• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯
সাড়ে ৫ কোটি টাকা বেতন ভাতাদি বকেয়া রেখেই উৎপাদনে জুটমিল

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

সারা দেশ

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা

সাড়ে ৫ কোটি টাকা বেতন ভাতা বকেয়া রেখেই উৎপাদনে জুটমিল

  • নরসিংদী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৬ মার্চ ২০২২

শ্রমিকদের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা বকেয়া বেতন ভাতাদি পরিশোধ না করেই নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল বাংলাদেশ জুট মিলের আংশিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। আর এ উৎপাদন বেসরকারিভাবে চালু করেছে বিজেএমসি থেকে লিজ নেওয়া জুট এলায়েন্স লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। তবে বদলি শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতাদি পরিশোধ না করেই মিল চালুর খবরে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। মিল এলাকায় বদলী শ্রমিকরা প্রতিদিন জড়ো হয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছেন বলে জানান শ্রমিকরা।

সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ২ জুলাই রাত ১০ টায় জুট মিল কর্তৃপক্ষ মিলের উৎপাদন বন্ধের বিজেএমসির নোটিশ বাংলাদেশ জুট মিলের প্রধান গেটে টানিয়ে দিয়ে মিলটির উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।

জানা যায়, মজুরি কমিশন-২০১৫ অনুযায়ী শ্রমিকদের সব পাওনাদী তাদের ব্যাংক হিসেবে পি এফ গ্র্যাচুইটি ও গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধাসহ সব পাওনা ৫০ শতাংশ নিজ নিজ ব্যাংক হিসেবে এবং বাকি ৫০ শতাংশ সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধের কথা থাকলেও মিলের ১৩৮০ জন বদলী শ্রমিক ও ৯ জন স্থায়ী শ্রমিকদের কোন বকেয়া পাওনাদি এখনো পরিশোধ করা হয়নি। ফলে টাকা না পেয়ে বদলী শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করে যাচ্ছেন।

নোয়াখালীর বাসিন্দা জুট মিলের ফিনিশিং বিভাগের শ্রমিক নান্টু কুমার পাল বলেন, আমার পাওনা টাকার আশায় গত দেড় বছর যাবৎ ভাড়া বাসা নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু কবে টাকা পাবো তা এখনও জানিনা।

মিলটির শ্রমিক কাঞ্চন বলেন, ভাড়া বাসায় থেকে রিকশা, ভ্যান চালিয়ে ও দিন মজুরের কাজ করে ছেলে মেয়েদের নিয়ে অতি কষ্টে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করে যাচ্ছি।

আরেক শ্রমিক লাল মিয়া বলেন, মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পড়ে কোন কাজ নেই। খুব কষ্টে দিন পার করছি। এখন আমাদের বেতন পরিশোধ না করেই মিল চালু হয়েছে। আমরা দ্রুত আমাদের বেতন পরিশোধের দাবি জানাই।

এদিকে শনিবার দুপুরে বদলী শ্রমিকরা তাদের বকেয়া টাকার দাবীতে মিল এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করার প্রস্তুতি নিলে পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন তাদের সাথে কথা বলে আন্দোলন না করার পরামর্শ দেন । তিনি তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এর সমাধান করার আশ্বাস দেন। পরে শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।

পলাশ উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন বলেন, আমি বিজেএমসির প্রতিনিধি মিলের প্রকল্প প্রধানের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন অতি দ্রুত শ্রমিকদের সকল পাওনাদি পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন।

এ ব্যাপারে বিজেএমসির কাছ থেকে লিজ নেয়া জুট এলায়েন্স লিমিটেডের সমন্বয়ক হাসান মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল ২০২০ সালে ২ জুলাই বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিলটি গত ১০ জানুয়ারী বিজেএমসির সঙ্গে ২০ বছরের চুক্তি করে জুট এলায়েন্স লিমিটেড তা বুঝে নেয়। ১লা ফেব্রুয়ারি মিলটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করার পরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা মিলে আংশিক উৎপাদন শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, মিলের মেশিনগুলো অর্ধেকের মত নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো মেরামত করে কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা পুরোদমে উৎপাদন শুরু করতে পারবো। আমরা জানি শ্রমিকদের কিছু বকেয়া রয়ে গেছে। সব সময়ই বিজেএমসিকে তাগিদ দিয়ে আসছি বদলী শ্রমিকদের যেন বকেয়া পরিশোধ করার ব্যবস্থা নেয়। বিজেএমসি কর্তৃপক্ষও আমাদের আশ্বস্ত করেছে অতি দ্রুত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে দিবে।

বিজেএমসির প্রতিনিধি মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কাশেম মোহাম্মদ হান্নান বলেন, কিছু স্থায়ী শ্রমিকদের ভোটার কার্ডে সমস্যা হওয়ায় টাকা দিতে দেরি হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা তাদের প্রায় ৩০ লাখ টাকা পেয়ে গেছি। বিজেএমসি অনুমোদন দিলেই আমরা তা পরিশোধ করবো। আর বদলীকৃত ১৩শ ৮০ শ্রমিকের ৪ সপ্তাহের বেতনসহ পাওনা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। তাও আমরা দ্রুত পরিশোধের ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads