• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
৩ বছর ধরে চোখের পানি ফেলেছেন হালিমা

সংগৃহীত ছবি

সারা দেশ

৩ বছর ধরে চোখের পানি ফেলেছেন হালিমা

  • কক্সবাজার প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

হালিমা খাতুন, পঞ্চাশোর্ধ এক নারী। বয়স যতটা হয়েছে। তার চেয়ে শরীর অনেক বেশি খারাপ। এই সেই হালিমা খাতুন, যার সন্তানের নামের সঙ্গে এক ইয়াবাকারবারির নামের মিল থাকায় সন্তানকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে ওসি প্রদীপের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। গত ৩ বছর ধরে হালিমা খাতুন শুধু চোখের পানিই ফেলেছেন। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে চেয়েছেন ওসি প্রদীপের অমঙ্গল।

লোকমুখে শুনেছেন, ৩১ জানুয়ারি ওসি প্রদীপের ফাঁসির আদেশ দিবেন আদালত। তাই তার মন মানেনি। সেই রায় নিজ কানে শুনতে অন্যের দ্বারস্থ হয়েছেন। অন্যের কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে এসেছেন কক্সবাজার শহরের আদালত প্রাঙ্গণে।

৩১ জানুয়ারি বিকেলে টেকনাফ থেকে ওসি প্রদীপের রায় শুনতে আসাদের কাছ থেকে এই প্রতিবেদক খবর পায় হালিমা খাতুন কক্সবাজার এসেছেন। অনেক  খুঁজাখুঁজির পর আদালত সংলগ্ন মুন্সী খানার একপাশে পাওয়া যায় হালিমা খাতুনকে। চোখে মুখে বিমর্ষতার ছাপ নিয়ে একপাশে নির্বাক বসে আছেন।

সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়েই হালিমা খাতুন চোখের পানি লুকিয়ে রাখতে পারেননি। বলেন, সকাল থেকেই আদালতে বসে আছি। একটি খাবার প্যাকেট দেখিয়ে বলেন, টেকনাফের এক লোক খাবার প্যাকেটটি দিয়ে গেছেন। কিন্তু পেটে ঢুকছে না। এই বলেই অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকেন তিনি।

এক পর্যায়ে বলেন, কয়েক বছর আগের ঘটনা। মানুষের মুখে শুনেছি ১৯ সাল। তবে, দিনটা যে শুক্রবার ছিল তা আমার মনে আছে। আমার ২০ বছরের রিকশাচালক ছেলে আব্দুল আজিজ সকালে ঘর থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়। এরপর টেকনাফ শাপলা চত্বরের সুনাইয়া সওদাগরের দোকানে যায় চা খাওয়ার জন্য। ওই দোকান থেকেই ওসি প্রদীপের লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়।

ইয়াবাকারবারি অন্য এক আব্দুল আজিজের সঙ্গে নামের মিল থাকায় আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ওসি প্রদীপের লোকজন। দোকানে থাকা লোকজনের  মাধ্যমে জানতে পেরে রাতে আমি থানায় গেলে ওসি প্রদীপ আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমি গরিব মানুষ তাই এতো টাকা কোথায় পাব বললে, ওসি প্রদীপ বলে ছেলের জান চাইলে টাকা নিয়ে আয়। শনিবার নিজেদের নামে থাকা জায়গা-জমি বন্ধক রেখে ওসি প্রদীপের হাতে কয়েক লাখ টাকা তলে দিয়েছিলাম। টাকাগুলো নিয়ে প্রদীপের লোকজন আমাকে থানা থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। রোববার রাতে মেরিন ড্রাইভে নিয়ে আমার ছেলেকে মেরে ফেলে প্রদীপ। সোমবার আমার ঘরে ওসি প্রদীপ নিজে গিয়ে বলে, তোর ছেলেকে অনেক মেরেছি। শুধু মা... মা বলে চিৎকার করেছে। এই কথা শুনার পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। একবছর পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি। এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন হালিমা খাতুন।

আদালতের কাছে কি প্রত্যাশা করেন জানতে চাইলেই হালিমা খাতুন বলেন, নিজ কানে ওসি প্রদীপের ফাঁসির খবর শুনতে চাই। এ জন্যই কক্সবাজার এসেছি। কথাগুলো কক্সবাজার আঞ্চলিক ভাষাতেই বলেন তিনি।

শুধু হালিমা খাতুন নয়। ওসি প্রদীপের হাতে মেরিন ড্রাইভ সড়কে আরো অনেক প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। টেকনাফের লোকজন মেরিন ড্রাইভকে ডাকতো মরণ ড্রাইভ। এই সড়কেই ক্রস ফায়ারের নামে ওসি প্রদীপের হত্যাকাণ্ডের নির্মম বলি হয়েছেন টেকনাফের গুদার বিলের দিলু, সাবরাং এর আকতার কামাল, নাজিরপাড়ার জিয়াউর রহমানসহ ১৪৫ ব্যক্তি।  ১৪৫ নম্বর ব্যক্তি হচ্ছেন, মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ আবু রাশেদ।

যাদের পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই গতকাল আদালতপাড়ায় উপস্থিত ছিলেন। সকালে ওসি প্রদীপের ফাঁসির দাবিতে ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভও প্রদর্শন করেন তারা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads