লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টিঘর এলাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক এর পাশে তিস্তা নদী থেকে অবৈধ বোমা মেশিন বসিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। অব্যাহতভাবে নদী বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি, বাড়িঘর, গাছপালা।
গত দুই মাস ধরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ বোমা মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে বিশাল বালুর স্তুপ করেছেন নরিশ পোল্ট্রি ফার্ম লিমিটেড।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টিঘর এলাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক এর পাশে গত দুই মাস ধরে তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের উৎসব চলছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতিদিন শত শত হাজার বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে নরিশ পোল্ট্রি ফার্ম লিমিটেড এর বিরুদ্ধে। অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসত-বাড়িসহ আবাদি জমি দেবে ভূমিধস ও নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টিঘর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে বোমা মেশিনে দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক এর পাশে বালু স্তুপ তৈরি করছেন নরিশ পোল্ট্রি ফার্ম লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। প্রতি দিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বালু উত্তোলনের কাজ। বালি উত্তোলনে দশজন শ্রমিক কাজ করছেন। এসময় নরিশ পোল্ট্রি ফার্ম লিমিটেড কোন লোকজন কে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় আকবার আলী ও শফিকুল ইসলাম বলেন, নরিশ পোল্ট্রি ফার্ম লিমিটেড কোম্পানি অবৈধ ভাবে বোমা মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলক করায় আমরা ঘর বাড়ি, জমির ফসল নিয়ে বিপাকে আছি কখন যে ভেংঙ্গে যায়। বালু তোলা বন্ধের প্রতিবাদ করলে একটি গ্রুপ আমাদের ভয় ভীতি দেখিয়ে আসছে।
একই অবস্থা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে চলছে। নদীগুলো থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তবে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙগন ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। নদী গর্ভেবিলীন হতে পারে নদীর তীরবর্তী বসত-বাড়িসহ ফসলী জমি।
অথচ ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান বা নদ-নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে সেই ব্যক্তি বা তাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তির অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা হতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া এই আইনের অধীন অপরাধ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার করা যাবে।
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান প্রার্থী মফিজুল ইসলাম জানান, আমার জমি থেকে বোমা মেশিন দিয়ে নারিশ পোল্ট্রি ফার্ম কোম্পানির লোকজন বালি তুলছে। এখানে আমার কিছু নেই। আমার জমিতে একটি পুকুর হচ্ছে এটাই আমার লাভ।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্তকর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম জানান, নদী থেকে বালি উত্তোলনের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেন নি। তবে আমাদের লোকজন সেখানে গিয়ে খোঁজ খবর নিবেন।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলার নির্বাহী অফিসার সামিউল আমিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান,নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু বা মাটি উত্তোলন করা অবৈধ। যারা বালি উত্তোলনের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।