মানিকগঞ্জে প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠায় মানা হচ্ছে না আইন। সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাসপাতাল। এসব প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়োজিত বেতনভুক্ত দালালরা সরকারি হাসপাতাল থেকে নানা প্রলোভনে রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে। সরকারি আইন অনুযায়ী সরকারী হাসপাতালের এক কিলোমিটার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আধা কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে কোন প্রাইভেট হাসপাতাল থাকতে পারবে না। কিন্তু মানিকগঞ্জে এই আইন মানা হচ্চে না। চলছে রমরমা ক্লিনিক বাণিজ্য। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অর্থের বিনিময়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য অনুমোদন এনে চিকিৎসাসেবার নামে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এইসব প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক ডাক্তার ও অধিকাংশ স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। যার ফলে শত অনিয়ম আর ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও চুপ থেকে যাচ্ছে সিভিল সার্জন অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোন রকম খোঁজ খবর না নিয়েই এসব হাসপাতালের অনুমোদন দেয়ার ফলে হাসপাতাল ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তাররা সঠিক চিকিৎসা দেয়ার পরিবর্তে উপার্জনকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। যার ফলে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে তিনটি সমস্যা মহামারি আকার ধারণ করছে। ডাক্তার বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটছে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি হয়ে লাশ হয়ে যেতে হচ্ছে কবরে। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে প্রতিনিয়তই চিকিৎসাসেবার নামে ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা।
জানা গেছে, গত একমাসে মানিকগঞ্জের ফিরোজা জেনারেল হাসপাতাল, ডেলটা জেনারেল হাসপাতাল, লাইফ কেয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তেমন কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এর আগে, এ্যাপোলো হাসপাতাল ও সিদ্দিকীয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামক হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যায়। রোগী মারা যাওয়ার পর এসব হাসপাতালের মালিক তাৎক্ষনিক ভাবে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে দেয়। সরকারি বিধি মালা অনুযায়ী এসব হাসপাতালগুলো পরিচালিত না হওয়ার ফলে ভুল চিকিৎসায় অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে প্রাণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাইভেট হাসপাতাল। ছোট খাটো বিল্ডিংয়ের রুম ভাড়া নিয়ে আবার অনেকেই নিজেরাই বিল্ডিং নির্মাণ করে হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ হাসপাতালগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সরু গলি ও চিপা সিড়িঁ ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক হাসপাতাল জনবহুল মার্কেটের উপরতলা ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ভবন মূলত হাসপাতাল বা ক্লিনিকের জন্য নির্মাণ করা হয়নি। অথচ এসব ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ লুৎফর রহমান বলেন, লাইফ কেয়ার হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি। যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফলতি বা ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী প্রাইভেট হাসপাতালগুলো পরিচালিত না হলে সেসব হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ইতিমধ্যেই প্রাইভেট হাসপাতালের তালিকা তৈরি করেছি। পূজার কারনে অভিযান পরিচালনা করতে বিলম্ব হয়েছে। খুব শ্রীঘ্রই এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।