• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯

সারা দেশ

আখাউড়ায় ভূমিদস্যুর মিথ্যা মামলায় কারাগারে মুক্তিযোদ্ধা

  • আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৬ ডিসেম্বর ২০২১

মুক্তিযুদ্ধ একটি চেতনা নাম। বাঙালির অস্তিত্বের নাম। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেছিল এদেশের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই। তৎকালীন সময়ে মা মাটি ও দেশের টানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্র যুবক তরুণসহ সকল নারী পুরুষের অংশগ্রহন ছিল এক বিরল ইতিহাস। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশ নিয়ে স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ তারা অবদান রাখেন।

১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আজ এক আনন্দের দিন, উৎসবের দিন। কারণ আজ মহান বিজয় দিবস। এ দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা চত্বরে অবস্থিত স্মৃতি সৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। বেলা বারার সাথে সাথে যেন স্মৃতি সৌধে মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। সকাল থেকেই উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকজন পুষ্পমাল্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পাশাপাশি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হয়। কিন্তু সেই আনন্দ উৎসব আর রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো অনুষ্ঠানে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছাত্তার মিয়া (৭৮) । ভূমিদস্যুদের একটি মিথ্যা মামলায় তিনি গত ১৫ দিন ধরে কারাগারে আটক আছেন। অসুস্থ স্বামীর মুক্তির প্রতীক্ষায় প্রখর গুণছেন স্ত্রী হনুফা বেগম। পিতা জেলহাজতে আটক থাকায় সন্তানদের নাওয়া খাওয়া ও এক প্রকার বন্ধ রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দাবী, একটি ভূমিদস্যু চক্র মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বাবাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ওই মুক্তিযোদ্ধাকে জেল হাজত থেকে মুক্তি এবং বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও আখাউড়ার ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে একটি আবেদন করেছে।

ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছাত্তার মিয়া আখাউড়া শহীদ স্মৃতি কলেজের নৈশ প্রহরী হিসেবে চাকুরী করতেন। তাঁর বসবাসের কোন জায়গা ছিল না। প্রায় ৩৫ বছর আগে কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা এ. এম. মোঃ ইছহাক (বীরপ্রতীক) তাকে (বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্তার মিয়া) কলেজের পূর্ব পাশে কলেজের মালিকীয় ৫ শতক জায়গা দেন। তিনি সে জায়গায় ঘর দরজা নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গত ১০/১২ বছর পূর্বে হঠাৎ করে পৌর শহরের রাধানগরের মৃত দুবরাজ ভূইয়ার ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রকাশ রফিক ভেন্ডার দাবী করে এ জায়গা রফিক ভেন্ডারের। মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ওই জায়গায় জায়গায় ভাড়া থাকে। এক পর্যায়ে রফিক ভেন্ডার মুক্তিযোদ্ধা ছাত্তার মিয়ার কাছে ২ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দাবী করে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছাত্তার মিয়া ও তার দুই ছেলেকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা করেন। গত ২ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছাত্তার মিয়াকে জামিন না দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছাত্তার মিয়ার স্ত্রী হনুফা বেগম বলেন, রফিকুল ইসলাম মিথ্যা মামলা সাজাইয়া আমার স্বামীকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। আমার স্বামী অসুস্থ। আমার সরকারের কাছে ন্যায় বিচার চাই।

মামলার বাদী মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, খরিদা সূত্রে আমি ওই ৩ শতক জায়গার মালিক। লিখিত চুক্তিপত্রে ছাত্তার মিয়া আমার ভাড়াটিয়া। বছর খানেক ঠিকমত ভাড়া দিয়েছে। কিন্তু বিগত ২০০৭ সাল থেকে তালবাহানা করে ভাড়া দেয় না। তাই আমি আদালতে মামলা করেছি।
আখাউড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ জামসেদ শাহ বলেন, একটি ভূমিদস্যু চক্র জাল কাগজপত্র করে মুক্তিযোদ্ধা ছাত্তার মিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বিজয়ের মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধা কারাগারে আছে এতে আমরা খুবই মর্মাহত। আমি এর সুষ্ঠু তদন্তক্রমে বিচার চাই।

আখাউড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবু জামাল বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছাত্তার মিয়া কলেজের জায়গায় বসবাস করছেন। রফিকুল ইসলামের ভাড়াটিয়া দাবী সঠিক নয়।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের প্রশাসক রুমানা আক্তার বলেন বিজয়ের মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধা জেলে আছেন এটি খুবই দু:খজনক ঘটনা। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি তাঁর মুক্তির ব্যাপারে আইনগত ভাবে সহযোগিতা করব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads