• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
মায়ের কাছে ফিরল আসিফ

ছবি: বাংলাদেশের খবর

সারা দেশ

মায়ের কাছে ফিরল আসিফ

  • রিফাত আহমেদ রাসেল, দুর্গাপুর (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

কপালে ২২টি সেলাই। গভীর ক্ষত রয়েছে শরীরের অন্যান্য অংশে। ব্যথার যন্ত্রণায় ‘মা বাঁচাও, বাবা বাঁচাও’ বলে আর্তনাদ। একেবারে মৃত্যুর কোল থেকে কোনরকমে প্রাণে বেেঁচ ফিরেছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের পর স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সহায়তায় থাকাও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। সেবা-যত্ন থেকে শুরু করে পরিচর্যা সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছে সেই যুবকরা। গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুরে ভবঘুরে জীবন কাটাচ্ছে মানসিক ভারসাম্যহীন আসিফ। পাড়া-মহল্লা কখনোবা সড়কের পাশে অন্যান্য ভবঘুরের মতো মানুষের ফেলে কিংবা পচাবাসি খাবার খেয়ে বেঁচে আছে। তবে গত ২৬ জানুয়ারি সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটা অবস্থায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বালুবাহী ট্রাক ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এই দুর্ঘটনায় কোনোরকম প্রাণে বেঁচে গেলেও মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানের গুরুত্ব আঘাত দিয়ে ঠাঁই নেন উপজেলা কোয়ার্টারের বারান্দায়। সারা শরীরে লাল রক্তে মেখে থাকায় তাকে চেনার জো ছিল না। তবে আর্তনাত আর চিৎকার শুনে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ চত্বরে কর্মরত কয়েকজন যুবক ছুটে এসে নিয়ে যান হাসপাতালে। কপালে ২২টি সেলাই দিয়ে কোনোরকমে বাঁচিয়ে তোলা হয় তাকে। এরপর থেকেই ওই কয়েকজন যুবক দায়িত্ব নেন আশিষের। ওষুধ, খাবার-দাবার সবকিছুই চলত সময়মতো। কিছুটা সুস্থ হয়ে স্থানীয় যুবকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবার ও নিজের নাম আশিষ বলে পরিচয় দেয় মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবক। বিভিন্ন মাধ্যমে সন্ধান শুরু হয় তার পরিবারের। গত শুক্রবার মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের শমশেরনগর ইউনিয়নের ভাদাইর দেউল গ্রামে সন্ধান মেলে তার পরিবারের। মোবাইল ফোনে পরিবারের কাছে আশিষের সন্ধান দেওয়া মাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা খাদিজা বেগম। গত সোমবার সন্ধ্যায় ছেলেদেরকে ফিরিয়ে নিতে দুর্গাপুরে আসেন তারা। দীর্ঘদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে র্দীঘক্ষণ বসে থাকেন আসিফের পাশে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে নিজ গ্রাম থেকেই নিখোঁজ হন আসিফ । তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান মিলেনি। ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে গত দুবছর আগে মারা গেছেন তার বাবা আব্দুর রহিম। আর ছেলের খোঁজে মা নিজেও পাগলের মতো হয়ে ঘুরেছেন বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে। তবে দীর্ঘদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে আবারো মায়ের মুখে ফুটেছে হাসি। আসিফের যাতায়াতব্যবস্থা থেকে শুরু করে ওষুধ এবং খাবারদাবারের জন্য বেশ কিছু টাকা আসিফের মায়ের হাতে তুলে দেন স্বেচ্ছাসেবীরা।

আসিফের মা খাদিজা খাতুন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজেও কোনো সন্ধান পাইনি। আজ আমার ছেলেকে আবারো ফিরে পেয়েছি আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।

উপজেলা পিআইও অফিস স্টাফ রুবেল বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরেই এই পাগলকে উপজেলা চত্বরে ঘুরাঘুরি করতে দেখতাম। কিন্তু তার কোনা নাম কি পরিচয় জানতাম না। হঠাৎ একদিন রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা জন্য হাসপতালে নিয়ে যাই। পরে আমরাই তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করি। এরই একপর্যায়ে আমাদের সাথে তার পরিচয় দেন এবং আমরা তার পরিবারের সন্ধান শুরু করি। আমরা তার ঠিকানা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজে বের করে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads