• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ঝিনাইদহে বাড়ছে তামাক চাষ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

ঝিনাইদহে বাড়ছে তামাক চাষ

  • দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

তামাকচাষ নিরুৎসাহিত করতে সরকার যখন তামাকচাষিদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে লাভজনক ও পরিবেশসম্মত অন্য ফসলের চাষে উৎসাহ দিচ্ছে, ঠিক তখনি ঝিনাইদহে তামাক চাষ আরো বাড়ছে। যদিও কৃষি সম্প্র্র্রসারণ অফিস বলছে, গত একবছরে ৪৮ ভাগ কম জমিতে তামাকের আবাদ হয়েছে। তারা এ বছর কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় তামাক চাষ হচ্ছে না বলে তথ্য দিলেও তামাকের আবাদ উল্লেখযোগ্য বেড়েছে। এমনই প্রমাণ মিলেছে সরেজমিনে পরিদর্শণে।

হরিণাকুন্ডু উপজেলার বড়ভাদড়া ও কণ্যাদহসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা যায় চাষিরা সমানে তামাকচাষ করছেন। তাদের কেউ এবছর তামাকের আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন, কেউ বন্ধ করে দিয়েছেন আবার কেউবা নতুন করে তামাকের আবাদ শুরু করেছেন।  পরিদর্শণকালে দেখা যায়, শুধুুুুমাত্রও ওই গ্রামেই প্রায় ৫০ একর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। বড়ভাদড়া গ্রামের রাব্বুল বিশ্বাস, কণ্যাদহের সৈয়দ আলি এবং জাফর মন্ডল এবং মথুরাপুরের রুহুল আমিন জানালেন, তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের সার, কীটনাশক বা সেচের জন্য আগাম ঋণ দেয়, যা তামাক বিক্রির পর ফেরৎ দিতে হয়। ধান, গম, পাট বা অন্য ফসলের চেয়ে তামাকচাষে দুই থেকে তিনগুণ লাভ পাওয়া যায় বিধায় চাষিরা তামাকচাষ ছাড়তে পারছেন না।

তাছাড়া, দুয়েকজন বাদে কৃষি সম্প্র্র্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বা এসএএওদের নিয়মিত তদারকির অভাবে অর্থাৎ কৃষকদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক না থাকার কারণে কৃষকরা তাদের ইচ্ছামতোই যে কোনো ফসল আবাদ করায় সরকারের তামাকচাষ নিরুৎসাহিতকরণ কর্মসূচি সফল হতে পারছে না বলেও তারা মন্তব্য করেন।

শৈলকুপা উপজেলার দুধসর ইউনিয়নের ডাঙিপাড়া মাঠে আাালাপ হয় বেশ কয়েকজন তামাকচাষির সাথে। তারা সবাই জানালেন, গতবছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩০ ভাগ বেশি জমিতে তারা তামাক আবাদ করেছেন। ভালো দাম, তামাক কোম্পানিগুলের আর্থিক ও বাজার সুবিধা এবং আবাদের বিভিন্ন উপকরণের সহযোগিতা তাদের তামাকচাষে অনুৎসাহিত না করে বরঞ্চ উৎসাহিত করে চলেছে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের এলাকায় এসে কৃষকদের  সাথে যোগাযোগ না করার কারণে চাষিরা তামাকচাষে অনাগ্রহী হচ্ছেন না বলে তারা জানান।

ডাঙিপাড়ার মনিরুল ইসলাম মজনু জানালেন, তিনি গতবারের আড়াই বিঘার স্থলে এবার তিন বিঘায় তামাকের আবাদ করেছেন। মোহাম্মদ মিথুন জানালেন তিনি বাড়িয়েছেন তার তামাকের জমি। তবে গ্রামের আরেক কৃষক আলম বিশ্বাস জানালেন, তিনি তার জমি তিন বিঘা থেকে আড়াই বিঘায় নামিয়েছেন তামাকচাষের জন্য পর্যাপ্ত খরচ হাতে না থাকায় এবং আনুসঙ্গিক কারণে। মনিরুল ইসলাম মজনু ও মোহাম্মদ মিথুনের মতে, এক বিঘা জমিতে তামাকচাষে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও একই অঙ্কের টাকা নিট লাভ থাকে। তাছাড়া, বাজারে তামাক নেবার সাথে সাথেই তা কোম্পানির লোকজন কিনে নেয়। গ্রেড অনুযায়ী তারা তামাকের দাম পেয়ে থাকেন। তাদের মতে, তামাকচাষ শুরু আগেই কোম্পানির লোকেরা এসে অগ্রীম টাকা, সার, বীজ, কীটনাশকের দাম ঋণ হিসেবে নগদ দিয়ে যায়। ওই অর্থ তামাক বিক্রির সময় কেটে নেওয়া হলেও তারা লাভবান হয়ে থাকেন।

ওইসব চাষির মতে, প্রাইভেট কোম্পানির কর্মর্তারা চাষিদের প্রলুব্ধ বা উৎসাহিত করতে মাঠে নামলেও সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি সত্বেও মাঠপর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) রা মাঠে তেমন আসেন না। এমনকি চাষিরা কথিত এসএএওকে কৃষকরা চেনেন না বলে উপস্থিত তামাকচাষিরা  একবাক্যে বললেন।

কৃষি সম্প্র্র্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ জেলা উপ-পরিচালকের অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে ঝিনাইহে ২শ ৮৬ হেক্টর জমিতে ৬শ ৫৮ টন তামাক উৎপন্ন হয়। এবার মাত্র ১শ ৪৮ হেক্টরে তা নেমে এসেছে আর তাতে ফলন হবে সর্বোচ্চ ৩শ ৪০ টনের মতো। গতবারের চেয়ে শতকরা ৪৮ ভাগ কম। চলতি মৌসুমে উপজেলাওয়ারি তামাকচাষের জমির পরিমাণ হলো ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ৩২ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২ হেক্টর, মহেশপুরে ৮৪ হেক্টর এবং শৈলকুপায় ৩০ হেক্টর। কোটচাঁদপুর এবং হরিণাকুন্ডুতে কোনো তামাকের আবাদ হয়নি বলে উপ-পরিচালকের অফিস সূত্রে জানা যায় যা বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত নয়।

কৃষি সম্প্র্র্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ খামারবাড়ির উপ-পরিচালক  আসগর অলির সাথে আলাপ করলে তিনি তিনি জানান, উপজেলাপর্যায়ের অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তারা তথ্য সরবরাহ করে থাকেন। এক্ষেত্রে কোনো তথ্য বিভ্রাটের কারণে এমন হতে পারে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads