেড়েছি ২ লাখ ১০ হাজার টাকার খরচ করেছে। পরিবার আমাকে জানিয়েছেন পা কাটার পর নাকি সে মাদার কেয়ার হাসপাতালে টাকা পরিশোধ করে চলে এসেছে।

কবিরাজ কিশোর নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি একজন পল্লী ডাক্তার। আমি প্রায় ৩৫ বছর ধরে এ কাজ করছি। ওই শিশুটির বয়স যখন ৬ দিন তখন শিশুটিকে তার মা আমার কাছে নিয়ে আসলে আমি তাকে নাভী শুকানো ও ঠান্ডা ভালো করার জন্য দুদিন দুটি ইনজেকশান পুশ করি। পরে জানতে পারি যে তার পায়ে ইনফেকশন হয়েছে। এরকম অবস্থায় স্থানীয়রা মিমাংসা করে দেয় যে, শিশুটিকে চিকিৎসা বাবদ সকল খরচ আমি বহন করবো। আমি স্থানীয়দের শালিসে রাজি হয়ে শিশুটিকে প্রথমে ঢাকার ওয়ারী এলাকায় আজগর আলী হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পেশালাইড হাসপাতাল এবং শেষে ধানমন্ডি মাদার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করি। শেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শিশুটির পা কেটে ফেলতে হয়। এতে আমার মোট ২ লাখ ১০ দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরাণীগঞ্জ সার্কেল শাহাবুদ্দিন কবির বলেন, ভুল চিকিৎসার জন্য শিশুটির পা কেটে ফেলা অত্যন্ত দুঃখজনক। কেরানীগঞ্জের অলিগিলতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নামে বেনামে ফার্মেসিতে যারা অপ চিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তাদের বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads